তার পূর্বপুরুষদের মতো নন তিনি। বিপদে, মানসিক অস্থিরতায়, সিদ্ধান্ত হীনতায় ভরসা দেবার মতো কোনো ঈশ্বর তার নেই। এখন তিনি ব্যাপারটাকে মিস করছেন, অবশ্য থাকলেও কোনো কাজে আসততা কিনা সে ব্যাপারে তিনি সন্দিহান। এখন কম্পিউটারে বসে ডাটা ব্যাঙ্কে ঢোকার মুখে তিনি বারবার ভাবছেন একটা কথাই- ভাস্তে কি আসলেই কোনো বোকামিতে ভরা আবিষ্কার করে বসেছে নাকি আন্দাজের উপর বগল বাজাচ্ছে! সেই পুরনো জন কি আসলেই মানব জাতির উপর এত বড় একটা চাল চালতে পারে! তার মনে পড়ে যায় মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত উক্তি, যদিও তিনি ছিলেন মহারহস্যময়, কখনোই অকল্যাণময় ছিলেন না।
দিবাস্বপ্ন দেখা বন্ধ কর, নিজেকেই বললেন ড. পল ক্রুগার। তোমার ভাল লাগা বা মন্দ লাগা-তোমার আশা অথবা ভয় দিয়ে পুরো ব্যাপারটার একেবারে কিস্যু আসে যায় না।
তার সামনে, সৌরজগতের অর্ধেকটা জুড়ে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ঘুরপাক খাচ্ছে, আসল সত্যের একটা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তিনি শান্তি পাবেন না।
১৩. কেউ আমাদের সাঁতারের পোশাক আনতে বলেনি..
পঞ্চম দিন পর্যন্ত ক্যাপ্টেন স্মিথ ছোট্ট চমকটা জিইয়ে রেখেছিল, ঘুরে যাবার কয়েক ঘণ্টা আগেও কথাটা বলেনি কাউকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, তার ঘোষণায় সাড়া পড়েছে দারুণ!
ভিক্টর উইলিসই প্রথমে কথা বলছিল।
সুইমিং পুল। তাও আবার একটা স্পেসশিপের ভিতর! রসিকতা করছেন, আপনি নিশ্চই রসিকতা করছেন!
পেছনে হেলান দিয়ে ব্যাপারটা উপভোগ করতে লাগল ক্যাপ্টেন। একটা ঝরঝরে হাসি দিল হেউড ফ্রয়েডের দিকে তাকিয়ে। সেও ব্যাপারটা জেনে গেছে।
আসলে, আমার মনে হয় কলম্বাসও তার পরবর্তী যুগের শিপগুলো দেখে ভড়কে যেত। এটাই স্বাভাবিক।
তাহলে তো ডাইভিং বোর্ডও থাকার কথা, আছে নাকি দু একটা? গ্রিনবার্গের কথায় আশার ধ্বনি, আমি আবার কলেজ চ্যাম্পিয়ন ছিলাম।
বুঝতেই পারছেন-আছে। উচ্চতা মাত্র পাঁচ মিটার। তাতে কী বা এসে যায়? পাক্কা তিন সেকেন্ডের পতন উপভোগ করতে পারবেন আপনি। হাজার হলেও আমাদের মাধ্যাকর্ষণটা জির দশ ভাগের এক ভাগ। তাতেও জনাবের তুষ্টি না এলে অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। কার্টিস সাহেবকে অনুরোধ করলে নিশ্চই তিনি ফেলবেন না। থ্রাস্ট কমিয়ে দিলেই জি অনেক কমে যাবে।
তাই নাকি? বলল চিফ ইঞ্জিনিয়ার শুকনো গলায়, আর তারপর আমার অর্বিট ক্যালকুলেশনের সবটুকু গড়বড় হয়ে যাক আর কী! পানি উপচে চলে আসার ঝুঁকির কথা নাইবা বললাম। পৃষ্ঠটানের কাহিনী কে না জানে…
কিন্তু এমন এক স্পেস স্টেশন কি ছিল না যেটায় চতুষ্কোণ সুইমিং পুল… প্রশ্ন করতে নিয়েছিল কেউ একজন।
“তারা পুলটাকে পাস্তুরের অক্ষে বসানোর চেষ্টা করেছিল, ঘূর্ণন শুরুর আগেই। কথা কেড়ে জবাব দিল ফ্লয়েড, ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও বাস্তব নয়। শূন্য গ্র্যাভিটিতে জিনিসটা পুরো ভর্তি থাকার কথা। আর একটু অপ্রস্তুত হয়ে নামলেও আপনি ডুবে যেতে পারেন। তার উপর যদি ভয় পান তো…
তো রেকর্ড বুকে নাম উঠবে। মহান নাম। মহাকাশে ডুবে যাওয়া প্রথম মানব ছিলেন…
বাগড়া দিল মবালা, তার একটাই চিন্তা, কেউ তো আমাদের সাঁতারের পোশাক আনতে বলেনি।
যার পরার দরকার সে আনতেই পারত, মানা করেছে কে? আমি বাবা খালি গায়েই নেমে যাব। মাইকেলোভিচ ফিসফিস করল ফ্লয়েডের কানে কানে।
আদালতে অর্ডারের ভঙ্গিতে ক্যাপ্টেন স্মিথ টেবিলে টোকা দিল কয়েকবার।
কথাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্লিজ। আপনারা একটু শুনুন। আমরা জানি, আজ রাতেই সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছব। গতিও কমাতে হবে। ব্রেক করব তখন থেকেই। ড্রাইভটা বন্ধ হয়ে যাবে ২৩:০০ টায়। শিপ পিছুটান দেবে। ঘণ্টা দুয়েকের জন্য ওজনহীনতা আসবে। পরবর্তী থ্রাস্ট দেব ১:০০ টায় ।
“বুঝতেই পারছেন, সমস্ত কু ব্যতিব্যস্ত থাকবে। ইঞ্জিন আর শিপের শরীর বা হাল পরখ করার সুবর্ণ সুযোগ বলা যায় সময়টাকে। পাওয়ারে থাকার সময় কিন্তু এসব সম্ভব নয়। আমি আপনাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করব সে সময়টায় ঘুমিয়ে থাকার জন্য। আর ক্রস করে যেন লুজ বেল্ট আটকানো থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখবেন আশা করি। স্টুয়ার্ড লক্ষ্য রাখবে যেন গতি ফিরে পাবার সময় কোনো আলগা জিনিস না থাকে। তখন গতির কারণে সংঘর্ষ নিশ্চিত। কোন প্রশ্ন?
একটা স্থির নিরবতা চারদিকে। সদস্যরা যেন ঠিক ঠাউরে উঠতে পারছে না কী। করবে বা বলবে।
“যাক। আশা করেছিলাম আপনারা এই বিলাসের কারণ এবং খরচা সম্পর্কে দু একটা প্রশ্ন তুলবেন। তবু বলছি। এটা আসলে মোটেও বিলাস নয় এবং এর পেছনে স্পেসশিপের তুলনায় একটা কানাকড়িও ব্যয় করা হচ্ছে না।
“আপনারা তো ভাল করেই জানেন, পাঁচ হাজার টন পানি বয়ে নিচ্ছি। এ পানিটাই রিয়্যাকশন মাস। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, এটার সর্বোচ্চ ব্যবহারে সদগতি না করলেই নয়। একটা ট্যাঙ্ক বর্তমানে চার ভাগের তিন ভাগ খালি। এ অবস্থাতেই রাখব এটাকে। তোআগামীকাল ব্রেকফাস্টের পর সমুদ্রতটে দেখা হচ্ছে আমাদের…
.
ইউনিভার্সকে মহাশূন্যের সন্তানে পরিণত করার মতো দামী কাজটা এতো যে সহজসাধ্য হবে তা এককালের মহাকাশযানে ভাবাই যেত না।
সমুদ্রতটটা আসলে ধাতব। মিটার পাঁচেক চওড়া হবে টেনেটুনে। একটু বেঁকে গেছে; যেমনটা বাস্তবে হয়। দূরের দেয়াল বড়জোর বিশ মিটার দূরে; কিন্তু পরিবেশ দেখে মনে হয় দূরত্বটা অসীম। আর এই সমুদ্র এমন একটা অপর পাড়ে গিয়ে ধীরে ধীরে মিশেছে যেখানে কারো যাওয়া সম্ভব নয়। আর যে কোনো ট্রাভেল এজেন্ট দৃরের প্যাসেঞ্জার ক্লিপারটাকে সুং সি স্পেস কপোরেশনের দুরন্ত পালতোলা। পোত ভাবতেই পারে।