(২) “The Watchtower Society” এক ধরনের অদ্ভুত সোসাইটি। এরা অনেকবার পৃথিবী ধ্বংসের তারিখ নির্ধারণ করছে। বারবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তবুও নিয়ম করে ভবিষ্যৎ বাণী আওড়াতে কখনো কার্পণ্য করেনি। আর এমন প্ররোচনাকারী সোসাইটিকে মানুষ বিশ্বাস করে এবং মানুষের এই অটুট বিশ্বাসের জন্য সোসাইটিটি আজও টিকে আছে। ১৮৭৪ সাল, ১৯৪১ সালে পৃথিবী ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ করেই। আর বারবার সেই ভবিষ্যৎ বাণী ভণ্ডুল হয়েছে। অবশ্য এখন আর দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে ঘোষণা দেন না, একটু সুর পালটে শুধু “পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে”– এটুকু বলে ছেড়ে দেন। এখন ২০২১ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে। ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(৩) “Heavens Gate’ বা স্বর্গের দরজা বলে পরিচিত এটি এমন একটি সংস্থা, যাঁরা মনে করত পৃথিবীটা সম্পূর্ণ ভিন গ্রহের বাসিন্দা বা এলিয়েন দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এমন কি সরকারের বেশির ভাগ মনুষই নাকি এলিয়েন! তারা মনে করেছিলেন, ১৯৯৭ সালে এক উল্কাকে অনুসরণ করে এলিয়েনরা পৃথিবীতে আসবে এবং পৃথিবীর সমস্ত মানুষদের ক্রীতদাসে পরিণত করবে। এই দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র উপায় হল আত্মহত্যা করা। এইসব ধারণা বিশ্বাস করে শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেছিল সে সময়ে। না, ১৯৯৭ সালে পৃথিবীতে একজন এলিয়েন এসেও একজন মানুষকেও দাস করতে পারেনি। এখন ২০২১ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে। ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(৪) নস্ত্রাদামুস ছিলেন একজন বিখ্যাত গণক, যিনি তাঁর জীবনে অনেক ভবিষ্যৎ বাণী লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি অনেক বড়ো বড়ো ঘটনার ভবিষ্যৎ বাণী আগেই করে দিতেন অনেকে বিশ্বাস করেন। এনার লিপিবদ্ধ হেঁয়ালি পাঠ করে জ্ঞানীরা (?) মর্মোদ্ধার করেছিলেন, ১৯৯৯ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন ২০২১ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে। ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না! নস্ত্রাদামুসের তথাকথিত ভবিষ্যৎ বাণী মুখ থুবড়ে পড়ে।
(৫) ওয়াই টু কে (Y2K) মনে পড়ছে? সালটা তখন ২০০০। ২০০০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এই আশঙ্কা এবং আতঙ্ক নিয়েই জন্ম হল Y2K ধারণা। কোন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এই ভবিষ্যৎ বাণীর ঘোষক ছিলেন মনে পড়ছে না। যেটা মনে পড়ছে সেটা হল তৎকালীন সময়ে কম্পিউটারে ৯৯ সালের পরে পরের সাল, অর্থাৎ ২০০০ সাল উল্লেখ করা ছিল ০০ দিয়ে। অনেকে ধরে নেন ২০০০ সালে পৃথিবীর সব কম্পিউটার আপনা-আপনি অচল হয়ে যাবে। সযত্নে গচ্ছিত রাখা নিউক্লিয়ার বোমাগুলি এই বিগরে যাওয়া কম্পিউটারের জন্য নিক্ষেপিত হতে থাকবে। এই আতঙ্ক এতটাই ছিল যে, সাধারণ মানুষ তো বটেই, খোদ আমেরিকা সরকার খাদ্য মজুতকরণ, অস্তর মজুত, বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, নিউক্লিয়ার বোমা দুর্ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার সরঞ্জাম মজুত, পর্যাপ্ত অর্থ জমিয়ে ফেলা যাতে পরবর্তীতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করা যায় ইত্যাদি। এত শ্রম সবই পণ্ড হল। ২০০০ সাল অতিক্রান্ত হয়ে এখন ২০২১ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে। ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(৬) ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে ধ্বংস হবে পৃথিবী। এমনটাই দাবি ছিল কন্সপিরাসি তাত্ত্বিকদের। তারা দাবি করছেন, তিন মাসের মধ্যেই ধ্বংস হতে চলেছে মানব সভ্যতা। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ হয়ত আমাদের শেষ দিন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে পৃথিবী ধ্বংসের নতুন তথ্য। তাঁদের দাবি, ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মহাকাশে পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে একটি বড়ো গ্রহাণুর। আর এই আঘাতেই শুরু হবে প্রলয়। ধ্বংস হবে পৃথিবীর সাজানো বাগান। পৃথিবী ধ্বংসের এই খবর নাকি আছে পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহের কাছেও ছিল। এই বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য সেইসব দেশের বেশকিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তি ঘর গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। এ বিষয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী লরেন্ত ফ্যাবিয়াস জানান, একটি বড়ো গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত হানতে পারে। এর ধ্বংসযজ্ঞ হবে কল্পনাতীত। তবে এটি পৃথিবীতে আঘাত হানার আগেই এটিকে ভেঙে ছোটো ছোটো টুকরো করে ফেলার চেষ্টা করা হবে, যেন ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়। তিনি আরও জানান, এই গ্রহাণুটি আটলান্টিক মহাসাগরে আঘাত হানতে পারে। তবে এই তথ্য সম্পূর্ণরূপে উড়িয়ে দিয়েছিলেন নাসা। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন– “তাদের কাছে। পৃথিবীর সঙ্গে কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতুর সংঘর্ষ হওয়ার কোন খবর নেই। এমনকী আগামী একশো বছরেও এইরকম কিছু ঘটবে না।” এখন ২০২১ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে। ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(৭) এই তো সেদিনের কথা, ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর– এ পর্যন্ত পৃথিবীর ধ্বংসের শেষতম দিন ঘোষণা হল। দামামা বেজে উঠল সমগ্র পৃথিবী জুড়ে। ফেসবুকের কল্যানে এমন একজন মানুষ ছিল না যে জানেন না। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ সংবাদ ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেল। সেকি তুলকালাম কাণ্ড!!! এ নিয়ে আবার অনেকে কোরান শরিফের সঙ্গে সংখ্যার গুণ/ভাগ করে কত কিছুই-না বানিয়েও ফেলেছিল। এ নিয়ে “২০১২ এবং ইসলাম তথা ইসলাম তথা ১৪৩৩ আরো কিছু অজানা তথ্য” শিরোনামের লেখায় বিস্তর আলোচনাও হল। সব দোষ কিন্তু ওই মায়ানদের। তাদের ক্যালেন্ডার ২০১২ পর্যন্তই ছিল, অর্থাৎ ২০১২ সালের পরে আর কোনো সাল নেই। ২০১২ সালে পৃথিবী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেই বলেই পরের সালগুলি নেই। অবশ্য মায়ানদের এই ভবিষ্যৎ বাণী নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিলই। অতএব এদের ভবিষ্যৎ বাণীও মিথ্যা প্রমাণিত হল।