এই ধোঁকাটাকে আরো জীবন্ত করে তুলেছে পায়ের নিচের বালি-স্তর। অবশ্য স্তরটা একটু ম্যাগনেটিক করে রাখা হয়েছে যাতে নিজের জায়গা ছেড়ে তেমন নড়তে না পারে। উপরি পাওনা হিসেবে আছে একটা সত্যিকার ছোট্ট বেলাভূমি, শেষ হয়েছে ঘন পাম বনের ভিতরে। কাছ থেকে না দেখলে বনটাকে নিয়ে তেমন অভিযোগ উঠবে না। মাথার উপরে একটা গনগনে আরামদায়ক সূর্যও বসে আছে আলসে পরিবেশ মাতিয়ে। ব্যাপারটা এই পরিবেশে বিশ্বাসই হতে চায় না যে সামনের দেয়ালের ওপাশেই আসল সূর্য পৃথিবীর যে কোনো সাগর তীরের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে জ্বলছে।
ডিজাইনারের কাজটা আসলেই চমৎকার; বিশেষত এই ছোট্ট পরিসরে। তারপরও যেন মন ভরল না গ্রিনবার্গের, ইস্! সার্ফিংয়ের সুযোগটা থাকলেই হতো…
১৪. অনুসন্ধান
বিজ্ঞানের এ ব্যাপারটা বেশ ভাল; কোনো জানা ব্যাপারকেও গোনায় ধরা হয় না। এমনকি বেশ সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকলেও না। মানা হবে তখনই যখন কোনো স্বীকৃত, যাচাই করা মাপকাঠির সাথে ব্যাপারগুলো মিলে যাবে। এমনও হয়-একটা কিছু আবিষ্কার হলো; সেটাই মেনে নেয়া হল। কিন্তু আদপে এমন ঘটনা সহজে ঘটে না। হাজার হলেও, গ্যালিলিও আর আইনস্টাইনরা শতবর্ষে একবারই জন্ম নেন; আর জন্মে পাল্টে দেন বিশ্বের চেহারা-সুরত।
ড. ক্রুগার এই নীতিতে অটল। ভাস্তের আবিষ্কারকে কোনো পরিচিত সুরতের সাথে মেলাতে না পেরে সুরতহাল রিপোর্টে তেমন বিশ্বাস করতে পারেননি। আর কাজটা সরাসরি ঐশ্বরিক হওয়া ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। রালফ কোনো ভুল করে বসেছে ভেবে ব্যাপারটার কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোই সহজ।
ড. পল বেশ অবাক না হয়ে পারেন কীভাবে! হাজার হলেও এ যুগের নির্ভরযোগ্য রাডারের তথ্য ভেসে এসেছে। আর সেটাকে পরীক্ষা করার কাজ নিয়ে দেরি করলেও ঘাঘু ঘাঘু রাডার এক্সপার্টের রিপোের্ট বলছে সেই একই কথা। এবং সাথে একটা বিস্ময়, কোত্থেকে পেলেন এ রেকর্ড?
স্যরি, জবাব দিতেন তিনি প্রতিবার বাড়তে থাকা গর্বের সাথে, বলার অনুমতি পাইনি।
পরের ধাপটা কম কষ্টের নয়। অসম্ভবটাই যে বাস্তব তা প্রমাণ করা। আর সাহিত্যের ক্ষেত্রে ধরা যাক কেউ চর্চা শুরু করতে চাচ্ছে; ব্যাপারটা অকুল সমুদ্রে পড়ার মতো তার জন্য, যে জানে না কোত্থেকে শুরু করতে হবে। একটা কথা ঠিক, প্রচণ্ড এক শক্তির ধাক্কা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছে। এ দিনটার সাথে রন্টগেনের এক্স রে আবিষ্কার করার পরের দিনের তুলনা চলে। তিনি সে সময়কার ফিজিক্স জার্নালগুলো চষে ফেলছিলেন এ বিষয়ে একটু তথ্যের আশায়। এমন কোনো তথ্যের আশায় যেটা পদার্থবিজ্ঞানের সাময়িকীগুলোতে পাওয়া গেছে ঠিকই; বেশ কয়েক বছর পর।
তবু বিজ্ঞানের এই গঙ্গাস্নানের যুগে আশা করা যায় বিশাল তথ্য-মহাসাগরের কোনো না কোনো এলাকায় এমন কিছুর হদিস পাওয়া যাবে। খুব সাবধানে ড. ক্রুগার এমন একটা প্রোগ্রাম করলেন যেটা সার্চের সময় তার আশার তথ্য পেলে তো নিবেই এমনকি কাছাকাছি কিছু পেলেও যাচাই বাছাই করে নেয়ার চেষ্টা করবে। তবে প্রোগ্রামটার কাজ একটু সহজ হয়েছে কারণ পৃথিবী সংশ্লিষ্ট যৌক্তিক সব ব্যাপারই সে বাদ দেবে। নিশ্চই কোটি কোটি…। আর সার্চের কাজ চলবে অপার্থিব সব ব্যাপার নিয়ে।
ড. ক্রুগারের হাজার সুবিধার একটা হল: তিনি কম্পিউটারে অসীম বাজেট পেয়ে থাকেন। বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি অনেক প্রতিষ্ঠানকেই তাঁর প্রজ্ঞা কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেন। এই সার্চে দেদার খরচ হচ্ছে, হোক না, বিল নিয়ে কারো কোনো বিকার নেই।
কাজ শেষ হবার পর বেশ অবাক হতে হল ড. ক্রুগারকে। তিনি বেশ ভাগ্যবান, মাত্র দু ঘণ্টা সাতাশ মিনিটে কেল্লা ফতে। একুশ হাজার চারশো ছাপ্পান্নতম রেফারেন্সেই কাজ হয়ে গেল।
টাইটেলটাই যথেষ্ট। পল এতো উত্তেজিত ছিলেন যে তার এক্কেবারে নিজস্ব কমসেক তার ভয়েস কমান্ডকে অগ্রাহ্য করে বসেছে! ভাল প্রিন্ট আউটের জন্য আরো একবার বলতে হল।
উনিশশো একাশিতে ন্যাচার পত্রিকায় রিপোর্টটা এসেছিল। তার জন্মেরও পাঁচ বছর আগে। এবার মাত্র পৃষ্ঠাখানেক রিপোর্টে চোখ বুলিয়েই তিনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে তার ভ্রাতুস্পুত্র শুধু ঠিক কথাই বলেনি বরং এমন কোনো আবিষ্কার করে বসেছে যাকে এক কথায় অলৌকিক বলা চলে।
ঐ আশি বছরের বুড়ো পত্রিকার সম্পাদককে বেশ রসিক বলা চলে। এই পেপারটা আউটার প্ল্যানেটগুলোর কোরের গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে বিস্তর। কিন্তু সেকালের পত্রিকা হিসেবে টাইটেলটা তেমন ভয়াল ছিল না। বরং এক কালে একটা বিখ্যাত গানের অংশ ছিল কথাগুলো।
যাই হোক, পল ক্রুগার কখনো বিটল বা তাদের উন্মাতাল চমকের কথা বিন্দুমাত্র জানতেন না।
২. কালো তুষারের উপত্যকা
দ্বিতীয় পর্ব – কালো তুষারের উপত্যকা
১৫. সম্মেলন
হ্যালি এখন বলতে গেলে চোখের সামনে। তবে পৃথিবীতে বসা দর্শকরাই ধূমকেতুটাকে সবচে স্পষ্ট দেখতে পাবে। তখন এর পুচ্ছ ছড়িয়ে পড়বে আরো আরো। এখনি পাঁচ কোটি কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাজত্ব করছে এর লেজ। যেন কোনো রণপোত তার বিশাল ত্রিকোণ নিশান উড়িয়ে চলেছে সৌর বাতাসে শিষ কেটে; কোন্ এক দেশের খোঁজে।
সম্মেলনের দিন হেউড ফ্লয়েড সকাল সকাল একটা ক্লান্তিকর ঘুম ছেড়ে উঠল। স্বপ্ন দেখাটা তার কাছে বেশ অস্বাভাবিক। অন্তত স্বপ্নের কথা মনে ওঠার প্রশ্নই ওঠে না–বিশেষত আগামী কয়েক ঘণ্টার আসন্ন উত্তেজনায় স্বপ্ন দেখার দিন কি এখনো আছে? অবশ্য ক্যারোলিনের মেসেজটাও বেশ কষ্ট দিল; গত কদিনে ক্রিসের কোনো খবর পেয়েছে কিনা ফ্লয়েড-এই ছিল তার প্রশ্ন। সে খবর পাঠালো, একটু বিরক্ত হয়েই। ফ্লয়েড ক্রিসকে ইউনিভার্সের সিসটার শিপ কসমসে বর্তমান পদে সুযোগ করে দিলেও কক্ষনো ক্রিস দাদুকে ধন্যবাদ দেয়ার মতো কষ্ট স্বীকার করেনি। সে হয়তো এর মধ্যেই চাঁদ-পৃথিবী-চাঁদ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। অন্য কোনো উত্তেজনা খুঁজছে অন্য কোথাও।