বুধ (Mercury): বুধ সৌরজগতের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম গ্রহ। এটি সূর্যের সর্বাপেক্ষা নিকটতম গ্রহ। এর কোনো উপগ্রহ নেই। এটি সূর্যকে প্রতি ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। এর উজ্জ্বলতার আপাত মান–২.০ থেকে ৫.৫ পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু একে পৃথিবী থেকে সহজে দেখা যায় না। কারণ সুর্যের সঙ্গে এর বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য হচ্ছে মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রি। কেবল সকাল ও সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় একে দেখা যায়। গ্রহটি সম্বন্ধে তুলনামূলক অনেক কম তথ্য জানা গেছে। ভৌত বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে বুধ অনেকটা চাঁদের মতো। কারণ এই গ্রহেও রয়েছে প্রচুর খাদ। গ্রহটির কোনো স্থিতিশীল বায়ুমণ্ডল নেই, নেই কোনো প্রাকৃতিক উপগ্রহ। এর একটি সুবৃহৎ লৌহকেন্দ্র আছে। এই কেন্দ্র কর্তৃক উৎপাদিত চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের তুলনায় ০.১ শতাংশের বেশি শক্তিশালী। বুধের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৯০ থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে থাকে। সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান হচ্ছে অর্ধসৌর বিন্দু এবং শীতলতম স্থান হল এর মেরুর নিকটে অবস্থিত খাদসমূহের নিম্ন বিন্দু। বুধ চারটি পার্থিব গ্রহের একটি অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মতো কঠিন পৃষ্ঠভূমি আছে। চারটি পার্থিব গ্রহের মধ্যে এর আকার সবচেয়ে ছোটো; বিষুবীয় অঞ্চলে এর ব্যাস ৪৮৭৯ কিলোমিটার। বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের মধ্যে ৭০ শতাংশ ধাতব এবং বাকি ৩০ শতাংশ সিলিকেট জাতীয়। এর ঘনত্ব সৌরজাগতিক বস্তসমূহের ঘনত্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৫.৪৩ গ্রাম/সেমি; পৃথিবী থেকে সামান্য কম। মহাকর্ষীয় সংকোচনের প্রভাব সম্পূর্ণ উদ্ধার করতে পারলে বুধের গাঠনিক উপাদানসমূহের ঘনত্ব আরও বেশি হত। বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন বোঝার ক্ষেত্রে এর ঘনত্ব ভাল ভূমিকা রাখতে পারে। পৃথিবীর উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হচ্ছে মহাকর্ষীয় সংকোচন যার পরিমাণ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি। বুধ অনেক ছোটো এবং এর কেন্দ্র পৃথিবীর মতো অতটা দৃঢ় ও সংকুচিত নয়। তাহলে বুধের এত উচ্চ ঘনত্বের মূল কারণ হতে পারে, এর কেন্দ্র অনেক বড়ো এবং লৌহসমৃদ্ধ। আধুনিককালে ভূতত্ত্ববিদরা আবিষ্কার করেছেন যে বুধের সমগ্র আয়তনের ৪২ শতাংশই হল এর কেন্দ্র। যেখানে পৃথিবীর কেন্দ্র মাত্র ১৭ শতাংশ কেন্দ্রের চারপাশে ৬০০ কিমি অঞ্চল জুড়ে রয়েছে ম্যানটেল। ধারণা মতে বুধের ভূত্বকের পুরুত্ব ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এর পৃষ্ঠতলের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে প্রচুর সরু ridge রয়েছে যার কয়েকটি প্রায় কয়েকশো কিলোমিটার পর্যন্ত প্রলম্বিত। আমাদের সৌর জগতের অন্যান্য বৃহৎ গ্রহগুলোর যে কোনটির তুলনায় বুধে লৌহের পরিমাণ বেশী। বুধ গ্রহের পৃষ্ঠতলের গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ৪৫২ কেলভিন (৩৫৩.৯° ফারেনহাইট, ১৭৮.৯° সেলসিয়াস)। তবে এই মান স্থানভেদে ৯০ কেলভিন থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে উঠানামা করে। দেখা যাচ্ছে বুধ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬১০ কেলভিন পর্যন্ত উঠানামা করে যেখানে পৃথিবীতে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৮০ কে পর্যন্ত উঠানামা করতে পারে। এর মূল কারণ বুধের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীর তুলনায় বুধ পৃষ্ঠে সূর্য রশ্মির তীব্রতা ৬.৫ গুণ বেশী। তবে এই সমানুপাতিক সম্পর্কের মধ্যে একটি সৌর ধ্রুবক রয়েছে যার মান ৯.১৩ কিলোওয়াট/বর্গমি.। যদিও বুধ দীর্ঘ ১৭৬ দিনে একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে তথাপি এর একটি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী এবং আপাতভাবে আঞ্চলিক চৌম্বক ক্ষেত্র আছে। এটি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ০.১ শতাংশ। বুধের চৌম্বক ক্ষেত্রের উৎপত্তির কারণ পৃথিবীর মতো হতে পারে। বুধ গ্রহের চৌম্বক ক্ষেত্র এর চারপাশের সকল সৌরবায়ুকে বিক্ষিপ্ত করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। প্রকৃতপক্ষে এই চৌম্বক ক্ষেত্র গ্রহটির চারপাশে চুম্বক গোলক নামক একটি আস্তরণের সৃষ্টি করেছে, সৌরবায়ু যাকে অতিক্রম করতে পারে না। চাঁদের সঙ্গে বুধের মূল পার্থক্য এখানেই। চাঁদের চৌম্বক ক্ষেত্র বেশ দুর্বল হওয়ায় কোনো চুম্বক গোলক নেই, যার ফলে সৌরবায়ু চন্দ্রপৃষ্ঠে চলে আসে অতি সহজেই। এহেন বুধকে বশে রাখার জন্য পান্না (রত্ন Emerald) বা ওনেক্স (উপরত্ন) বা রূপো (ধাতু) বা বৃহদ্বারক (মূল) বা ত্রিপুরেশ্বরী (কবচ) বা ৪ মুখী (রুদ্রাক্ষ) জ্যোতিষীরা নিদান দিয়ে থাকেন।
বৃহস্পতি (Jupiter) : বৃহস্পতি গ্রহ সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে পঞ্চম এবং আকার আয়তনের দিক দিয়ে সৌরজগতের বৃহত্তম। বৃহস্পতি ব্যতিত সৌরজগতের বাকি সবগুলি গ্রহের ভরকে একত্র করলেও বৃহস্পতির ভর তা থেকে আড়াই গুণ বেশি হবে। বৃহস্পতিসহ আরও তিনটি গ্রহ অর্থাৎ শনি, ইউরেনাস এবং নেপচুনকে একসঙ্গে ‘গ্যাসদানব’ বলা হয়। পৃথিবী থেকে দেখলে বৃহস্পতির আপাত মান পাওয়া যায় ২.৮। এটি পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান তৃতীয় উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। কেবল চাঁদ এবং শুক্র গ্রহের উজ্জ্বলতা এর থেকে বেশি। অবশ্য কক্ষপথের কিছু বিন্দুতে মঙ্গল গ্রহের উজ্জ্বলতা বৃহস্পতির চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই গ্রহটি জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও জ্যোতিষীদের কাছে পরিচিত ছিল। বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রচুর পৌরাণিক কাহিনী। এবং ধর্মীয় বিশ্বাসও আবর্তিত হয়েছে বৃহস্পতিকে কেন্দ্র করে। রোমানরা গ্রহটির নাম রেখেছিল পৌরাণিক চরিত্র জুপিটারের নামে। জুপিটার রোমান পুরাণের প্রধান দেবতা। এই নামটি প্রাক-ইন্দো-ইউরোপীয় ভোকেটিভ কাঠামো থেকে এসেছে যার অর্থ ছিল আকাশের পিতা। গ্রহটিকে ঘিরে এবটি দুর্বল গ্রহীয় বলয় এবং শক্তিশালী ম্যাগনেটোস্ফিয়ার রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে কমপক্ষে ৬৩টি উপগ্রহ যাদের মধ্যে চারটি উপগ্রহ বৃহৎ আকৃতির। এই চারটিকে গ্যালিলীয় উপগ্রহ বলা হয়। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের উৰ্দ্ধাংশের গাঠনিক উপাদানের মধ্যে পরমাণু সংখ্যার দিক দিয়ে ৯৩ শতাংশ হাইড্রোজেন ও ৭ শতাংশ হিলিয়াম আছে। আর গ্যাস অণুসমূহের ভগ্নাংশের দিক দিয়ে ৮৬ শতাংশ হাইড্রোজেন এবং ১৩ শতাংশ হিলিয়াম। হিলিয়াম পরমাণুর ভর যেহেতু হাইড্রোজেন পরমাণুর ভরের চারগুণ সেহেতু বিভিন্ন পরমাণুর ভরের অনুপাত বিবেচনায় আনা হলে শতকরা পরিমাণটি পরিবর্তিত হয়। সে হিসাবে বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের গাঠনিক উপাদানের অনুপাতটি দাঁড়ায় ৭৫ শতাংশ হাইড্রোজেন, ২৪ শতাংশ হিলিয়াম এবং বাকি ১ শতাংশ অন্যান্য মৌল। অন্যদিকে অভ্যন্তরভাগ খানিকটা ঘন। এ অংশে রয়েছে ৭১ শতাংশ হাইড্রোজেন, ২৪ শতাংশ হিলিয়াম এবং ৫ শতাংশ অন্যান্য মৌল। বৃহস্পতির ৬৩টি নামকরণকৃত উপগ্রহ রয়েছে– (১) মেটিস (২) অ্যাডরাস্টে (৩) অ্যামালথে (৪) থিব (৫) আয়ো (৬) ইউরোপা (৭) গ্যানিমেড (৮) ক্যালিস্টো (৯) থেমিস্টো (১০) লেডা (১১) হিমালিয়া (১২) লিসিথে (১৩) এলারা (১৪) এস/২০০০ জে ১১ (১৫) কার্পো (১৬) এস/২০০৩ জে ১২ (১৭) ইউপপারি (১৮) এস/২০০৩ জে ৩ (১৯) এস/২০০৩ জে ১৮ (২০) থেলজিনো (২১) ইউয়ান্থে (২২) হেলিকে (২৩) ওর্থোসাই (২৪) লোকাস্টে (২৫) এস/২০০৩ জে ১৬ (২৬) প্র্যাক্সিডাইক (২৭) হার্পালাইক (২৮) মিরিনেমে (২৯) হারমিপ্পে (৩০)। থাইয়োনি (৩১) আনাকে (৩২) হার্সে (৩৩) অ্যাল্টনে (৩৪) কেল (৩৫) টাইগেটে (৩৬) এস/২০০৩ জে ১৯ (৩৭) চালডেনে (৩৮) এস/২০০৩ জে ১৫ (৩৯) এস/২০০৩ জে ১০ (৪০) এস/২০০৩ জে ২৩ (৪১) এরিনোম (৪২) এওয়েডে (৪৩) ক্যালিচোরে (৪৪) ক্যালাইক (৪৫) কারমে বা কার্মে (৪৬) ক্যালিরহ (৪৭) ইউরিডোম (৪৮) প্যাসিথি (৪৯) কোর (৫০) সাইলিন (৫১) ইউকেল্যাড (৫২) এস/২০০৩ জে ১৪ (৫৩) প্যাসিফাই (৫৪) হেজেমোনি (৫৫) আর্কে (৫৬) আইসোনো (৫৭) এস/২০০৩ জে ৯ (৫৮) এস/২০০৩ জে ৫ (৫৯) সিনোপে (৬০) স্পোন্ডে (৬১) অটোনো (৬২) মেগাক্লাইট (৬৩) এস/২০০৩ জে ২। বৃহস্পতিকে বশে রাখার জন্য পীত পোখরাজ (রত্ন Topaj বা Sapphire) বা ইয়োলো টোপাজ (উপরত্ন) সোনা (ধাতু) বা ব্ৰহ্মষষ্ঠী (মূল) বা তারা (কবজ) ৫ মুখী (রুদ্রাক্ষ) জ্যোতিষীরা নিদান দিয়ে থাকেন।