প্রত্যাশা অনুযায়ী আপনিই পৃথিবীর সবচে পরিচিত সায়েন্স ফিকশন লেখক। আপনি এক মানুষ হয়ে আমাদের ধুলোর পৃথিবী থেকে নক্ষত্রের জগতে নিয়ে যাবার পথে যে কাজ করেছেন তা আর কোনো একক ব্যক্তিত্ব করতে পারেনি। এমন এক সময়ে নিয়ে যাবার কাজ করছেন যেখানে অচেনা বুদ্ধিমত্তার কাছে মানুষ হবে ঈশ্বর পিতা, বা গডফাদার।
অন্যক্ষেত্রে, যখন এই অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে, ইউনিভার্সের অসীম পথে পরিভ্রমণ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে, তখন তাদের চোখেও ব্যাপারটা ধরা পড়বে, পড়বেই। তারাও শ্রদ্ধায় মাথা অবনত করবে তার প্রতি যিনি তাদের অস্তিত্বের সবচে বড় এবং দূরদর্শী সমর্থক।
.
কিন্তু কে জানে, আগামীদিনের মানুষ আপনার সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাবে কিনাঃ পৃথিবীতে আদৌ বুদ্ধিমত্তা আছে তো?
আপনার,
স্ট্যানলি
.
এই ক’দিন আগেও আমি স্বপ্ন দেখছিলাম তাকে নিয়ে। যেমন ছিলেন ১৯৬৪ সনে, তেমনি। প্রশ্ন করলেন, ‘যাক, এখন কী করণীয়?’ তো, যদি এরপর বলে আসলেই কিছু থেকে থাকে, সেখানে ব্রায়ান এলডিসের চমৎকার ছোটগল্প ‘সুপারটয় সারা গ্রীষ্ম জুড়ে ভাল রয়’ অনুসরণে তিনি ‘এ আই’ নামে যে ছায়াছবিটা গড়তে চান এবং নানা ঝুট-ঝামেলায় কুলিয়ে উঠতে পারেননি সেসব কথা মনে পড়ে।
আমার এক জীবনে সবচে গভীর দুঃখের মধ্যে একটা, ২০০১ সাল একদিন আসবে, সেদিন আমার পাশে মহান চলচ্চিত্রকার স্ট্যানলি কুবরিক থাকবেন না।
আর্থার সি ক্লার্ক
১৬-০৪-১৯৯৯
.
স্ট্যানলির স্মৃতির প্রতি
সামনের ভূমিকাটা লেখার মাত্র সপ্তাহদুয়েক পরেই নিথর করে দেয়া অপ্রত্যাশিত এক খবর পেলাম। স্ট্যানলি কুবরিক সত্তর বছর বয়েসে মারা গেছেন। দু-হাজার এক সালে আমাদের চলচ্চিত্রটার এক নতুন রূপ মুক্তি দেয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর; তার সাথে অংশীদারিত্বের দিন ফুরিয়ে যাওয়াতে আমার অন্তরের অন্তস্থল সত্যি সত্যি ব্যথায় ভরে উঠছে।
২০০১ শেষ করার পর তিন দশকে আমাদের খুব কমই দেখা হয়েছিল। কিন্তু বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তারই প্রমাণ পাওয়া যায় বি বি সি-র দিস ইজ ইউর লাইফ অনুষ্ঠানে আমার উপস্থিতির সময় তাঁর পাঠানো চিঠিতে:
২২ আগস্ট, ১৯৯৪
প্রিয় আর্থার,
সরি, ফিল্মের কাজের চাপ আমাকে আপনার এই বিশেষ সম্মান পাওয়া দেখা থেকে বঞ্চিত করল। নয়তো আজ রাতে আমি অবশ্যই এখানে থাকতাম।
প্রত্যাশা অনুযায়ী আপনিই পৃথিবীর সবচে পরিচিত সায়েন্স ফিকশন লেখক। আপনি এক মানুষ হয়ে আমাদের ধুলোর পৃথিবী থেকে নক্ষত্রের জগতে নিয়ে যাবার পথে যে কাজ করেছেন তা আর। কোনো একক ব্যক্তিত্ব করতে পারেনি। এমন এক সময়ে নিয়ে যাবার কাজ করছেন যেখানে অচেনা বুদ্ধিমত্তার কাছে মানুষ হবে ঈশ্বর পিতা, বা গডফাদার।
অন্যক্ষেত্রে, যখন এই অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে, ইউনিভার্সের অসীম পথে পরিভ্রমণ করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে, তখন তাদের চোখেও ব্যাপারটা ধরা পড়বে, পড়বেই। তারাও শ্রদ্ধায় মাথা অবনত করবে তার প্রতি যিনি তাদের অস্তিত্বের সবচে বড় এবং দূরদর্শী সমর্থক।
কিন্তু কে জানে, আগামীদিনের মানুষ আপনার সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাবে কিনাঃ পৃথিবীতে আদৌ বুদ্ধিমত্তা আছে তো?
আপনার,
স্ট্যানলি
.
এই কদিন আগেও আমি স্বপ্ন দেখছিলাম তাকে নিয়ে। যেমন ছিলেন ১৯৬৪ সনে, তেমনি। প্রশ্ন করলেন, ‘যাক, এখন কী করণীয়?’ তো, যদি এরপর বলে আসলেই কিছু থেকে থাকে, সেখানে ব্রায়ান এ্যলডিসের চমৎকার ছোটগল্প ‘সুপারটয় সারা গ্রীষ্ম জুড়ে ভাল রয়’ অনুসরণে তিনি ‘এ আই’ নামে যে ছায়াছবিটা গড়তে চান এবং নানা ঝুট-ঝামেলায় কুলিয়ে উঠতে পারেননি সেসব কথা মনে পড়ে।
আমার এক জীবনে সবচে গভীর দুঃখের মধ্যে একটা, ২০০১ সাল একদিন আসবে, সেদিন আমার পাশে মহান চলচ্চিত্রকার স্ট্যানলি কুবরিক থাকবেন না।
আর্থার সি ক্লার্ক
১৬-০৪-১৯৯৯
সহস্রাব্দ সংস্করণের কথা
আজ পঁয়ত্রিশ বছর হল, একদিন স্ট্যানলি কুবরিক তার সেই ‘ভালো সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র’ খুঁজে বেড়িয়েছিলেন। আসল সত্যি বলতে গেলে, বর্তমানের চোখে ১৯৬৪ সালটা যেন অন্য যুগের অধীনে বাস করে। সেই তখন, মাত্র হাতেগোনা দু-চারজন নভোচর মহাকাশে ঢু মেরেছে এবং মহিলাদের আরো দৈন্যদশা, মাত্র একজন। তখন প্রেসিডেন্ট কেনেডি ঘোষণা করলেন, দশক পেরুনোর আগেই মানুষ চাঁদের বুকে পা রাখবে। এখন আমি বাজি ধরতে পারি, খুব বেশি লোক সে কথা বিশ্বাস করেনি সেদিন।
আরো হতাশ করা ব্যাপার হল, মহাকাশে আমাদের চিরসাথী, সবচে কাছের আত্মীয়ের ব্যাপারে আক্ষরিক অর্থে কোনো প্রামাণ্য ধারণা ছিল না আমাদের মনে। এমনকি চাঁদের বুকে প্রথম ভোব নামার সময় কোনো ধুলার সাগরে যে ডুবে যাবে না তাও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।
ব্যাপারটা খোলাসা করার জন্য উনিশশো একাত্তরে, যখন আমার মাথা কিছুটা পরিষ্কার ছিল তখন লেখা নন-ফিকশন (আংশিক) টার কথা মনে করিয়ে দিতে দিন। দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ডস অফ ২০০১-এ লিখেছিলাম:
চৌষট্টির বসন্তে… চান্দ্র অবতরণ মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে দূরের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়ে আমরা জানতাম, এ অপ্রতিরোধ্য। আর আবেগের দিক দিয়ে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারিনি… গ্রিসাম আর ইয়ংয়ের দ্বি-মানব যান আরো এক বছর পরও হালে পানি পায়নি। তখনো চাঁদের বুকের গঠন নিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির ঝড় বইছে… যদিও নাসা আমাদের পুরো ছায়াছবির বাজেট (কোটি ডলারের উপরে) প্রতিদিন খরচ করছে, দেখেশুনে স্পেস অভিযানকে পাহাড় ডিঙানোর চেয়ে লাখ গুণ কঠিন বলেই মনে হয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল স্থির, মানুষ চাঁদের বুকে হাঁটাহাঁটি করার সময়ও এই ছায়াছবিটা সমান জনপ্রিয়তা রাখবে।