তাই সর্বোচ্চ আইন অনুসারে অক্সিজেন সমৃদ্ধ গ্রহগুলো নিষিদ্ধ। অবশ্য আমার মনে হয় যে, কোয়ান্টাম ড্রাইভ যদি আমাদের অসীম ক্ষমতা আর শক্তি না দিত তাহলে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া হতো না।
এখন আমি আমাদের পরিকল্পনা বলছি। সাগান-২-তে আমরা যখন পৌঁছাবো, আপনারা সবাই ম্যাপে দেখছেন যে অর্ধেকের বেশী গ্রহ বরফে ঢাকা প্রায় তিন কিলোমিটার পুরু। চূড়ান্ত কক্ষ ঠিক করার সময় ম্যাগেলান তার কোয়ান্টাম ড্রাইভ ব্যবহার করবে। ড্রাইভের পুরোটা বা আংশিক একটা টর্চ হিসেবে কাজ করে বরফকে গলিয়ে ফেলবে এবং একই সঙ্গে বাস্পটাকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে পরিণত করবে।, হাইড্রোজেন খুব শিগগিরি মহাবিশ্বে উড়ে যাবে। প্রয়োজনবোধে আমরা এটাকে লেজার দিয়ে আরও দ্রুত করতে পারি। অক্সিজেন থেকে যাবে।
বিশ বছরেই সাগান-২ আবহাওয়া মন্ডলে দশ ভাগ অক্সিজেন থাকবে। যদিও নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অন্যান্য বিষাক্ত গ্যাসে এটা ভর্তি থাকবে। আমরা সে সময় বিশেষভাবে অভিযোজিত ব্যাকটেরিয়া বা এমনকি গাছও নামাতে পারি পদ্ধতিটাকে দ্রুত করতে। তবে এতো উত্তাপ সরবরাহের পরও গ্রহটার তাপমাত্রা থাকবে অত্যন্ত শীতল। নিরক্ষীয় অঞ্চলে দুপুরে কয়েক ঘন্টা ছাড়া সমস্ত গ্রহের তাপমাত্রা থাকবে শুন্যের নীচে।
তাই তখন আমরা আমাদের কোয়ান্টাম ড্রাইভ ব্যবহার করব- সম্ভবতঃ শেষ বারের মতো। ম্যাগেলান–যা তার সারা জীবন মহাশূন্যে কাটিয়েছে। অবশেষে গ্রহের মাটিতে নেমে আসবে।
এবং তারপর কোন পাথুরে ভূমির উপর প্রতিদিন পনেরো মিনিটের জন্য কোয়ান্টাম ড্রাইভ চালানো হবে। আমরা জানি না পুরো অভিযানে কত সময় লাগবে, যতক্ষন না আমরা প্রথম পরীক্ষাটা করব। এমনকি প্রথম জায়গাটা ভূতাত্ত্বিকভাবে স্থির না হলে, আমাদের জাহাজকে আবারও সরাতে হতে পারে।
প্রাথমিক ভাবে মনে হয়, ড্রাইভটাকে প্রায় তিরিশ বছর ধরে ব্যবহার করতে হবে। যতক্ষণ না গ্রহের ঘূর্ণন যথেষ্ঠ পরিমান আস্তে হয়, যাতে সূর্যের রশ্মি এর পৃষ্ঠে উষ্ণতা আনবার মতো সময় পায়। এরপর গ্রহের কক্ষপথকে বৃত্তাকার করতে আরও প্রায় পঁচিশ বছর ড্রাইভ চালাতে হবে। তবে তার অনেক আগেই সাগান-২ বাসযোগ্য হবে–অবশ্য চূড়ান্ত কক্ষে না আসা পর্যন্ত শীতটা ঠিকভাবে কাটবে না।
তাহলে আমরা পাচ্ছি একটা কুমারী গ্রহ পৃথিবীর চাইতে বড়, চল্লিশ ভাগ সমুদ্র আর পঁচিশ ডিগ্রী তাপমাত্রাসহ। আবহাওয়া মন্ডলে পৃথিবীর তুলনায় সত্তর ভাগ অক্সিজেন থাকবে। যেটা আরও বাড়বে। সে সময় শীতনিদ্রায় থাকা মানুষকে জাগিয়ে তোলা হবে এবং তাদের দেয়া হবে নতুন এক গ্রহ।
এটা হচ্ছে সম্ভাব্য চিত্র, যদি না কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা বা আবিষ্কার ঘটে, যার জন্য আমরা সরে দাঁড়াতে বাধ্য হব। আর যদি সবচাইতে খারাপটা আসে তাহলে তো।
ড. ভার্লে ইতস্ততঃ করলেন, তারপর মৃদু হাসলেন।
-না, যাই হোক না কেন, আপনারা আমাদের আর দেখবেন না। যদি সাগান-২ সম্ভব না হয়, তাহলে আরেকটা লক্ষ্য আছে। সেটা আরও তিরিশ আলোক বর্ষ দূরে। সেটা হয়তো আরও ভালো হবে।
হয়তো আমরা দুটোতেই বসতি করব। তবে তা বলার সময় এখনও হয়নি।
আলোচনাটা আরম্ভ হতে একটু সময় নিল। সভ্যদের অধিকাংশই স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।
তাদের প্রেসিডেন্ট, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় যিনি আগে থেকেই কিছু প্রশ্ন তৈরী করে রাখেন- তিনিই আরম্ভ করলেন।
-একটা সামান্য প্রশ্ন, ড. ভার্লে। সাগান-২ কার বা কিসের নামে রাখা?
–তৃতীয় শতাব্দীর একজন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীকারের নামে।
প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশা মতোই এটা জমাট বরফকে ভেঙ্গে দিল।
–ড. আপনি বলেছেন সাগান-২ এর একটা উপগ্রহ আছে। আপনারা কক্ষ পরিবর্তনের সময় ওটার কি করবেন?
–কিছু না, অল্প এদিক সেদিক করতে পারি হয়তো! এটা তার আপন পথেই ঘুরবে।
–যদি নীতিমালা কত যেন-৩৫০০, ৩৫০৫ এর আগে প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে আমরা কি এখানে থাকতাম? মানে থ্যালসাও কি নিষেধের আওতায় পড়ত?
–এটা খুব ভালো প্রশ্ন। আমরাও এটা নিয়ে তর্ক করি। ২৭৫১ সালে যে মহাকাশযানটা –অর্থাৎ আপনাদের দক্ষিণ দ্বীপের মহাকাশযানটা অবশ্যই এই নীতির বিরুদ্ধে যেত। তবে সৌভাগ্যবশতঃ তখন সমস্যাটা জাগেনি। আর যেহেতু এখানে কোন স্থলচর প্রাণী নেই, সেহেতু হস্তক্ষেপের প্রশ্ন এখানে উঠছে না।
-এটা তো অনুমানমূলক। একজন তরুণ সদস্য বয়স্কদের হাসাহাসি সত্ত্বেও বলে উঠল। অক্সিজেন মানেই যে জীবন তা মেনে নিলেও, তার উল্টোটা যে সম্ভব নয় সেটা সম্বন্ধে আপনারা কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন? কোন অক্সিজেন এমনকি কোন আবহাওয়ামন্ডল ছাড়া গ্রহেও তো প্রাণী–এমনকি বুদ্ধিমান প্রাণীও থাকতে পারে। অনেক দার্শনিকও তো বলেছেন যে, যদি আমাদের পূর্বপুরুষরা মেশিন হতেন তা হলে তারা জং পড়ে না এমন আবহাওয়া পছন্দ করতেন। সাগান-২ কত পুরোনো? যদি এমন হয় যে তারা অক্সিজেন ভিত্তিক জীবন পেরিয়ে গেছে সেখানে একটা যান্ত্রিক সভ্যতা অপেক্ষা করছে।
দর্শকদের মধ্য থেকে কিছু গোঙানীর শব্দ ভেসে এল, কেউ বিদ্রুপের সুরে বলল “কল্পকাহিনী।” দর্শকদের বিরক্তি দূর হবার জন্য ড, ভার্সে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বিস্তারিত ভাবে বললেন,
-সেটা ভেবে আমরা ঘুম নষ্ট করতে রাজি নই। আমরা যদি কোন সম্পূর্ণ যান্ত্রিক সভ্যতার মধ্যে গিয়ে পড়ি তাতে আমাদের হস্তক্ষেপ না করার নীতি কোন প্রভাব ফেলবে না। বরং আমি বেশী ভয় পাব যে ঐ সভ্যতা আমাদের প্রতি কি করবে।