পাঁচ মিনিটের বেশি লাগল না কুকুরটাকে মারতে। লাশটা ফেলে দিলেন একটা ডোবায়। কাস্তে লুকিয়ে রাখলেন ঝোপের মধ্যে। সাকসেসফুল হল মহড়া।
সেইদিনই সন্ধ্যার সময়ে পোলো গ্রাউন্ড থেকে একই কায়দায় চন্দনবনে এলেন আপনি। খুন হয়ে গেল ললিতমোহন।
হিরের টুকরো ছেলে ললিতমোহন। অকালপক্ক মোটেই নয়। তাই কল্পনাও করতে পারে নি, সাতাশে ডিসেম্বর আধো-আলোয় দূর থেকে যা দেখেছে, যা ভেবেছে তা আগাগোড়া ভুল।
আসল সত্যিটুকু জানতেন শুধু আপনি।
আর জানেন আপনার স্ত্রী মধুমাধবী।
বুকভরা নিঃশ্বাস নিল ইন্দ্রনাথ। কর্নেলের চোখের পাতা বুঝি পড়ছে না। মশাল জ্বলছে তারায় তারায়।
কর্নেল হেব্বাল, নীরস কণ্ঠে ফের বলল ইন্দ্র–আপনি জানতেন ললিত ভুল করছে। তবুও তাকে সরিয়ে দিলেন কারণ স্ত্রীর পাপ মেয়ের ঘাড়ে চাপছে।
সত্যটা একটু আগেই পরিষ্কার হয়ে গেল আপনার বাগানে পা দিতেই। আপনার স্ত্রী কে দেখে মনে হয়েছিল আপনার বড় মেয়ে।
এই একই ভুল করেছিল ললিত।
শুনেছি আপনার স্ত্রী আপনার চাইতে অনেক ছোট। বছর তিরিশ তাঁর বয়স। কেকার বয়স ষোল। দুজনকেই দেখতে প্রায় একরকম।
তা ছাড়া, ওই অবস্থায় আপনার স্ত্রীকে কল্পনা করার মতো পাকা মনও নয় ললিতের।
তাই কিল মারার দৃশ্যকে মারপিটের দৃশ্য বলেই ধরে নিয়েছিল চিরন্তন মিলনদৃশ্য বলে ভাবতে পারেনি।
কর্নেল হেব্বাল, কিছু বলার আছে আপনার?
পেছনে হাত রেখে সটান দাঁড়িয়ে রইলেন কর্নেল।
অনেকক্ষণ পরে বললেন কাঠচেরা গলায়–প্রমাণ কী?
চোখের ইশারা করল ইন্দ্র। বেরিয়ে গেলাম আমি। ফিরে এলাম একটু পরেই। দুজন ধাঙ্গড় টিনের ট্রেতে চাপিয়ে নিয়ে এল একটা মরা লোমশ কুকুর। সারা গায়ে কাটাকুটি। লোম উঠে গেছে। পোকা থুক খুক করছে।
দুর্গন্ধে বমি আসছিল আমারও। অটল রইল শুধু ইন্দ্রনাথ।
বললে–লোমে ঢাকা পড়লেও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তারের ফঁস পাওয়া গেছে। শুধু পাইনি কাস্তেটা। জলে ধুয়ে মাঠেঘাটে ফেলে দিয়েছিলেন বোধহয়। চাষাভুষো লোকে নিয়ে গেছে। তাই না?
কর্নেল নিরুত্তর। যেন, পাথর।
পেছন থেকে ডান হাতটা সামনে নিয়ে এল ইন্দ্রনাথ হাতে একটা রিভলভার। বলল– বংশমর্যাদার চাইতে বড় আপনার কিছুই নেই। পারিবারিক কেলেঙ্কারি গোপন করার জন্যে ললিতকে খুন করেছেন। এবার করুন নিজেকে আমি কথা দিচ্ছি পুলিশ তদন্তে লেখা হবে, আপনি আত্মহত্যা করেছেন–কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাবে না।
কর্নেল নিথর।
ইন্দ্র মেঝের ওপর নামিয়ে রাখল রিভলভার–এ ছাড়া সম্মানজনক পরিত্রাণ আর নেই। বিদায়।
আমাকে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল ইন্দ্রনাথ। বিদেয় হল ধাঙ্গড় দুজন।
এক মিনিট পরেই পিস্তল নির্ঘোষ শোনা গেল ভেতরে।
নারীকণ্ঠে আতীক্ষ্ণ চিৎকার ভেসে এল অন্দরমহল থেকে। ধীরে সুস্থে একটা সিগারেট ধরাল ইন্দ্রনাথ। একমুখ ধোয়া ছেড়ে বললে–আয়।
ঘরের একটিমাত্র সোফায় আড় হয়ে শুয়ে কর্নেল হেব্বাল। ডান হাতটা ঝুলছে বাইরে। হাতের মুঠোয় ৩৮ স্মিথ অ্যান্ড ওয়েসন রিভলভারটা। প্রেমাংশুর রিভলভার
কর্নেলের চোখ বন্ধ। বুকের বাঁদিকে এক ধ্যাবড়া বারুদের দাগ। কিন্তু রক্ত নেই।
সব চাইতে আশ্চর্য–নিঃশ্বাস পড়ছে, বুক উঠছে, নামছে।
জুতো মসমসিয়ে পাশে এসে দাঁড়াল প্রেম।
মধুমাধবী স্বীকার করেছেন। কেকার লিপস্টিক নিজেও মাখতেন, একটু বেশিই লাগাতেন।
জানতাম। মৃদু হাসল ইন্দ্রনাথ।
ঠক করে একটা শব্দ হল। কর্নেলের শিথিল মুঠি থেকে রিভলভারটা গড়িয়ে পড়েছে মেঝেতে।
কুড়িয় নিল প্রেম। হোলস্টারে রেখে বলল তৃপ্ত কণ্ঠে–জ্ঞান নেই দেখছি।
মাথায় জল ঢাল। জোর শক পেয়েছেন।
কিন্তু রক্ত কোথায়? বিমূঢ় স্বর আমার।
বেরোয়নি, কোটরাগত চোখ নাচিয়ে বলল ইন্দ্র–ব্ল্যাঙ্ক কার্টিজ। বারুদ থাকে–গুলি থাকে না।