জ্যোতিষীদের আর-একটি ভাগ্যগণনার পদ্ধতি হল সংখ্যাতত্ত্ব বা নিউমেরোলজি। অনেকে সংখ্যা-জ্যোতিষ বা অংক জ্যোতিষও বলে। তা অংকটা কী? অবশ্য বলার চেষ্টা করব। সংখ্যাতাত্ত্বিক বা জ্যোতিষ মতে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মূহূর্তেই মানুষ নিজেকে, নিজের পরিমণ্ডলকে, সময়কে এককথায় সবকিছুকে একমাত্র সংখ্যা দ্বারাই পরিচিত করে। আর তা করে প্রায় অসচেতন থেকেই। যেমন– ব্যক্তি বা বস্তুর নাম, স্থানের নাম, বিষয়ের নাম বা দিন, তারিখ, সময় ইত্যাদি যা কিছুই বলি না-কেন সব কিছুর মাঝেই লুকিয়ে আছে সংখ্যা। সংখ্যার সেই আধিভৌতিক দিক নিয়েই আলোচনা করে সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা। জগতের সকল কর্মকাণ্ডই সংখ্যা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংখ্যার যে। একটি আধিভৌতিক (Mistrious) ভূমিকা জীবনে ও জগতে আছে। সংখ্যার এই অতিন্দ্রীয় প্রভাবই আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যার (Modern Numerology) আলোচ্য বিষয়।
জ্যোতিষ মতে, সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা বস্তুত জ্যোতিষবিদ্যার চেয়েও প্রাচীন। জগতের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থসমূহে এর উল্লেখ আছে বলে দাবি করেন। বেদ, বাইবেল প্রভৃতিতে যেমন এর উল্লেখ দেখা যায়, তেমনি পবিত্র কোরান শরিফের সুরাগুলিতেও নাকি সংখ্যায়িত লিখন পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়। তাবিজ-কবজ লেখকগণ প্রায়শ সংখ্যায়ন পদ্ধতিতে লিখে থাকেন। সংখ্যাতত্ত্বের আবিষ্কার মানুষকে জ্যোতিষবিদ্যা (Astrology) এবং জ্যোতির্বিদ্যার (Astronomy) প্রতি আকৃষ্ট করেছে। গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাসকে (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮২-৬০৭) আধুনিক সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয়ে থাকে। অবশ্য তারও বহু পূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগেও এই বিদ্যার অনুশীলন হত বলে প্রমান পাওয়া গেছে। জ্যোতিষবিদরা মনে করেন, পিথাগোরাসের অনুসারী ফিলোলাস, নিকোমাকাস ছাড়াও হেরোডোটাস, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ গ্রিক পণ্ডিতগণ, এমনকি আইনস্টাইন সহ অন্যান্য খ্যাতিমান পণ্ডিতগণ এই বিদ্যার অনুশীলন করেছেন। সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে ফলিত জ্যোতিষের (Applied Astrology) সম্পর্ক অতি নিবিড়। ফলিত জ্যোতিষে ১২টি রাশি আছে এবং ৯টি গ্রহ তাদের অধিপতি (Ruling Planet)। অঙ্কের জগতে মৌলিক সংখ্যা ৯টি (১ থেকে ৯)। শূন্য কোনো সংখ্যা নয়, তবে সংখ্যার পাশে বসে তার মান বৃদ্ধি করে মাত্র। তা পৃথিবী (Univers) এর প্রতীক। গাণিতিক অঙ্ক যত বড়ই হোক তার পারস্পরিক যোগফল মৌলিক একক সংখ্যায় রূপান্তর করা যায়। আর এই মৌলিক রূপান্তরই হচ্ছে সংখ্যাতত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয়। যেমন ৯৮৭৬ সংখ্যাটি পরস্পর যোগ করলে হয় ৯ + ৮ + ৭ + ৬ = ৩০। আবার ৩০ কে পরস্পর যোগ করলে হয় ৩ + ০ = ৩। অর্থাৎ যতক্ষণ-না একক সংখ্যায় আসবে ততক্ষণ পরস্পরকে যোগ করতে হবে। এক সময় তা ১ থেকে ৯ এর মধ্যে আসবেই। আর এই ১ থেকে ৯ সংখ্যা হল ৯টি প্রধান গ্রহের আধিভৌতিক বা অতিন্দ্রীয় প্রতিভূ যার প্রভাব মানব জীবনে অপরিসীম।
সংখ্যাতাত্ত্বিকগণ (Numerologist) প্রতিটি ব্যক্তি, বস্তু বা নামকে ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে সংখ্যায়িত করে মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো সংখ্যাতত্ত্বভিত্তিক গণনা পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে ANIRBAN BANDYOPADHYAY নামে। প্রশ্ন দেখা দিতে পারে পৃথিবীতে এত ভাষা থাকতে ইংরেজি ভাষাকে বেছে নেওয়া হল কেন? এ প্রশ্নের উত্তর সংখ্যাতাত্ত্বিকগণই দিয়েছেন, বলছেন– প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রতীকই মূলত কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রাচীন ভাষায় সংখ্যাতত্ত্ব বর্ণিত হলেও আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা ইংরেজিকে বেছে নিয়েছেন এর আন্তর্জাতিক আবেদনের কথা বিবেচনা করেই। কেননা এটি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং পৃথিবীর সকল গোলার্ধে এই ভাষা কমবেশি চর্চা হয়। অপরদিকে অন্যান্য প্রধান ভাষাগুলির আ-কার, ই-কার প্রভৃতি অথবা অক্ষর সংখ্যার প্রাচুর্যে বর্ণমালা অত্যন্ত জটিল। তাই ইংরেজিকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পৃথিবীর আলাদা আলাদা ভাষায় আলাদা আলাদা সংখ্যাতাত্ত্বিক ভাগ্যবিচার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে। কারণ সর্বশেষ যোগফল সংখ্যা একেক রকম হবে। সে ব্যাপারটা হবে বড়োই বিভ্রান্তকর।
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের প্রত্যেকের সংখ্যাগুলি। সংখ্যা দুই প্রকারে নির্ণয় করা যায়– একটি জন্মসংখ্যা, অপরটি নামসংখ্যা। সঠিক জন্মতারিখ জানা থাকলেই শুধু জন্মসংখ্যায় নির্ণয়, নতুবা নামসংখ্যাই ধরতে হবে। জন্মসংখ্যার মতো নামসংখ্যা অতটা ভূমিকা রাখতে পারে না বলে জন্মসংখ্যার গুরুত্বই বেশি। আবার জন্মসংখ্যাও দুই প্রকারের, একটি জন্মদিনের সংখ্যা, অপরটি জন্মতারিখের সংখ্যা। আমরা জানি একক সংখ্যা হল ১ থেকে ৯। শূন্য কোনো সংখ্যা নয়। বাকি সংখ্যাগুলি এই ১ থেকে ৯ এরই পুনরাবৃত্তি শুধু বা যৌগিক সংখ্যা। অতএব পুনরাবৃত্তির সংখ্যাগুলিকে পরস্পর যোগ করে একক সংখ্যায় আনতে হবে যতক্ষণ-না একক সংখ্যায় আসে। যেমন, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ এর জন্মতারিখের সংখ্যা ৭ হল যেভাবে। ২ + ৪ + ১ (জানুয়ারি মাসের সংখ্যা) + ২ + ০ + ১ + ৬ = পরস্পর যোগ করে হয় ১৬। যেহেতু ১৬ কোনো একক সংখ্যা নয়, তাই এটিকেও পরস্পর যোগ করতে হবে। যেমন, ১ + ৭ = ৮। আর জন্মদিনের সংখ্যা ৬ হল ২ আর ৪ এর যোগফল (২ + ৪ = ৬)। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসকে ১ থেকে ১২