কেন্দ্রভাগের সংযোজন বিক্রিয়া একটি আত্মসংশোধনযোগ্য সাম্যাবস্থায় আছে। বিক্রিয়ার হার যদি একটু বেড়ে যায় তাহলে কেন্দ্রভাগ উত্তপ্ত হয়ে সম্প্রসারিত হতে শুরু করে, এতে গ্যাসের ঘনত্ব কমে যায়, বিক্রিয়া হারও কমে যায়। আবার বিক্রিয়ার হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে কেন্দ্রভাগ সামান্য সংকুচিত হয়ে গ্যাসের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে বিক্রিয়ার হার আবার বেড়ে যায়। এভাবেই সাম্যাবস্থা রক্ষিত হয়। বিক্রিয়া যেসব উচ্চ শক্তির গামা রশ্মি উৎপন্ন হয় তারা বিকিরিত হওয়ার মাত্র কয়েক মিলিমিটারের মধ্যেই সৌর প্লাজমা দ্বারা আবার শোষিত হয়, এরপর সামান্য নিম্ন শক্তিতে আবার বিকিরিত হয়। এভাবে বিকিরিণ-শোষণের খেলা চলতেই থাকে। এজন্যই সূর্যের কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে শক্তি পৌঁছোতে অনেক সময় লাগে। কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে ফোটনের আসতে প্রায় ১০,০০০ থেকে ১৭০,০০০ বছর লাগে বলে অনুমান করা হচ্ছে। পৃষ্ঠমুখী যাত্রার পথে ফোটন পরিচলন অঞ্চল পার হয়ে শেষে আলোকমণ্ডলে পৌঁছোয়, এই স্তর পেরোলেই অবারিত মহাশূন্য, যাতে দৃশ্যমান আলো হিসাবে ফোটনগুলি ছড়িয়ে পড়ে। কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতিটি রশ্মি সূর্য থেকে পালানোর পূর্বে কয়েক মিলিয়ন দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ফোটনে রূপান্তরিত হয়। সংযোজন বিক্রিয়া গামা রশ্মির পাশাপাশি নিউট্রিনোও উৎপন্ন হয়, কিন্তু গামা রশ্মির মতো তারা পদার্থের সঙ্গে এত মিথস্ক্রিয়া করে না, আসলে মিথস্ক্রিয়া করে না বললেই চলে। সুতরাং উৎপাদিত নিউট্রিনোর প্রায় সবগুলিই তৎক্ষণাৎ সূর্য থেকে পালাতে সক্ষম হয়। অনেক বছর ধরে সূর্য থেকে যে পরিমাণ নিউট্রিনো পাওয়ার কথা তার চেয়ে প্রায় ৩ গুণ কম পাওয়া যাচ্ছিল। এই সমস্যার নাম দেয়া হয়েছিল সৌর নিউট্রিনো সমস্যা। কিন্তু ২০০১ সালে নিউট্রিনো স্পন্দন আবিষ্কৃত হওয়ার পর এর সমাধান হয়েছে। আসলে সূর্য থেকে অনেক নিউট্রিনো আসে, কিন্তু পৃথিবীতে দুরবিনের মাধ্যমে আমরা মাত্র ৩ ভাগের ২ ভাগ নিউট্রিনো সনাক্ত করতে পারি, কারণ পৃথিবীতে আসতে আসতে নিউট্রিনোগুলো স্বাদ পাল্টায়।
সূর্যের বয়স বের করার কোনো সরাসরি উপায় না-থাকলেও পরোক্ষভাবে তা করা হয়েছে। যেমন পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন প্রস্তর ও উল্কাপিণ্ডের বয়স হচ্ছে ৪৬০ কোটি বৎসর। ধারণা করা হয়, সমগ্র সৌরজগতের সৃষ্টি একই সময়ে। সেক্ষেত্রে সূর্যেরও বয়স হয় একই। সূর্যের ভরের শতকরা ৭৪ ভাগই হাইড্রোজেন, বাকি অংশের মধ্যে ২৫% হিলিয়াম। এছাড়াও আছে উচ্চ ভরসম্পন্ন কিছু বিরল মৌলিক পদার্থ। সূর্যের নাক্ষত্রিক শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এর শ্রেণি হচ্ছে জি২ভি (G2v)। “জি২’ দ্বারা বোঝায় এর পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি K দ্বারা বোঝায় এর বর্ণ সাদা, অবশ্য পৃথিবীর পরিবেশে বিচ্ছুরণের কারণে এর বর্ণ হলুদ দেখায়। এর বর্ণালি রেখা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তাতে আয়নিত ও নিষ্ক্রীয় উভয় ধরনের ধাতুর বর্ণালি রয়েছে, এছাড়াও রয়েছে খুব দূর্বল হাইড্রোজেন রেখা। V-বর্ণটি দ্বারা বোঝায়, অন্যান্য অধিকাংশ তারার মতোই সূর্য একটি প্রধান ধারার তারা। অর্থাৎ সূর্য তার প্রয়োজনীয় শক্তি হাইড্রোজেন কেন্দ্রীনকে কেন্দ্রীন সংযোজন প্রক্রিয়ায় হিলিয়াম কেন্দ্রীনে পরিণত করার মাধ্যমে উৎপাদন করে। এছাড়া প্রধান ধারার তারায় hydrostatic balance লক্ষ করা যায়, তথা এরা সম্প্রসারিত বা সংকুচিত হয় না। আমাদের ছায়াপথে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি G2 শ্রেণির তারা রয়েছে। সূর্যের সমগ্র আকারের লগারিদমভিত্তিক বিন্যাসের কারণে এই ছায়াপথের ৮৫% তারার চেয়ে এর উজ্জ্বলতা বেশি। অবশ্য আমাদের আকাশগঙ্গার অনেকগুলি তারাই লাল বামন পর্যায়ে রয়েছে। সূর্যের অবস্থান আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে ২৫,০০০– ২৮,০০০ আলোক বর্ষ, আর এই দূরত্বে থেকেই এটি অবিরত ছায়াপথের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে। একবার কেন্দ্রের চারদিক দিয়ে সমগ্র পথ ঘুরে আসতে সূর্যের সময় লাগে ২২৫– ২৫০ মিলিয়ন বছর। এর কক্ষপথীয় দ্রুতি ২১৭ কিমি/সে; এ থেকে দেখা যায় সূর্য ১,৪০০ বছরে এক আলোক বর্ষ দূরত্ব এবং ৮ দিনে এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক (AU) দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। সূর্য একটি তৃতীয় প্রজন্মের তারা, কাছাকাছি কোনো একটি অতি নব তারা থেকে উদ্ভূত অভিঘাত তরঙ্গ এর উৎপত্তিতে একটি চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করেছিল। পুরো সৌরজগতে স্বর্ণ বা ইউরেনিয়ামের মতো ভারী মৌলসমূহের প্রাচুর্য লক্ষ করে চালিকাশক্তি হিসাবে এই ঘটনাটি প্রস্তাব করা হয়েছে। খুব সম্ভবত একটি অতি নব তারার বিবর্তনের সময় ক্রিয়াশীল endergonic কেন্দ্রীন বিক্রিয়া অথবা দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি বৃহৎ তারার অভ্যন্তরে নিউট্রন শোষণের ফলে উদ্ভূত ট্রান্স্যুটেশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই মৌলসমূহ সৃষ্টি হয়েছে। এই সূর্যকে বশে রাখার জন্য জ্যোতিষীরা চুনি (রত্ন Ruby) বা তামা/সোনা (ধাতু) বা স্টার রুবি (উপরত্ন) বা বিল্বমূল (মূল) বা মাতঙ্গী (কবচ) বা ১ মুখী/১০ মুখী রুদ্রাক্ষ) ধারণ করার নিদান দিয়ে থাকেন।