মনে হয় আমিও কিছুটা গর্ব পেতে পারি এ ব্যাপারে। তার বাবা ছিল একজন অ্যাস্ট্রোনোমার, কাজ করেছিল আমার সাথে কিছুদিন। মেয়েও বিজ্ঞানে অনেক আগ্রহ রাখে। সুতরাং আমি বেশ কিছু ভিডিও কল করেছিলাম তাকে।
ফ্লয়েড ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কথাগুলো বলা দরকার কিনা। কিন্তু কথাতো সত্যি, সে জি ডব্লিউ এম টির মার্ক টুর আমলে এই মেয়ের প্রেমে পড়েছিল।
অবশ্যই, বলে চলে সে, স্যার লরেন্স খুব আনন্দে ছিল তখন। কিন্তু আমিই তাকে বিশ্বাস করিয়েছি যে অ্যাস্ট্রোনোমিতে তার সাধারণ আগ্রহই শুধু নেই, আছে আরো বেশি কিছু। ভয়েজটা এক ঘেয়েমিতে ভরে উঠত এমন কেউ না থাকলে।
আর এ কথাটাই মনে করিয়ে দিল যে, নাটকীয়ভাবে জর্জ পেছন থেকে একটা প্যাকেট বের করে বলল, একঘেয়েমি কাটাতে তোমার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে ছোট্ট এক উপহার আছে।
এখন ভোলা যাবে? খুলব?
কী মনে হয়? এখানে খোলা উচিত হবে তার? জেরি বেশ ব্যগ্রভাবে প্রশ্ন তোল।
তাহলেতো অবশ্যই উচিত বলেই খুলে ফেলল রিবনটা।
ভেতরে চমৎকার ফ্রেমবন্দী এক পেইন্টিং। ফ্লয়েড আর্ট সম্বন্ধে খুব একটা না জানলেও এটা সম্পর্কে ভালমতোই জানে। কে না দেখেছে?
ঢেউয়ের দোলায় টলায়মান ফেনা, অর্ধনগ্ন পরিবেশ, দূরে-একমাত্র অলঙ্কার একটা জাহাজ। নিচে লেখা:
দ্য র্যাফট অব দ্য মেডুসা
(থিওডোর গেরিক্যাল্ট, ১৭৯১-১৮২৪)
তার নিচে জেরি আর জর্জের লেখা, সে পর্যন্ত পৌঁছুলেই আধা মজা মাত্র পাওয়া হবে…।
ফাজিলের মানিকজোড়, কিন্তু ভালবাসি তোমাদের, অসম্ভব ভালবাসি। জড়িয়ে ধরল ফ্লয়েড তাদের। আর্চির কিবোর্ডে এ্যটেনশন লাইট জ্বলছে। সময় এসেছে যাবার।
বন্ধুদের পেছনে ফেলে, সামনে গেল সে, শেষবারের মতো হেউড ফ্লয়েড তার ঘরের চারদিকে চোখ বোলাল, ছোট্ট একটা ঘর, তার অর্ধেক জীবনের ইউনিভার্স।
আর হঠাৎ করেই তার সেই কবিতার শেষটা মনে পড়ে গেল। একেবারে হঠাৎ করেই:
সুখে ছিলাম আমি। এবার যাচ্ছি, যাচ্ছি চলে।
৮. তারকা বহর
স্যার লরেন্স মোটেও আবেগকে প্রাধান্য দেয় না, আর কাজের ক্ষেত্রেও জাতিভেদ তার মাথায় আসে না। অন্যদিকে আন্ডারগ্রাজুয়েট হওয়াতে শিল্প-সংস্কৃতির তৃতীয় অভ্যুত্থান তেমন নাড়া দিতে পারেনি তার মনোজগতে। কিন্তু একটা বিশেষ বয়সে জিয়াংয়ের দুর্ঘটনায় মনে বেশ ছাপ পড়েছিল। স্পেসের প্রতি বাড়তি দুর্বলতার শুরু সেখান থেকেই।
অনেক আগে থেকেই সে মাঝে মধ্যে চাঁদে বেড়াতে যেত। এখন তার বত্রিশ মিলিয়ন সোল পুত্র চার্লসকে সুং অ্যাস্ট্রোফ্রাইটের ভাইস প্রেসিডেন্ট করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটা তেমন কিছু করতে পারেনি, দুটো উৎক্ষেপণ ছাড়া। এর ফলে চার্লস একটা কথা ভালমতো বুঝেছে যে আগামী দশকগুলোতে এর ফলাফল হবে সুদূরপ্রসারী । অবশেষে সত্যি সত্যি স্পেস এজ বা মহাকাশ যুগ এগিয়ে আসছে।
মাত্র আধ শতাব্দীর কিছু বেশি সময় নিয়ে মানুষ রাইট ব্রাদারের পুরনো আশীর্বাদ ছেড়ে কার্যকর এরোপ্লেনের সুফল ভোগ শুরু করে। আর এ থেকে উত্তরণের জন্য, সৌর জগতের প্রান্তসীমা ছুঁড়ে ফেরা শুরু করার জন্য লেগেছে এরও দ্বিগুণ কাল।
লুইস আলভারেজ ১৯৫০ এর দশকে তাঁর দলবল নিয়ে আবিষ্কার করেন মিউওন-ক্যাটালাইজড ফিউশন এর পদ্ধতি। সেদিন ব্যাপারটাকে খরুচে ল্যাবরেটরি-আগ্রহ কিম্বা স্রেফ তত্ত্ব ছাড়া আর কিছু মনে হয়নি। ঠিক মহান বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের আবিষ্কারের মতো। তিনিও নিশ্চিত ছিলেন না তা আবিষ্কারের কার্যকারিতার ব্যাপারে। শীতল নিউক্লিয়ার ফিউশন আদৌ কাজে লাগবে তো? তারপর হঠাৎ করেই ২০৪০ সালের দিকে স্থিত মিউওনিয়াম-হাইড্রোজেন যৌগগুলো আবিস্কৃত হয়ে মানুষের ইতিহাসে নূতন অধ্যায়ের সূচনা করে। যেমন হঠাৎ করে নিউট্রনের আবিষ্কার মানুষকে ঠেলে দিয়েছিল আণবিক যুগের দিকে।
আজ সহজেই বহনযোগ্য আণবিক শক্তি স্থাপনা গড়া যায়; খুব বেশি প্রতিরক্ষা বর্মের প্রয়োজনও নেই। এর ফলাফল একেবারে প্রথমেই বিশ্ব বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে পড়েনি; পড়ে যায় স্পেস সায়েন্সের উপর। এর সাথে একটা ব্যাপারেরই তুলনা চলে-উড়োজাহাজের যুগ থেকে রকেটের যুগে প্রবেশের স্মরণীয় ঘটনা।
প্রোপ্যাল্যান্টই মহাকাশ যাত্রায় সবচে বড় সমস্যা; সব সময়। সেই আদ্দিকালে বিশাল বিশাল প্রোপ্যাল্যান্ট ট্যাঙ্কের আড়ালে ঢাকা পড়ে যেত মূল যান, এক রত্তি দেখা যেত সেগুলোকে। আর গতিও ছিল ঢিমে তাল। এমনকি ডিসকভারিতেও চুল্লী আর শীতলীকরণ এলাকাটাই আশিভাগ দখল করে রেখেছিল। আর আজ মূল যানটাই সব। অন্যদিকে এখন যাত্রাকাল বছর কিংবা মাসের বদলে সপ্তাহে এসে ঠেকেছে। কিন্তু মিউওন ড্রাইভ আজো রিয়্যাকশন ডিভাইস। তাই চিরাচরিত রকেটগুলোর প্রথম ধাক্কার জন্য কিছু কার্যকর তরলের প্রয়োজন পড়ে। আর কাজের জন্য সবচে সরল, সস্তা, নির্ভেজাল, সহজলভ্য তরল জিনিস হল খাঁটি পানি।
প্যাসিফিক স্পেসপোর্টে এ জিনিসের অভাব পড়ার কথা না। পরের বন্দরে ব্যাপারগুলো উল্টে যায়। সার্ভেয়র, অ্যাপোলো আর লুনা মিশনগুলোয় চাঁদে এক ফোঁটা পানির চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আর যদি কোনোকালেও দু চার ফোঁটা পানি থেকে থাকত চাঁদে-অসীম সময়ের মহাজাগতিক বিস্ফোরণে বিস্ফোরণে সেটুকু উবে গেছে পুরোপুরি।