- বইয়ের নামঃ আ মনস্টার কল্স
- লেখকের নামঃ প্যাট্রিক নেস
- প্রকাশনাঃ গ্রন্থরাজ্য
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, উপন্যাস, রোমাঞ্চকর
আ মনস্টার কল্স
লেখকের কথা
সিয়োভান ডড-এর সাথে আমার কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। আমি তাকে আপনাদের মতোই তার দারুণ বইগুলোর মাধ্যমে চিনি। সেই চারটি চমৎকার প্রাপ্তবয়স্ক উপন্যাসের মাধ্যমে, যার মধ্যে দুটি তিনি বেঁচে থাকতে প্রকাশিত হয়েছিল আর বাকি দুটি তাঁর অকালমৃত্যুর পর। সেগুলো যদি পড়ে না থাকেন, তবে খুব শীঘ্রই পড়ে নেবেন!
এটা তাঁর পঞ্চম বই হতো। তাঁর কাছে চরিত্র, প্রেক্ষাপট আর গল্পের শুরুটা তৈরি ছিল। ছিল না কেবল সময়।
আমাকে যখন তাঁর বইটা শেষ করতে বলা হলো, তখন ইতস্তত করেছিলাম। তাঁর হুবহু নকল করে একটি উপন্যাস লিখতে চাইনি আমি। সেটা তাঁর প্রতি, পাঠকের প্রতি আর সবচেয়ে বেশি এই কাহিনির প্রতি অন্যায় করা হতো। আমার মনে হয় না ভালো একটি রচনা সে-রকম হওয়া উচিত।
কিন্তু ভালো আইডিয়ার একটা গুণ হলো সেটা থেকে অন্য অনেক আইডিয়া জন্ম নিতে পারে। আমি নিজে কিছু ভাবার আগেই সিয়োভানের আইডিয়াগুলো আমার মাথায় নতুন আইডিয়ার উৎপত্তি ঘটায় এবং আমি একটি গল্প বলতে উদ্বুদ্ধ হই। এটা করার জন্যে যে-কোনো লেখকই মুখিয়ে থাকেন।
আমি অনুভব করেছি, এবং করছি, আমাকে যেন একটি ব্যাটন দেওয়া হয়েছে, যেন একজন চমৎকার লেখক আমাকে তাঁর একটি গল্প দিয়ে বলেছেন, ‘যাও। একে নিয়ে অভিযানে বের হও।’ আর আমি তা-ই করেছি। এই কাজটিতে আমি কেবল একটি নিয়ম মেনেছি, আর তা হলো এমন একটি বই লেখা, যেটা সিয়োভান পছন্দ করবেন। অন্য কিছুতে তেমন একটা যায়-আসে না।
আর এখন এই ব্যাটনটা আপনাদেরকে সমর্পণ করছি। লেখকের মৃত্যুর সাথে সাথেই তার লেখনী শেষ হয়ে যায় না। এটা সিভোয়ান আর আমার লেখনী।
অভিযানে নেমে পড়ুন একে নিয়ে।
প্যাট্রিক নেস
লন্ডন, ফেব্রুয়ারি ২০১১
উৎসর্গ
শিভন’কে
.
বলা হয়, তারুণ্য জীবনে মাত্র একবারই আসে। কিন্তু তা কি পর্যাপ্ত সময়ের জন্য আসে না? একজন যতটা বয়ে বেড়াতে পারে তারচেয়েও বেশি সময়ের জন্যই আসে।
–হিলারি ম্যান্টেল, অ্যান এক্সপেরিমেন্ট ইন লাভ
এক দানবের আহ্বান
যেমনটা হয়ে থাকে, দানবটি মাঝরাতেই এলো।
তখন কনর পুরোপুরি সজাগ।
একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে সে। অবশ্য এই দুঃস্বপ্নটা এখন সে প্রায়ই দেখে। দুঃস্বপ্ন জুড়ে থাকে অন্ধকার, বাতাস আর চিৎকার। সেখানে হাজার চেষ্টার পরও তার হাত কোনো কিছু আঁকড়ে ধরতে পারে না। প্রতিবারই স্বপ্নটা শেষ হয়–
‘চলে যাও।’ কনর তার অন্ধকার শোবার ঘরে শুয়ে ফিসফিসিয়ে বললো। হাত নাড়িয়ে দুঃস্বপ্নটা তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। বাস্তবে যেন এমন দুঃস্বপ্ন তাকে তাড়া করতে না পারে।
‘এখনই চলে যাও।’
টেবিলের ওপর ওর মা যে ঘড়ি রেখেছেন, সেটাতে রাত ১২:০৭ বাজে। মধ্যরাত পার হয়ে গেছে ৭ মিনিট আগে। রবিবারের হিসেবে অনেক রাত।
এই দুঃস্বপ্নের কথা সে কাউকে বলেনি। মাকে এখনও জানানো হয়নি। অবশ্যই অন্য কাউকে সে বলতে যাবে না। বাবাকেও ফোনে বলেনি, আর নানুকে বলার তো প্রশ্নই ওঠে না। স্কুলের কাউকেও বলা হয়নি।
দুঃস্বপ্নে তার সাথে কী হয়েছে, সেসব অন্য কারো জানার কোনো মানে নেই।
কনর চোখ পিটপিট করে রুমের চারপাশটায় তাকালো। মনে হচ্ছে কিছু একটা নেই। সে উঠে বসে। দুঃস্বপ্নটা চলে যাচ্ছে। কিন্তু তার সাথে আরও কী যেন চলে যাচ্ছে, সে ঠিক বুঝতে পারছে না। জিনিসটা যে কী…
নিস্তব্ধতায় কান পেতে কিছু শোনার চেষ্টা করলো সে। খালি বাসায় রাতে যেমন শব্দ হয়ে থাকে, সে-সব ছাড়া নতুন কিছু শোনা গেল না। সিঁড়ির নিচ থেকে মাঝেমধ্যে আসা টুকিটাকি শব্দ আর মায়ের রুম থেকে বেডিং-এর শব্দ পাওয়াগেল।
নাহ্, আর কিছু না।
ঠিক তখনই মনে হলো, কেউ একজন তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছে।
কেউ একজন তাকে ডাকছে।
‘কনর।’
আতঙ্ক কনরকে গ্রাস করে ফেললো। পেটের ভেতরটা বারবার মোচড় দিয়ে উঠছে। ওটা কি তার পিছু নিয়েছে? দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে এসেছে?
‘বোকার মতো ভেবো না।’ নিজেকেই বললো সে, ‘এখন তো তুমি আর ছোটো
আ মনস্টার কলস-১১
বাচ্চা না।’
গত মাসেই সে তেরোতে পা দিয়েছে। ছোটো বাচ্চারা দানব দেখতে পারে, ছোটো শিশুরা…
‘কনর।’
আবার! কনর ঢোক গেলে। অক্টোবরের উষ্ণ রাত, তাই জানালা এখনও খোলা । সম্ভবত বাতাসে পর্দা নড়ায় এমন শব্দ…
‘কনর।’
এটা বাতাস হতেই পারে না, কারো কণ্ঠই হবে। কিন্তু কণ্ঠটা তার চেনা কারও না। তার মায়ের গলা এমন না, এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। কণ্ঠটা কোনো মহিলারও না। এক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো তার বাবা বুঝি আমেরিকা থেকে হুট করে চলে এসেছে–
‘কনর।’
না, এটা তার বাবা না। কণ্ঠটা দানবীয়, বুনো আর ভীষণ অশান্ত। বাইরে কাঠ মোচড়ানোর শব্দ পাওয়া গেল। যেন কোনো বিশাল কিছু কাঠের মেঝেতে উঠে দাঁড়িয়েছে।
ওখানে গিয়ে জিনিসটা দেখার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে তার নেই। আবার মনে মনে উঁকি দেওয়ার কৌতূহলও থামাতে পারছে না।
আপাতত সে পুরোপুরি জেগে আছে। গায়ের কাঁথা সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে জানালার কাছে গেল। জোছনার আবছা আলোতে সে বাড়ির পেছন দিকের পাহাড়ের ওপরে থাকা চার্চটা পরিষ্কার দেখতে পায়। চার্চের পাশেই আঁকাবাঁকা পুরোনো ট্রেন- ট্র্যাক। দুটো লোহার লাইন আলোতে চকচক করছে। চাঁদের আলোতে চার্চের নিকটস্থ গোরস্থানটাও দেখা যাচ্ছে। এতদিনে সমাধিফলকগুলোর লেখা সব মুছে গেছে।