(৮) ২০১৫ সাল। কেয়ামতের ঘড়িতে (ডুমসডে ক্লক) পৃথিবী ধ্বংস হতে আর মাত্র তিন মিনিট বাকি রয়েছে –এমনই খবর ছড়িয়ে পড়ল সারা পৃথিবীতে। ওই ঘড়ির কাঁটা তিন মিনিট পার হয়ে মধ্যরাতে, অর্থাৎ ১২টায় পৌঁছোলে মহাপ্রলয়ের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন হবে এ পৃথিবী! একই অবস্থানে রয়েছে কেয়ামতের ঘড়ির কাঁটাটি। সময়টা খুব কম, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এ সময়ের মধ্যে পৃথিবীকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না-নিলে, ঘড়ির কাঁটা পেছনে ফিরিয়ে
আনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে দুটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের দুই বছর পর ১৯৪৭ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সাইন্টিস্ট’ ‘কেয়ামতের ঘড়িটি তৈরি করে। বুলেটিনের পরিচালক পর্ষদ এর দেখভাল করে। এ ঘড়িতে মধ্যরাত হতে যত সময় বাকি, সেটা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র, পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত হুমকির তীব্রতা বিবেচনা করা হয়। মধ্যরাত হওয়ার অর্থ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে ঐশ্বরিক কোনো প্রভাব এখানে বিবেচনা করা হয় না। ঘড়িটির নিয়ন্ত্রণকারীরা জানিয়েছিলেন, ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের দিকে এগিয়ে আসছে, যা মানবজাতির ধ্বংসকে নির্দেশ করে। এটা সত্যিই মানুষের কবর রচনার মতো সংবাদ। বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সাইন্টিস্ট’-এর গবেষক লরন্সে ক্রায়াস বলেছিলেন, “আমরা যদি আমাদের পন্থা পরিবর্তন না করি, তাহলে আমরা মনে করি, মানবজাতি মারাত্মক বিপদের মধ্যে রয়েছে।” ওয়াশিংটন থেকে তিনি ঘোষণা দেন, কার্যকরী পদক্ষেপ এসব হুমকি কমাতে পারে। কিন্তু আমরা যদি সেগুলোকে (হুমকিগুলোকে) স্বীকৃতি দিই, তাহলে সত্যিই আমাদের সেগুলোর মুখোমুখি হতে হবে অচিরেই। ’ ‘বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সাইন্টিস্ট’-এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ঘড়িটি স্থাপনের সময় মহাপ্রলয়ের সাত মিনিট বাকি ছিল। কিন্তু পরে পরমাণু ও মানুষের তৈরি হুমকি মোকাবিলায় বিশ্ব জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ায় এর অবস্থান পিছনে চলে আসে বেশ কয়েকবার। কিন্তু বিশ্বে পরমাণুশক্তির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘কেয়ামতের ঘড়ির কাঁটা ফের সামনের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতে পৌঁছাতে বাকি ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট। কিন্তু ওই বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ পরমাণু অস্ত্র ধ্বংসের ব্যাপারে অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় ঘড়ির কাঁটা এক মিনিট পিছিয়ে চলে আসে। তবে পারমাণবিক অস্ত্রাগার ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে না-পারায় ২০১২ সালে ফের আগের অবস্থায় ফিরে আসে এটি। ২০১৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকীকরণের ফলে ঘড়ির কাঁটা চলে আসে ১১টা ৫৭ মিনিটে। এখনও পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।
(৯) ২১ মে ২০১১ সাল। পৃথিবীর আজই শেষ দিন। কারণ আজই পৃথিবী ধ্বংস হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাদের মতে ২০১১ সালের ২১ মে সন্ধ্যা ৬টায় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। নিউইয়র্কজুড়ে ধর্মযাজক ও ধর্ম প্রচারকরা টি-শার্ট পরে ও ব্যানার-ফেস্টুন, বাইবেল, পোস্টার নিয়ে সমাবেশ করে সবাইকে সতর্ক করছেন। সমাবেশে অংশ নেওয়া ধর্ম প্রচারক ম্যানি বলেন, ‘বাইবেলের বুক অব রেভুলেশন’ অনুসারে ২১ মে সারা বিশ্ব প্রলয়ংকরী এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিশ্বের সব স্থানে একই সময়ে ভূমিকম্পটি আঘাত হানবে কি না সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। কারণ, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সময়ের তারতম্য রয়েছে। তবে তা একই সময়ে সংঘটিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওদিকে বাইবেলের নানা সংখ্যাতাত্ত্বিক বিষয় বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করার পর হারল্ড ক্যাম্পিং (৮৯) পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে এ ভবিষ্যদ্বাণীটি করেছেন। তিনি এর আগেও ১৯৯৪ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তবে সেবার তার গণনা ভুল হয়েছিল বলে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। হারল্ডের অনুসারীরা আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পৃথিবী ধ্বংসের প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর এ ঘটনায় বিশ্বাসীদের দলে যোগ দিয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ক্যাম্পিং শেষ দিনটি তার উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খবর দেখতে আমি টেলিভিশনে চোখ রাখব সেদিন। হারল্ড ক্যাম্পিং ভবিষ্যদ্বাণীর পিছনে কিছু যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। যার মধ্যে আছে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণও। খ্রিস্ট ধর্মানুসারীদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে একটি খণ্ড জেনেসিসে উল্লেখ রয়েছে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৯০ অব্দে নূহের সময়কালে পৃথিবীতে একটি মহাপ্লাবন সংঘটিত হয়েছিল। ঈশ্বর সে সময় নূহকে বলেছিলেন, ৭ দিনে তিনি পৃথিবী ধ্বংস করবেন। এদিকে বাইবেলের অপর একটি খণ্ড ২ পিটার ৩:৮ এ বলা হয়েছে, পৃথিবীর এক হাজার বছর ঈশ্বরের এক দিনের সমান। ক্যাম্পিং এ যুক্তি দেখিয়ে বলেন, মহাপ্লাবনের সময় থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার বছর পার হয়ে গেছে। আর ঈশ্বর ৭ দিনে পৃথিবী ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে হিসাবে ১ হাজার বছর ঈশ্বরের ১ দিনের সমান হলে ৭ হাজার বছর নিশ্চয়ই ৭ দিনের সমান হবে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৯০ অব্দের সঙ্গে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭ হাজার বছর। আরও এক জটিল গণনার হিসাবে হারল্ড ক্যাম্পিং আজই অর্থাৎ ২১ মে ২০১১ সালকেই পৃথিবী ধ্বংসের দিন বলে চিহ্নিত করেন। তবে বহু খ্রিস্টান ধর্মযাজক ও অনুসারীকে তার এ গণনাকে অমূলক বলে দাবি করেছিলেন। এখন ২০২১ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে। ধ্বংস যে। হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!