(১) কোরানে পারা ৩০, যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য নয়।
(২) কোরানে রুকু ৫৫৮ টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
(৩) সিজদাহ ১৫টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
(৪) মাক্কি সুরা ৮৬, মাদানি সুরা ২৬টি, কোনোটিই ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
(৫) নোকতা ১,০৫,৬৮৪টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
(৬) ‘আল্লাহ’ শব্দটি সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য ধরে নিলেও (আসলে নয়)– রসুল, মোহাম্মদ সা, জিব্রাইল, মানুষ প্রভৃতি অসংখ্য শব্দ আছে যার সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
(৭) বিসমিল্লায় ১৯টি অক্ষর থাকলেও কলেমা তাইয়েবা (“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ..”), কলেমা শাহাদাত, আউজুবিল্লাহ., এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বাক্যের অক্ষর ১৯টি নয়।
(৮) সুরা ৯৬ এর অক্ষর সংখ্যা ৩০৪টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হলেও সুরা ১, ২, ….., এমনকি ১১০ বা অন্য সুরাগুলি অক্ষর সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।
(৯) ১১০ নম্বর সুরায় শব্দের সংখ্যা ১৯টি, বাকি সুরাগুলির শব্দসংখ্যা ১৯ নয়।
৪ সংখ্যা দিয়েও অলৌকিক তত্ত্ব দেওয়া যেতে পারে। দেখুন–
(১) আল্লাহ শব্দটিতে অক্ষর ৪টি।
(২) ৪ নম্বর সুরায় আয়াত ১৭৬ = ৪ x ৪৪ = ১৭৬।
(৩) সুরা এখলাসের আয়াত সংখ্যা ৪।
(৪) সুরা এখলাসের প্রথম আয়াত যেখানে আল্লাহর একত্ব সম্বন্ধে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে (কুলহু আল্লাহু আহাদ), প্রথম আয়াতটিতে শব্দ সংখ্যা ৪টি।
(৫) সুরা এখলাস ১১২ নম্বর সুরা, যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য =
১১২/৪ = ২৮ = ২ + ৮ = ১০ = ১ + ০ = ১ অর্থাৎ আল্লাহ এক।
(৬) কোরানে আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬, যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য।
(৭) আসমানি কিতাবের সংখ্যা ৪টি।
(৮) আসমানি কিতাব নাজিলকৃত রসুল ৪ জন।
(৯) প্রধান ফেরেশতা ৪ জন। অতএব প্রমাণিত হল যে কোরান অলৌকিক এবং এই ৪ সংখ্যাটি একটি অলৌকিক সংখ্যা। প্রকৃতিতেও এরকম ‘অলৌকিক’ সংখ্যার উদাহরণ হাজার হাজার পাওয়া যাবে।
নিউমেরোলজিস্টরা ১ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যার জন্য আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখের ব্যাপারে নিউমেরোলজিস্টদের মতামতও ভিন্ন, স্ববিরোধিতায় ভরপুর। এ ব্যাপারে অবশ্য নিউমেরোলজিস্টদের কোনো ব্যাখ্যা নেই। নিউমেরোলজি বিজ্ঞানের কোনো শর্তকেই তোয়াক্কা করে না। সংখ্যা কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে নিউমেরোলজিস্টরা বলেন –“প্রত্যেকটি সংখ্যার একটি করে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ আছে। সেই তরঙ্গই মানুষের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে”। মনে রাখতে হবে, তড়িৎ ও চুম্বকত্ব পদার্থের দুটি মৌলিক ধর্ম, এটি পদার্থের বিশেষ অবস্থায় প্রকাশ পায়। কিন্তু সংখ্যা কোনো পদার্থ নয়, এটি একটি গাণিতিক ধারণা। অতএব সংখ্যায় তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ থাকার ব্যাপারটা হল একটি লোক ঠকানো উদ্ভট কল্পনা। আমি একজন কমুনিস্ট তথা বামপন্থী
প্রাবন্ধিককে চিনতাম, যার পিতৃদত্ত নাম ছিল জ্যোতির্ময় ঘোষ– তিনি নিউমেরোলজিস্টের পরামর্শে নাম বদলে করলেন জ্যোতি ঘোষ। তিনি পেশায় ফিজিক্সের অধ্যাপক ছিলেন। নামের বানান থেকেই যদি ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তাহলে যে ব্যক্তিরা একাধিক নামেই বিখ্যাত, তাদের ক্ষেত্রে কোন নামটি সঠিক বলে ধরবেন? দেখুন– মানিক, সত্যজিৎ রায়; রীনা, অপর্ণা সেন; রমা, সুচিত্রা সেন; মোহর, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়; বুম্বা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়; সুভাষচন্দ্র বসু, নেতাজি, নেতাজি সুভাষ; গান্ধিজি, বাপুজি, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি; মার্ক টোয়েন, স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স; এপিজে আবদুল কালাম, আবুল ফকির জয়নুলাবউদ্দিন আবদুল কালাম; পিভি নরসিংহ রাও, পামুলাপ্রতি ভেঙ্কটনরসিমহা রাও; পিটি উষা, পিলাভুল্লাকান্দি থেক্কেপরম্বিল উষা; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইত্যাদি। নিউমেরোলজিস্টরা যদি এদের ভাগ্যগণনা করতে নামে তাহলে তো ন্যাজে আর গোবরে হয়ে যাবেন। নাম ভিন্ন, সংখ্যাও ভিন্ন– অতএব ভাগ্যবিচারও ভিন্ন হবে। তাহলে হলটা কী! আর-একটা মোক্ষম উদাহরণ দিয়ে সংখ্যাতত্ত্বের আলোচনা শেষ করব। আডলফ হিটলার, এই ব্যক্তিকে চেনেন না এমন কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি আছেন বলে মনে হয় না। সেই বিশ্বাস হিটলার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক হিটলার– জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে ২০ এপ্রিল। হিটলারের জন্মসংখ্যা হল ২ + ০ + ০ + ৪ + ১ + ৮ + ৮ + ৯ = ৩২ = ৩ + ২ = ৫। নিউমেরোলজিস্টদের বিচারে ৫ জন্মসংখ্যা ব্যক্তিরা দয়া ও ন্যায়নিষ্ঠায় ভরপুর হয়ে থাকেন। ইতিহাস কাঁদবে, না হাসবে?
জ্যোতিষীবাবুরা মানুষের ভাগ্য বলে দেওয়ার জন্য আরও একটি পথ খুঁজে পেয়েছেন। সেই পদ্ধতিটি হল ‘তিল’। আমি আগে কখনো শুনিনি যে মানুষের শরীরে যে তিল দেখতে পাওয়া যায়, সেই তিল দেখে নাকি ভাগ্য বলে দেওয়া যায়। বছর পঁচিশ আগে হাবড়ায় এক জ্যোতিষালয়ে বিশাল গণ্ডগোল এবং জ্যোতিষবাবুকে উত্তমমধ্যম কেলানো। জ্যোতিষীবাবু তাঁর খরিদ্দার এক তরুণীর ডান স্তনে তিল আছে বলে দাবি করেন। তরুণীটি যতই বলে তাঁর ডান স্তনে কোনো তিল নেই, জ্যোতিষবাবু ততই বলতে থাকেন তাঁর ডান স্তনে তিল আছে, থাকতেই হবে। লক্ষণ তাই-ই বলছে। তিনি আরও একবার স্তন খুলে যাচাই করতে বলে। তরুণীটি মেজাজ ঠিক রাখতে না-পারে জ্যোতিষীবাবুর ফর্সা টুকটুকে গালে সপাটে চড় কষিয়ে লাল করে দেয়। চেম্বারে নারীঘটিত গন্ধ পেয়ে বাইরে লোকজনও চলে আসে এবং জ্যোতিষীবাবুর চেম্বার তুলে দেয়। এরপর থেকে তিলের উপর আমারও বেশ আগ্রহ জন্মালো। কারণ আমার শরীরেও যে গোটা কয়েক তিল আছে! বইপত্রও কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করতে হল। যত্তসব!