আমরা সবাই পঙ্গু।
আমি জানি না মোজেস ক্যালডর তোমার আঘাতটা কি এবং কিভাবে তুমি সেটা সামলাও। আমি আমারটা জানি। এবং আমার সঙ্গের মানুষদের ভালোর জন্য সেটা ব্যবহার করি। যেটা আমাকে আজ এখানে এনে দিয়েছে। এবং আমি তার জন্য গর্বিত।
আগেকার যুগে হলে আমি একজন একনায়ক অথবা যুদ্ধবাজ নেতা হতাম। তার বদলে আমি হয়েছিলাম মহাদেশীয় পুলিশের প্রধান। তারপর মহাকাশযান নির্মাণের প্রধান সমন্বয়কারী এবং সব শেষে মহাকাশযানের প্রধান ক্যাপ্টেন। আমার ক্ষমতার লোভকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। ক্যাপ্টেনের সিন্দুক যার চাবি শুধু তার কাছেই থাকে, তিনি সেদিকে এগুলেন। একটা দরজা ঠেলতেই নিঃশব্দে খুলে গেল। ভেতরে আছে কিছু কাগজ, কিছু মেডেল আর ট্রফি এবং একটা ছোট, কারুকাজবিহীন কাঠের বাক্স যাতে রুপোর অক্ষরে সি. বে, খোদাই করা। ক্যাপ্টেন বাক্সটা টেবিলে রাখলেন। কোলে পরিচিত স্পর্শে তার ভালো লাগছিল। বাক্সটা খুলে তার ভেলভেটের ওপর শুয়ে থাকা চকচকে ক্ষমতাবান যন্ত্রটার দিকে তিনি তাকিয়ে রইলেন। তার এই অস্বাভাবিক চিন্তা একসময় মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ছিল। সাধারণত এটা কোন ক্ষতি করেনা-আদিম সমাজে অনেক সময় এটা ছিল মূল্যবান। এবং বহুবার এটা ইতিহাসের দিক পরিবর্তন করেছে–ভালো এবং মন্দ দুদিকেই।
-আমি জানি তুমি পুরুষত্বের চিহ্ন, ক্যাপ্টেন ফিসফিসিয়ে বললেন। তুমি একটা বন্দুক। আমি তোমাকে আগেও ব্যবহার করেছি। আমি তোমাকে আবারও ব্যবহার করতে পারি।
পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন সেকেন্ডেরও ভগ্নাংশ ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই তা কয়েক বছর ঘুরে এসেছে। তিনি তার ডেস্কের পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। কয়েক মুহূর্তের জন্য সাইকোথেরাপিষ্টের সতর্ক কাজ মূল্যহীন হয়ে গিয়েছিল। পেছনের স্মৃতি হঠাৎ বেশীই ফিরে এসেছিল। তিনি আতংক এবং অদম্য আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন শেষের সে দশকগুলোর দিকে, যা মানুষের সবচেয়ে ভালো এবং খারাপ জিনিসগুলোকে বের করে নিয়ে এসেছিল। তার মনে পড়ল কায়রোতে তরুণ পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কিভাবে দাঙ্গাবাজ ভীড়ের উপর সে প্রথম গুলি চালানোর অনুমতি দিয়েছিল। বুলেট ছোরা হয়েছিল মূলত ছত্রভঙ্গ করার জন্য কিন্তু দু’জন মারা গিয়েছিল।
তারা কি নিয়ে দাঙ্গা করেছিল? সে জানতও না–শেষ দিকে বহু রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় আন্দোলন চলছিল। এবং সেটা আরও ছিল বিশাল সব অপরাধীর যুগ। তাদের হারানোর কিছু ছিল না। এবং ভবিষ্যত বলতেও কিছু ছিল না। সুতরাং তারা যে কোন ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিল। অধিকাংশই ছিল সাইকোপ্যাথ। তবে কিছু ছিল প্রায় জিনিয়াস। জোসেফ কিবারের কথা তার মনে পড়ল, যে একটা মহাকাশযান চুরি করে ফেলেছিল প্রায়। কেউ জানেনা তার কি হয়েছে। এবং ক্যাপ্টেন বে মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্ন দেখে যে, এমন যদি হয় যে ঘুমন্ত কারও মধ্যেই লুকিয়ে আছে সে।
৩৬০০ খ্রীষ্টাব্দের পর জন্মদান আইন করে বন্ধ করে দেওয়ায় জনসংখ্যা কমে আসছিল। কোয়ান্টাম ড্রাইভ এবং ম্যাগেলানের মতো মহাকাশযান তৈরীর প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হতো। এ সবই এবং ঘনিয়ে আসা শেষ দিনের ছায়া সমাজে এমন এক চাপ ফেলেছিল যে বাস্তবিকই যে কেউ সৌরজগৎ ছাড়তে পারবে তা অবাস্তব বলেই মনে হতো। ক্যাপ্টেন বে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করলেন সেই সব মানুষদের কথা যারা তাদের শেষ বছরগুলো উৎসর্গ করেছিলেন এমন এক উদ্দেশ্যে যার সাফল্য বা ব্যর্থতা কোনটিই তাদের স্পর্শ করবে না। তিনি এখনও দেখতে পান প্রেসিডেন্ট এলিজাবেথ উইন্ডরকে। ক্লান্ত কিন্তু গর্বিত ভঙ্গীতে তিনি মহাকাশযান পরিদর্শন করে ফিরে যাচ্ছেন পৃথিবীতে, যে গ্রহের আয়ু আর মাত্র কয়েকদিন। আসলে তার সময় ছিল আরও কম। পোর্ট ক্যাভেরালে নামার আগেই তার মহাকাশ প্লেনটিতে লুকানো বোমাটি বিস্ফোরিত হয়।
ক্যাপ্টেনের রক্ত এখনও শীতল হয়ে আসে ঘটনাটা স্মরণ করলে। বোমাটা ছিল ম্যাগেলানের উদ্দেশ্যে, সময়ের ভুলের জন্য মহাকাশযানটি রক্ষা পেয়েছিলো। তবে মজার ব্যাপার হল প্রতিটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এর কৃতিত্ব নিয়েছিল।
জোনাথান কল্ডওয়েল এবং তার অনুসারীরা আরও জোরেসোরে বলছিল যে, আসলে এগুলো কিছু নয়, ঈশ্বর পরীক্ষা করছেন মানুষকে, যেমন তিনি আগেও পরীক্ষা করেছেন। সূর্যের যাই হোক না কেন পৃথিবী তার পথেই স্বাভাবিক ভাবে ঘুরবে। এবং মানব জাতি রক্ষা পাবে যদি সকল অবিশ্বাসীরা তার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করে। এবং তখন হয়তো তিনি মত পরিবর্তন করবেন। আবার “ঈশ্বরের ইচ্ছা নামের গোষ্ঠীরা বিশ্বাস করত একদম উল্টো কথা। শেষ বিচারের দিন সমাগত এবং কোনভাবেই তা ফেরানো যাবেনা। বরং একে স্বাগত জানানো উচিত, কারণ যারা বিশ্বাসী, তারা এরপর ভোগ করবে অনন্ত সুখ। এবং তাই সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে দুই গোষ্ঠীই সিদ্ধান্তে এল যে, মানব জাতির এই ভবিতব্য হতে রক্ষা পাবার চেষ্টা অনুচিত। সব মহাকাশযান ধ্বংস করে ফেলতে হবে।
ভাগ্য ভালো যে, দুই গোষ্ঠীই পরস্পরকে এমনভাবে অপছন্দ করত যে শেষের এই লক্ষ্য পূরণের জন্যও তারা একত্রে কাজ করতে পারেনি। এবং প্রকৃতপক্ষে প্রেসিডেন্ট উইন্ডরের মৃত্যুর পর তাদের সন্ত্রাস নিজেদের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ল। একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ল, অবশ্যই বিশ্বনিরাপত্তা দপ্তরের মাধ্যমে, যদিও তারা তা ক্যাপ্টেন বের কাছে স্বীকার করেনি, যে বোমাটি পেতেছিল ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা গোষ্ঠী এবং সময় পিছিয়ে দিয়ে ব্যাপারটা ভন্ডুল করেছে কল্ডওয়েলের অনুসারীরা। বিপরীত একটা গুজবও অবশ্য বাজারে চালু ছিল।