অনেকটা স্পষ্টভাবে ঘটনা বুঝিয়ে দেন পাঠককে অত্যন্ত শক্তিময় আবেদনের সাহায্যে। তাতেই পাঠক পেয়ে যায় অসাধারণ মজা। তাঁর দারুণ একটি বৈশিষ্ট্য-পাঠককে খোলাসা করে বলেও দেন, রাখেন রহস্যও। তিনি আসিমভের মতো পাঠকের উপর সিদ্ধান্ত ঠিকই ছাড়েন, তবে আসিমভের চেয়ে আরেকটু এগিয়ে নেন কাহিনী। এতে করে পাঠককে কষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হয় না, অবশ্যম্ভাবীরূপে তা এসে যায়। আর গদ্য অন্তর্গত ধোঁয়াশার দিক দিয়ে আসিমভের চেয়ে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠতে দেন কাহিনীকে। তবে ক্লার্কের গদ্যশৈলী থেকে আসিমভের শৈলী অনেক সরল আর সুখপাঠ্য। থ্রিলার ভাবটা ফোঁটানোর ক্ষেত্রেও আসিমভ অগ্রগণ্য। ঠিক আসিমভের মতোই বিজ্ঞান ও সাহিত্যের উভয়ক্ষেত্রেই সমান দৃষ্টি রেখে প্রকাশিত করেন ঘটনা। জুলভার্নের বেলায় একটা বইয়ের পাতাগুলোর মতো মনে হয় এ পাতা উল্টালেই বই শেষ-অর্থাৎ আপাতত কাহিনী এক ধারায়, রহস্য এক ধারায়-পরের মুহূর্তেই ওটার একটা জট খুলে যাওয়ায় পরের আরেক রহস্য ধরা দেয় এবং বেশ কবার এমন হবার পর কাহিনী শেষ হয়। ক্লার্কও প্রায় একই প্রক্রিয়ায় এখোন। তবে পার্থক্য হচ্ছে, ভার্নের ধাপ ও কাহিনী স্বচ্ছতম, ক্লার্কেরটা এই একটু কম স্বচ্ছ। ধাপও-কাহিনীও।
বিখ্যাত আরেক থ্রি ল’জ দিয়েছেন তিনি। বলেছেন কালোত্তীর্ণ কথা ‘যখন একজন একনিষ্ঠ আর পুরনো বিজ্ঞানী ঘোষণা করেন যে, কিছু একটা সম্ভব, তিনি বলছেন একেবারে ঠিক কথা। যখন তিনি বলেন যে কিছু একটা অসম্ভব, খুব সম্ভবত তিনিই এবার ভুল করছেন।’
বয়স হয়ে গেছে। লিখেছেন একটা বড়সড় বই স্টিফেন বাক্সটারের সাথে। তবে তিনি থেমে নেই। এখনো প্রথম যৌবনের মতো সাগরে ডাইভ দিতে চান। পাঞ্জায় হারাতে চান পঁচিশ বছরের যুবককে। এজন্যই হয়তো তিনি সায়েন্স ফিকশন কাহিনীকার-চির তারুণ্যের সবুজ পাতায় আবৃত। সময় তাঁর এ দুর্বল অবস্থাকে আরো দুর্বল করে দিতে পারে। ক্লার্ক থেকেই যাবেন-যেমন থেকে গেছেন আসিমভ-জুলভার্নরা।
নির্ঘণ্ট
১. চারপেয়ে সরীসৃপ: প্রাচীন চারপেয়ে সরীসৃপ মানে ডায়নোসর জাতীয় প্রাণী।
২. জিন প্রাণীর প্রতিটি কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রোমোজোম, প্রতিটি ক্রোমোজোমে বংশগতির বার্তাবাহক যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ থাকে তা জিন। চোখের রঙ, গায়ের উচ্চতা, লোমশতা-এমন প্রতিটি বিষয় প্রকাশের জন্য এক বা একাধিক জিন কাজ করে। জিনের জন্যই বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্য সন্তানের দিকে যায়। মজার ব্যাপার হল, দাদার লাল চুল এবং বাবার কালো চুল হলেও নাতির লাল চুল হতে পারে, অর্থাৎ মানুষের জিন হারায় না, পরের কোনো না কোনো বংশধরের কাছে প্রকাশ পেতে পারে। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মানুষের মাত্র ৪% জিনের কাজ সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। জিন গবেষণা শেষ হলে মানুষের অমর হয়ে যাওয়াও বিচিত্র নয়।
৩. প্লেইস্টোসিন: এক ভূতাত্ত্বিক, আবহাওয়া নির্ভর যুগ। চব্বিশ লক্ষ বছর আগের। এর পর বরফ যুগ। প্লায়োসিন-প্লেইস্টোসিন থেকেই মানব জাতির উদ্ভব (বিবর্তন মতবাদ অনুসারে)। ইউরোপ-আমেরিকায় বর্তমান মাটি এবং বহু বিলুপ্ত প্রজাতির ফসিল এ উষ্ণ যুগের ফসল।
৪. ডায়নোথেরিয়া: হাতি জাতীয় বিশাল স্থলজ প্রাণীর উপগোত্র। পূর্বসূরী ম্যামথ, উলি ম্যামথ।
৫. শব্দেতর: যে নিচু কম্পাঙ্কের শব্দ শোনা যায় না। মানুষ আঠারো হার্জের নিচের কম্পাঙ্কের শব্দ শোনে না। আবার আঠারো হাজার হার্জের উপরের শব্দও শোনে না। সেটা শব্দোত্তর তরঙ্গ।
৬. অ্যান্টিলোপ: দ্রুতগামী, হাল্কাপাতলা, তৃণভোজী, বিচরণশীল প্রাণীর দল। ভেড়া ও ছাগলজাতীয় প্রাচীন প্রাণী।
৭. ইউটোপিয়া: কল্পরাজ্য, কল্প-ভূস্বর্গ, পৃথিবীর সর্বসুখের স্থান। টমাস মুর তার ইউটোপিয়া গ্রন্থে প্রথম এ নাম দেন। তাঁর কল্পিত এই দ্বীপে আসলে সমাজবিজ্ঞান আলোচনা করেছেন। অনেকে মনে করেন সায়েন্স ফিকশন মানে ইউটোপিয়ার সন্ধান। তাই এস, এফ. এ ইউটোপিয়ান ও এন্টি ইউটোপিয়ান ধারা চালু হয়েছে।
৮. গাইডেড মিসাইল: নিক্ষেপের পর যে ক্ষেপণাস্ত্রের দিক বদলানো যায়। অটো গাইডেড মিসাইল আবার শক্রযানের পেছনে ধোয়া অথবা তাপ অনুসরণ করে যেতেই থাকে।
৯. গ্যানট্রি: যে বিশাল প্ল্যাটফর্ম থেকে রকেট বা অন্য মহাকাশযান ছোঁড়া হয়।
১০. ওয়্যারহেড: মিসাইলের অগ্রভাগে আসল বিস্ফোরক থাকলে সেটা। এখানে পারমাণবিক বোমা যা মিসাইলে বসানো যাবে।
১১. কেনেডি: জন ফ্রিৎজেরাল্ড। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট, কিউবা ও বার্লিন সংকটের ত্রাতা। উনিশশো তেষট্টি সালে খোলা গাড়িতে যাবার সময় আততায়ীর গুলিতে নিহত। পৃথিবীর সবচে বড় স্পেস স্টেশনটি কেনেডির নামে।
১২. জি: সপ্তদশ শতকে ইম্পার শব্দটি ব্যবহার করেন ডানে চলা বা সামনে যাওয়া বোঝাতে। পরে শব্দটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মানের সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে পড়ে। এখানে টু জি মানে মাধ্যাকর্ষণের দ্বিগুণ।
১৩. সিস্টেম: কোনো পরিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা। যেমন হার্ড ডিস্ক, মনিটর, স্পিকার প্রতিটি যন্ত্র হলেও কম্পিউটার একটি যন্ত্র নয়, বরং যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা বা সিস্টেম।