কিন্তু পরের দেখাটাও কাজে লাগল না। বিস্তর খরচ করে কত চেষ্টা-তদ্বির! এই রুমেই, এই পারে। ক্রিস এরই মধ্যে বিশে পড়েছে, বিয়ে করেছে মাত্র। ফ্লয়েড আর ক্যারোলিনের মধ্যে একটা মাত্র মিল ছিল, ক্রিসের পছন্দকে পছন্দ না করা।
এরমধ্যে একটা ব্যাপারে হেলেনাকে বেশ সফল বলে মনে হল। সে ক্রিস টুর যত্ন-আত্তিতে কোনো অংশে কম নয়। ক্রিসদের বিয়ের মাসখানেক পরেই জন্ম নেয় ফ্লয়েডের নাতি। অন্য অনেকের মতো হেলেনাও কোপার্নিকাস দুর্ঘটনা য় বিধবা হয়। কিন্তু দিশেহারা হয়ে পড়েনি মেয়েটা।
কী অদ্ভুত মিল, ক্রিস আর ক্রিস টু দুজনেই মহাকাশে নিজেদের জনককে হারিয়েছে; দু পথে। ফ্লয়েড তার আট বছর বয়েসি ছেলের কাছে একেবারে অচেনা মানুষ হয়ে এসেছিল, কিন্তু ক্রিস টু তার জীবনের প্রথম দশকটায় নিজের বাবাকে দেখতে পেয়েছে চোখের সামনে, এই যা সান্ত্বনা।
কিন্তু এই দিনগুলোতে ক্রিস ছিল কোথায়? ক্যারোলিন বা তার তদানীন্তন বেস্ট ফ্রেন্ড হেলেনা, কেউ জানেনি কোথায় ছিল সে। পৃথিবীতে নাকি শূন্যে। শুধু ক্ল্যাভিয়াস বেস লেখা পোস্টকার্ড দেখে বোঝা গেছে যে সে চাঁদে প্রথমবারের মতো পা রেখেছে।
ফ্লয়েড এ কার্ডটাও আঠা দিয়ে বসিয়ে রেখেছে ডেস্কের উপর। ক্রিস টু যেমন রসিক ছিল তেম্নি ইতিহাসে ছিল তার অপার আগ্রহ। সে দাদুকে যে কার্ড পাঠিয়েছে সেটায় একটা কালো মনোলিথের ছবি, তার আশপাশে কয়েকজন স্পেসস্যুট পরা মানুষ। জায়গাটা চাঁদে। অর্ধ শতাব্দী আগের কথা।
ফ্লয়েড যে ছবিটা নাতির কাছ থেকে ক্রিসমাস কার্ড হিসেবে পেল সেটায় সে নিজেও আছে। এবং তখন, বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে, চাঁদের বুকে সেই কালো একশিলা স্তম্ভের কথা মানবজাতির একশ সদস্যও জানতো কিনা সন্দেহ। সে দলের বাকী সবাই আজ মৃত। আর মনোলিথটাও নেই সেখানে। ২০০৬ সালেই চাঁদ থেকে তুলে এনে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের বিল্ডিংটার সামনে বসিয়ে দেয়া হয়। সে যেন সেই বিল্ডিংটারই প্রতিবিম্ব । চিৎকার করে যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছে, আমি একা নই।
একা নয় মানবজাতি।
কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর, তারপরই লুসিফারের আলো ছিল কথাটা বলার জন্য।
আজকাল ফ্লয়েডের আঙুলগুলো যেন কথা শুনতেই চায় না। বিশেষ করে ডান হাতের আঙুলগুলোর যেন আলাদা স্বাধীনতা আছে কার্ড খেলার সময় বা পকেটে হাত ঢোকানোর সময়। এই একটা সমস্যাই সৃষ্টি হতে পারে ইউনিভার্সে তার যোগ্যতার ব্যাপারে।
মাত্র পঁচিশ দিন, আছ নাকি নেই তা আমরা বোঝার আগেই ফিরে আসবে। বলল জেরি, আর হ্যাঁ, শুনলাম অভিযানে নাকি দিমিত্রি তোমার সাথী হচ্ছে; আসলেই?
সেই ছোটখাট কসাক! বলল জর্জ, বাইশ সালের কথা মনে আছে, তার দ্বিতীয় সিফনীর ঝংকার।
না, না। ভুল করে বসেছ তোমরা। সেটা মাত্র দিমিত্রি, মাইকেলোভিচ নয়। আর…
যাই হোক, অন্যজনতো? আমি তার কথাই বলছি। রাস্কেলটাকে আমার ভালবাসা দিও। আর জিজ্ঞেস করো ভিয়েনার কথা তার মনে আছে কিনা, সেই রাতের কথা। আর কে কে থাকছে তোমার সাথে?
আমি জোর গুজব শুনলাম, প্রেসের পান্ডারাও নাকি ভিড় জমাবে? জেরি চিন্তার ভাণ করে বলল।
চিন্তার কারণ নেই। যারাই হই না কেন, আমরা সবাই আমাদের বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সৌন্দর্য, আরও নানাবিধ মানবিক-অতিমানবিক-অমানবিক গুণাবলীর কারণে স্যার লরেন্সের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছি। পোশাকি সুরে বলে চলল ফ্লয়েড।
আর কর্মক্ষমতা?
যাক, প্রসঙ্গটা যখন তুললেই, আমি আসলে যাচ্ছি বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে। আমরা প্রত্যেকেই কিছু কাগজ জমা দিয়েছি। আমারটাও আছে।
আমরা কি সেটা পেতে পারি কোনোও সুযোগে? আশা করে জর্জ বলল ।
সুং আমাকে হ্যালি পর্যন্ত নিয়ে যেতে, ফেরত আনতে এবং পথে খাবার-দাবার দিতে ও দেখার জন্য একটা জানালা সহ ঘর দিতে রাজি হয়েছে।
আররাহা খরচের বিনিময়ে?
ফিরে আসার পর ভবিষ্যতের অভিযান যাতে চলে সেসব পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। লিখতে হবে কিছু প্রবন্ধ, খুবই প্রাসঙ্গিক হতে হবে সেসব । যাতে সারা জীবনের জন্য কাজে লাগে। ও, আরো একটা ব্যাপার, আমি আমার সঙ্গীদের এক আধটু বিনোদনও দিব।
কীভাবে? নেচে-গেয়ে?
ভাল কথা, এককালে নেচেছি গেয়েছি বৈকি। কিন্তু প্রফেশনালদের সাথে পাল্লা দেব সে ক্ষমতা কি আর আছে? ও, তোমরা তো জানো না, শিপে ইভা মারলিনও থাকবে।
কী? ওকে কেমন করে পার্ক এভিনিউর গরাদ থেকে বের করে আনল?
ওতো নিশ্চই একশ এবং…উফ, কী হল? খোঁচান ক্যান ভাইসাব?
যেন আহত হয়েছে ফ্লয়েড, বেচারির বয়স সত্ত্বর, পাঁচ যোগ বা বিয়োগ করতে পার, মিস্টার।
বিয়োগটা ভুলে যাও, নেপোলিয়ান মুক্তি পাবার সময় আমি ছোট ছিলাম।
এবার বেশ লম্বা বিরতি। তিনজনেই স্মৃতি মন্থনে মগ্ন। কোনো কোনো সমালোচকের মতে তার পরিচয়ের জন্য স্কারলেট ওহারা চরিত্রটাই মানানসই ছিল। কিন্তু সাধারণ্যে সেই ইভা মারলিন আজো জোসেফাইন রূপেই নমস্য। বেচারীর জন্ম হয় সাউথ ওয়ালেসে, ইভিলিন মাইলস নামে। অর্ধ শতাব্দী আগে ডেভিড গ্রিফিনের অমর মহাকাব্য ফরাসী আর ব্রিটিশ রসিকদের উদ্বেলিত করেছিল দারুণভাবে। আজ তারা সবাই মানে যে তার কাজগুলোতে ক্লাসিকের কিছু গুবলেটও মিশানো থাকত।
এতো স্যার লরেন্সের বিলাসিতা। বলল জর্জ, সেই চিন্তান্বিত মুখেই।