ক্যাভিয়াস বেসে স্বাগতম
ইউ এস অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর[২২]
১৯৯৪
ফ্লয়েড এবার দেখতে পায় লেখাটা দুভাগে বিভক্ত হয়ে মাটির তলার পথ দেখাচ্ছে। এক বিশাল দরজা খুলে গিয়ে তাদের বেসের পেটে প্রবেশাধিকার দেয়। তারপর যায় বন্ধ হয়ে। পরপর তিনটি দরজা পেরিয়ে তারা বাতাসের গর্জন শুনতে পেল। আবার এসেছে বায়ুমণ্ডল।
পাইপ আর ক্যাবলে ভর্তি এক টানেল ধরে পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি তুলতে তুলতে তারা এক্সিকিউটিভ এরিয়াতে হাজির হয়। চির পরিচিত অফিসিয়াল সেই টাইপরাইটার, অফিস কম্পিউটার, মহিলা এসিস্ট্যান্ট, ওয়ালচার্ট আর গোঙাতে থাকা টেলিফোন দেখে বেশ স্বস্তি বোধ হচ্ছে ডক্টর ফ্লয়েডের। অ্যাডমিনিস্ট্রেটর লেখা দরজার সামনে আসতেই আবার ফিরে আসে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হ্যাভোরসেনের সেই অফিসিয়াল ভাব, ‘ডক্টর ফ্লয়েড আর আমি দু মিনিটের মধ্যেই ব্রিফিং রুমে হাজির হচ্ছি।’
বাকীদের কেউ নড করল, কেউবা সম্মতিসূচক শব্দ তুলে করিডোর ধরে নেমে গেল। কিন্তু হ্যাভোরসেন ফ্লয়েডকে নিজের অফিসে নিয়ে যাবার আগে ছোট্ট এক সমস্যায় পড়ে। দরজা খুলে যাবার সাথে-সাথেই এক খুদে অবয়ব ঝাঁপিয়ে পড়ে হ্যাভোরসেনের উপর।
‘ড্যাডি!’ তুমি উপরে গিয়েছিলে! আমাকে নেয়ার প্রমিজ ছিল তোমার!
‘ডায়না, আমি বারবার বলেছি, সম্ভব হলে নিয়ে যাব। এখন ডক্টর ফ্লয়েডের সাথে খুব ব্যস্ত আছি-হ্যান্ডশেক করো। ইনি এইমাত্র পৃথিবী থেকে এলেন।’
ফ্লয়েডের মনে হল ছোট্ট মেয়েটার বয়স আটের মতো হবে। হাতগুলো সরু সরু। মেয়েটার চেহারা পরিচিত লাগছে খুব। এবং হঠাৎ করেই ফ্লয়েড বুঝতে পারে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর কেন মিটিমিটি হাসছে।
‘অবিশ্বাস্য! শেষ যেবার এখানে এলাম তখন ও-তে একদম ছোট ছিল!’
‘গত হপ্তায় ওর চতুর্থ জন্মদিন গেল। এই লো গ্র্যাভিটিতে বাচ্চাকাচ্চা দ্রুত বাড়ে। কিন্তু বয়সটা অত দ্রুত বাড়ে না। ওদের শরীরের কলকজা নষ্ট হবে না সহজে। বাঁচবে আমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।’
বিভ্রান্ত লোকের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ফ্লয়েড, এ-মেয়েতো উচ্চতায় প্রায় লেডি হয়ে গেছে এরিমধ্যে! মনে হচ্ছে ওর হাড়ের গঠন খুবই ভালো।
‘নাইস টু মিট ইউ এগেইন, ডায়না,’ এরপরই-কোনো এক প্রবণতায়, কোনো এক কৌতূহলে এক যুগজিজ্ঞাসা বেরিয়ে পড়ে আপনাআপনি মুখ থেকে, পৃথিবীতে যেতে চাও তুমি?
চোখদুটো দ্যুতি ছড়ালো একটু, হাত ঝাঁকিয়ে নিল মেয়েটা।
‘সেটাতো বাজে জায়গা। পড়ে গিয়ে তোমরা নিজেরাই নিজেদের ব্যথা দাও। আর তোমাদের চারিদিকে মানুষ ভর্তি।
এইতো, স্পেসবর্নদের ফার্স্ট জেনারেশন! নিজেকে শোনায় ফ্লয়েড। সামনের বছরে ওরাই বেড়ে চলবে। চিন্তার কোথায় যেন দুঃখের সাথে আশা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আজ আমাদের পৃথিবী কত্তো পুরনো, কত বেশি প্রকাশিত! এখানে নতুন পাবার কিস্যু নেই। কিন্তু অভিযাত্রীদের মৃত্যুশীতল অভিযানের অন্যদুয়ার খোলা, অভিযান চলবেই। আজ তাদের যন্ত্রপাতির মধ্যে কুঠার আর বন্দুক থাকবে না, তাদের যানবাহন হবে না ওয়াগন কিংবা ক্যানো। থাকবে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, পরমাণুর শক্তি চালাবে সবকিছুকে, প্লাজমা ড্রাইভের শক্তি খুঁড়ে দেবে আকাশকে, ফার্মগুলো হয়ে পড়বে হাইড্রোপোনিক। আসছে এগিয়ে সময়টা, আর সব মায়ের মতো বসুমতাঁকেও তার সন্তানের প্রতি বিদায়বাণী উচ্চারণ করতে হবে উদাত্ত কণ্ঠে।
মেয়ের কাছে একগাদা নতুন প্রমিজ করে, বেশ বকাবকি করে হ্যাভোরসেন ফ্লয়েডের সাথে একা কথা বলার সুযোগ পেয়ে যায়। প্রশাসকের অফিস স্যুটটা বড়জোর পনের স্কয়ার ফুট। কিন্তু এ ছোট্ট ঘরে বাৎসরিক পঞ্চাশ হাজার ডলার পাওয়া অফিসারের মাননুযায়ী সব সরঞ্জামই বহাল তবিয়তে দাঁত কেলিয়ে হাসতে পারছে। বিশ্বের সব বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অটোগ্রাফসহ ছবি ঝুলছে দেয়ালে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বা জাতিসংঘের মহাসচিবও বাদ যাননি। অপর দেয়ালের দখলদার বিশ্বের তাবৎ বড় অ্যাস্ট্রোনটের ছবি। সেগুলোও স্বাক্ষরসহ।
এক তথাকথিত ‘লেদার’ সোফার ভিতর ডুবে গিয়ে একগ্লাস ‘শেরি’ হাতে পায় ফ্লয়েড। আতিথেয়তার এই পুরনো মদটি আসলে চান্দ্র জৈব-রসায়নবিদদের অবদান। প্রথমে একটু সাবধানে চুমুক দেয় সে, তারপর আরামে।
‘তা, চলছে কেমন, র্যালফ?’
‘খুব একটা খারাপ না,’ হ্যাভোরসেন জবাব দেয় চিন্তিতমুখে, বরং সেখানে যাবার আগে একটা ব্যাপার তোমার মাথায় থাকা ভালো।
‘কী?’
‘আসলে, আমার মনে হয় ব্যাপারটাকে তুমি নৈতিক সমস্যা বলতে পার…’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দক্ষ প্রশাসক।
‘তাই!’
‘এখনো ব্যাপারটা সিরিয়াস নয়, কিন্তু হতে কতক্ষণ?’
সরল মনে বলে বসে ফ্লয়েড, ‘নিউজ ব্ল্যাকআউট? খবর দেয়া বন্ধ করেছ সেটা?’
‘হু। আমার লোকজন গরম হয়ে উঠছে এ ব্যাপারটা নিয়ে। হাজার হলেও, প্রায় সবাই পৃথিবীতে পরিবার ফেলে এসেছে। সেসব মানুষ প্রায় বিশ্বাস করে বসে আছে যে আমরা সবাই মুনপ্লেগের শিকার।’
‘আ’ম স্যরি অ্যাবাউট দ্যাট,’ বলল ফ্লয়েড, কিন্তু কোনো পত্রিকাই এরচে ভালো কভার স্টোরির আইডিয়া পায়নি। হাজার হলেও, গুজবটা কাজে লেগেছে। ও, ময়শেভিচের সাথে স্পেস স্টেশনে দেখা হয়েছিল। এমনকি সেও একই কথা বলছে।’