- বইয়ের নামঃ ২০৬১ : ওডিসি থ্রি
- লেখকের নামঃ আর্থার সি ক্লার্ক
- প্রকাশনাঃ সন্দেশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
২০৬১ : ওডিসি থ্রি
১. জাদুর পাহাড়
২০৬১ : ওডিসি থ্রি – আর্থার সি ক্লাক
অনুবাদ : মাকসুদুজ্জামান খান
প্রথম প্রকাশ : জুন ২০০৫
উৎসর্গ
নিপুণকে
আমার এতো ভাল বন্ধুভাগ্য কোথা থেকে এসেছে কে জানে!
.
লেখকের কথা
২০১০: ওডিসি টু যেমন ২০০১: এ স্পেস ওডিসি র সরাসরি সিকুয়্যাল নয় তেন্নি ২০৬: ওডিসি খ্রি ও দ্বিতীয়টার সরাসরি ঝাণ্ডাবাহী নয়। বরং এই সবগুলোকে একই থিমের উপর বিস্তৃতি ধরা যায়, আর সেই অর্থে, সময়কে মাপকাঠি ধরে সিকুয়্যাল বলা যায়। কিংবা, সরলতার জন্য একই নাম ও চরিত্র-ঘটনা থাকা সত্ত্বেও যেন একই ঘটনা নয়, বরং সমান্তরাল চলতে থাকা বিভিন্ন ইউনিভার্সে একই ধারার ঘটনা।
মানুষের চাঁদে পা রাখার বছর পাঁচেক আগে, ১৯৬৪ সালে যখন স্ট্যানলি কুবরিক প্রস্তাব রাখলেন, সত্যিকার ভাল সায়েন্স ফিকশন মুভি বানাবেন, তখন ব্যাপারটা এত সহজ ছিল না। কিন্তু তারপর, এ ধারণায় আগের দুটি বই বিজ্ঞানে সরাসরি অনেক প্রভাব ফেলল, ফলে বলা চলে সেগুলো সার্থক সায়েন্স ফিকশন।
২০১০ খিতে উৎসাহী হই ১৯৭৯ সালের সফল ভরেজার অভিযানের পর। কিন্তু বৃহস্পতীয় অঞ্চলে ভয়েজারের অভিযানের পর আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিযান গ্যালিলিও পাঠানো হয়।
আশায় বুক বেঁধেছিলাম গ্যালিলিওকে নিয়ে, সে যাবে, বৃহস্পতির বাতাবরণে একটা প্রোব ছুঁড়ে দেবে, দু বছর খুঁটিয়ে দেখবে বৃহস্পতীয় উপগ্ৰহজগৎ। এর উৎক্ষিপ্ত হবার কথা ছিয়াশির মে মাসে। ডিসেম্বর আটাশিতে লক্ষ্যে যাবার কথা এবং উনিশশো নব্বইতে নূতন বাণীর স্রোতে ভেসে যাবার কথা আমার।
হায়, চ্যালেঞ্জটা পিছিয়ে গেল, জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে গ্যালিলিও তার ক্লিন রুমে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। আরেকটা লঞ্চ ভেহিকলের আশায় তার বসে থাকা। হয়তো নির্ধারিত সময়ের সাত বছর পর সেটা ঠিকই জায়গামতো পৌঁছবে, তদ্দিন আমার ধৈর্য থাকলেই হল।
গ্যালিলিওকে নিয়ে তৃতীয় স্বপ্ন দানা বেঁধেছিল, সেটায় চিড় ধরার আগেই আমি অপেক্ষা বন্ধ করে কলম হাতে নিলাম।
কলম্বো, শ্রীলঙ্কা,
এপ্রিল, ১৯৮৭
প্রথম পর্ব – জাদুর পাহাড়
১. বরফ জমাট বছরগুলো
সত্তুর বছরের বুড়োদের তুলনায় তোমার শরীর অনেক অনেক ভাল, মেডকমের চূড়ান্ত প্রিন্ট আউট থেকে চোখ তুলে বলল ড, গ্লাজনভ, আমিতো তোমার বয়স পঁয়ষট্টিরও কম বলতাম।
বড় খুশির খবর, ওলিগ। বিশেষত আমি যখন কাঁটায় কাঁটায় একশ তিন বছর পেরিয়ে এসেছি, তুমিতো ভাল করেই জান।
এইযে, আবার শুরু! যে কেউ ভাববে তুমি প্রফেসর রুডেঙ্কোর বইটা কখনো পড়ে দেখনি।
ডিয়ার ওল্ড ক্যাথেরিনা! ওর শততম জন্মদিনে আরেকবার সবাই একত্র হওয়ার প্ল্যান করা যেত। কিন্তু ও কখনোই এমন কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। প বেশি বেশি সময় ব্যয় করার এ এক ঝঞ্ঝাট।
একেই বলে ভাগ্যের পরিহাস। অথচ ও-ই সেই বিখ্যাত উক্তির জননী, মাধ্যাকর্ষণই বার্ধক্য টেনে আনে।
ডক্টর হেউড ফ্লয়েড চিন্তাক্লিষ্ট চোখে তাকিয়ে আছে অনিন্দ্য সুন্দর গ্রহের চির পরিবর্তনীয় লম্বাটে ছবির দিকে; মাত্র ছ হাজার কিলোমিটার দূরে; যেখানে তার সবুজ শৈশব, দুর্দম তারুণ্য আর অপ্রতিদ্বন্দ্বী কর্মজীবন কেটেছে; সেখানেই আর কখনো সে হাঁটতে পারবে না। এ যেন ভাগ্যের আরো শক্তিময় পরিহাস, সে জীবনের সবচে বোকামিপূর্ণ দুর্ঘটনার পরও শক্ত-সমর্থ আছে অথচ তার পুরনো বন্ধুদের প্রায় সবাই চলে গেছে পরপারে।
মাত্র সপ্তাখানেক আগে সে পৃথিবীতে ফিরে এসেছিল। কাছের মানুষেরা তো সব সময় সাবধান করতেই, সে নিজেও ছিল সতর্ক। তাছাড়া স্পেস ভ্রমণ এক জীবনে কম তো করেনি! এমন কিছু তার ক্ষেত্রে হতেই পারে না! কিন্তু বিধি বাম। দোতলার ব্যালকনি থেকে পড়ে গিয়ে বেশ কয়েকটা হাড় ভেঙে যায়। (হ্যাঁ, সে ছিল এক সেলিব্রিটি, খ্যাতিমান অভিযাত্রী। লিওনভ যে নতুন পৃথিবীতে ফিরে এসেছে সেই দুনিয়ায় সেও এক হিরো।) তারপর হাড়ের ভাঙনগুলো আরো জটিল হয়ে পড়ে, পাস্তুর স্পেস হসপিটালের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।– সেসব ২০১৫ সালের কথা। আর আজ… তার বিশ্বাসই হয় না, কিন্তু দেয়ালের ক্যালেন্ডারই বলছে, ২০৬১ সাল।
পৃথিবীর তুলনায় এক-ষষ্ঠাংশ মাধ্যাকর্ষণ শুধু তার বয়সের জৈব-ঘড়িকে ধীর করে দেয়নি, বরং হাসপাতালটার এ অবস্থা জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো ঘড়ির কাঁটাকে পেছনদিকে ফিরিয়ে দিল। বৃহস্পতি অভিযানের সেই হাইবারনেশন শুধু তার বয়েস বেড়ে যাওয়া রোধ করেনি, বরং উল্টোদিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। আজ এ কথা সর্বজনবিদিত, কেউ কেউ অবশ্য দ্বিমতও পোষণ করে । ফ্লয়েড সত্যি সত্যি বৃহস্পতি মিশন শেষে আরো ঝলমলে তারুণ্য ফিরে পেয়েছিল; আমার যাওয়াটা নিরাপদ? তাহলে তুমি সত্যি সত্যি মনে কর?
“এই ইউনিভার্সে কোনোকিছুই নিরাপদ নয়, হেউড। আমি যতটা জানি, তাতে শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া ইউনিভার্স এর পরিবেশ এখানকার মতোই হবে। হ্যাঁ, সেখানে হয়তো-যাকে বলে-আমাদের এই পাস্তুরের মতো মেডিক্যাল এক্সপার্টদের দেখা মেলা ভার, কিন্তু ড, মাহিন্দ্রন খুবই ভাল লোক। তার আওতার বাইরে পরিস্থিতি একবিন্দু সরে গেলেই সে সোজা তোমাকে হাইবারনেশনে পাঠিয়ে দেবে, তারপর আবার পাঠাবে আমাদের কাছে, সি ও ডি।