তিল বা ফ্রিকেলস সাধারণত দুই ধরনের হয়–
(১) এফিলাইডস এরা সমতল এবং লালচে বাদামি রঙের হয়ে থাকে। মূলত গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় এবং শীত এলেই চলে যায়। এই রকমের ফ্রিকেলস বংশগত হতে পারে।
(২) লেনটিজাইন্স লেনটিজাইন্স সম্ভবত ছোটো ছোটো ট্যানের দাগের মতো বাদামি বা কালো রঙের হতে দেখা যায়। এ ধরনের তিল এফিলাইডস থেকেও গাঢ় রঙের হয়। আর শীতকালে চলেও যায় না। সারা বছর ব্যাপী এটি আপনার সুন্দর ত্বকে রাজত্ব করে বেড়ায়। এটিও অনেকটা বংশগত সমস্যা।
ফ্রিকেলস প্রধানত কালো বা বাদামি দাগ যা মুখের ত্বকেই বেশি হয়ে থাকে, বিশেষ করে নাকের দুই পাশের জায়গাগুলিতে। ফর্সা বা ফ্যাকাসে ত্বক এতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। রোদের আলোতে ফ্রিকেলস আরও স্পষ্ট ও তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর আসল কারণ জেনিটিকাল। কারও পরিবারে বাবা-মা দুই জনের তিল থাকলে তার হওয়ার সম্ভবনা ৮০ %। আর যে-কোনো একজনের থাকলেও এ মাত্রা ৬০ থেকে ৬৫ %। রোদ ফ্রিকেলসের প্রধান শত্রু। অতিরিক্ত সূর্য রশ্মিতে ঘোরাঘুরির ফলেও হতে পারে। অনেকে আছেন গাড়িতে চলাফেরা করেও ফ্রিকেলস কবলিত হন এবং ভাবেন গাড়িতে থাকার কারণে তাঁর ত্বক হয়তো সূর্যরশ্মির দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। এটা ভুল ধারণা। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে খুব সহজেই সূর্যরশ্মি পৌঁছে যেতে পারে আপনার ত্বকে এবং তৈরি করতে পারে ফ্রিকেলস।
এই তিল বা ফ্রিকেলস শরীর থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব, প্রয়োজন হলে। মুখের অতিরিক্ত তিল দূর করার কতকগুলি উপায় —
(১) প্রতিদিন টক দই ব্যবহার করুন। এটি ধুয়ে ফেলবেন না, ময়েশ্চারাইজারের মতো করে লাগান এবং রেখে দিন ত্বকে।
(২) লেবুর রসে যদি আপনার এলার্জি না থাকে তবে নিয়মিত লেবুর রস লাগান। দিনে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করুন। দ্রুত ফল পাবেন।
(৩) মৌসুমি ফল ও সবজি দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন। এতে থাকতে পারে আলু, শশা, গাজর, লাউ, বাঁধাকপি, এপ্রিকট, স্ট্রবেরি, টমেটো ইত্যাদি।
(৪) দুধ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন।
(৫) মধু সামান্য গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালেও উপকার পাবেন।
(৬) পার্সলি রসের সঙ্গে লেবুর রস, কমলার রস এবং গাজরের রস মিশিয়ে নিন সমান পরিমাণে। এটি ব্যবহার করতে পারেন আপনার রেগুলার ক্রিম ব্যবহার করার ঠিক আগে। এতে ফ্রিকেলস দেখা যাবে না।
(৭) চিনি ও লেবুর রসের স্ক্রাব ভালো কাজে দেয়।
(৮) কাঁচা হলুদের রস ও তিলের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। জল দিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে আক্রান্ত জায়গায় লাগান।
(৯) নিয়মিত তরমুজের রস ব্যবহারে ফ্রিকেলসের দাগ হালকা হয় অনেকটাই।
অতিরিক্ত তৈলাক্ত থাকা, বয়সের প্রভাব, রোদে পোড়া, ড্রাগ নেওয়া, হরমোনের প্রভাব বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মুখের ত্বকে কালো বা ফ্যাকাশে অগণিত তিল দেখা যায়। এর কোনোটি সামান্য উঁচু হয়, আবার কোনোটি চামড়ার উপর অযাচিত তিলের রং ধরে। এই স্কিন পিগমেন্টেশন তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। লোমকূপের ফাঁকে ফাঁকে তেল জমে থেকে একসময় সমস্যাটি হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে নিজেই নিতে পারেন। আরও কয়েকটি কার্যকরী ব্যবস্থার মাধ্যমে। শিখে নেওয়া যাক, প্রাকৃতিকভাবে স্কিন পিগমেন্টেশন সারিয়ে তোলার সহজ উপায়।
(১) টমেটো মাস্ক; এক চামচ পাকা টমেটোর রসের সঙ্গে এক চামচ ভেজানো ওটস ও আধা চামচ টকদই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে হালকা মশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। টমেটোর রস পিগমেন্টেশনের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত কাজ করে থাকে। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ দিন নিয়মিত ব্যাবহার করলে দ্রুত পিগমেন্টেশন দূর হবে।
(২) হলুদের মাস্ক : রোদে পোড়ার জন্য যে তৈরি পিগমেন্টেশন সারাতে হলুদ গুড়ো অনেক উপকারী। এক টেবিল চামচ হলুদ গুড়োর সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি দিনেও ব্যাবহার করা যাবে। কিন্তু এটা লাগিয়ে কখনো রোদে মুখ শুকানো যাবে না, এতে করে স্কিন কালো হয়ে যেতে পারে।
(৩) এলোভেরা জেল : শুধু এলোভেরা জেল সম্পূর্ণ মুখে ৩০ মিনিট অথবা সারারাত লাগিয়ে রাখুন। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা লাগানোর ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। যে-কোনো ধরনের পিগমেন্টেশনের জন্য এলোভেরা জেল খুবই উপকারী। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি প্রতিদিন রাতে ব্যাবহার করতে পারেন।
(৪) কমলার মাস্ক : স্কিন পিগমেন্টেশন থেকে মুক্তি পেতে আরেকটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি হচ্ছে কমলার রস। এক্ষেত্রে ১ চামচ কমলার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ও আধা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। ফ্রেশ কমলার রশ না-পাওয়া গেলে কমলার শুকনো খোসা গুড়ো করেও এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করা যায়। এটা সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
তিল বিশ্বাসীরা এবার নিশ্চয় খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন! ভাবছেন তিল ভ্যানিশ করে দিলে কী হবে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ? আপনি ভাগ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেই পারেন, কিন্তু আমি ভাবব গবেষকদের নিদান। ব্রিটেনের প্রায় তিন হাজার জনের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, তিল বা আঁচিলের যে-কোনো অস্বাভাবিকতাই ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। গবেষকদের মতে, শরীরে তিল বা আঁচিলের সংখ্যা থেকে ত্বকের ক্যান্সারের বিষয়ে ধারণা করা যায়। কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা প্রায় আট বছর ধরে নারীদের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন এবং সেসব নারীদের ত্বকের ধরন, তিল ও আঁচিলের সংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করেন। এর পাশাপাশি ত্বকের বিশেষ এক ধরনের ক্যানসার যেটিকে মেলানোমা বলা হয় ওই মেলানোমায় আক্রান্ত চারপোজন নারী ও পুরুষের ওপর গবেষণা চালান গবেষক দল। গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, যেসব নারীর ডান হাতে সাতটির বেশি তিল বা আঁচিল রয়েছে, তাদের ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। আর যাদের ডান হাতে ১১টির বেশি তিল বা আঁচিল আছে এবং সারা শরীরে একশোটির বেশি তিল বা আঁচিল আছে, তাদের মেলানোমার ঝুঁকি অনেক বেশি। গবেষকদের মতে, শরীরে কোনো তিল বা আঁচিল দেখে অস্বাভাবিক মনে হলে বা ব্যথা হলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি কোনো ত্বকের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। প্রয়োজনে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।