- বইয়ের নামঃ ভুতুড়ে বিমান
- লেখকের নামঃ শামসুদ্দীন নওয়াব
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
ভুতুড়ে বিমান
১
আরিব্বাবা, কিশোর, কী আসছে দেখ! রাশেদ চাচা চেঁচিয়ে উঠল। আমাদের সরাসরি সামনে, বিশালদেহী এক জেট প্লেন রকি বীচে এয়ারপোর্টে ল্যাণ্ড করার জন্য আসছে।
গাড়ির পিছনের দিকে বসে আমি। চাচা গাড়ি চালাচ্ছে, মেরি চাচী পাশে বসা। জেটটাকে নেমে এসে কাছের এক রানওয়েতে ল্যাণ্ড করতে দেখলাম।
মার্ক এরকম জেটে করেই আসবে, বলে আমার দিকে চেয়ে মৃদু হাসল চাচী।
মার্ক আমাদের পরিচিত কেউ না। আমার বয়সী এক ছেলে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে আসছে। প্রতি বছর রকি বীচ থেকে একজন ছাত্র বিদেশে যায় আর বিদেশ থেকে একজন ছাত্র এখানে আসে; সারা। বছর কোন একটি পরিবারের সঙ্গে থাকে, স্কুলে ভর্তি হয়। এবার স্বেচ্ছায় এ ধরনের ছাত্রের মেজবান হতে চেয়েছে আমাদের পরিবার।
মার্ক ট্রেনে করে এলে ভাল হত, বাইরের কালিগোলা আঁধারের দিকে চেয়ে মন্তব্য করলাম।
কিশোর, এয়ারপোর্টে তোর কী অসুবিধা? হেসে বলল চাচা।
সব এয়ারপোর্টে তো না, বললাম। শুধু রকি বীচ এয়ারপোর্ট।
আসলে ওই আজগুবী গল্পটা শুনে শুনে তোর মাথাটা বিগড়েছে, বলল চাচা।
আমি আসলে মাথা থেকে হারানো বিমানটার কথা তাড়াতে পারছি না।
গল্পটা আরেকবার বলো না শুনি, বলল চাচা। এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে পড়েছে গাড়ি।
এখন কোন ভূতের গল্প নয়, শাসনের সুরে বলল চাচী। আমরা নতুন ছেলেটাকে নিতে এসেছি। আমি চাই সবাই স্বাভাবিক থাকুক।
চাচী যা-ই বলুক, আমি মাথা থেকে দূর করতে পারলাম না ভুতুড়ে গল্পটা। বহু বছর আগের কথা। রকি বীচে এয়ারপোর্ট বানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এক বছর লেগে যায় কাজ শেষ করতে। অবশেষে জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই গোলমালের শুরু।
এখানে তখন ক্যাপ্টেন স্টার নামে এক লোক থাকতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইউএস আর্মি পাইলট ছিলেন ভদ্রলোক। তিনি ঘোষণা দেন, রকি বীচ এয়ারপোর্টে তিনিই প্রথম বিমান ল্যাণ্ড করাবেন।
কর্তৃপক্ষ তাকে বারণ করে। কেননা ক্যাপ্টেন স্টারের বয়স হয়েছে, কাজটা বিপজ্জনক এবং তাঁর বৈধ কাগজপত্রও নেই।
প্রথম যেদিন এয়ারপোর্ট চালু হয় সেদিন আবহাওয়া ছিল ভারী আর কুয়াশাচ্ছন্ন। এয়ারপোর্টের প্রতিটা ফ্লাইটই বিলম্বিত হয়।
হঠাই টাওয়ারের ফ্লাইট কন্ট্রোলাররা একটা শব্দ শোনেন। আর তাঁদের রাডারে ধরা পড়ে একটা ব্লিপ। ল্যাণ্ডিঙের জন্য একটা প্লেন আসছে!
মুহূর্তের জন্য মেঘমুক্ত হয় আকাশ। ক্যাপ্টেন স্টার তার প্রথম। বিশ্বযুদ্ধের পুরানো বিমান নিয়ে উড়ে আসছেন।
ঠিক এ সময় আরেক গুচ্ছ কুয়াশাচ্ছন্ন মেঘের মধ্যে ঢুকে যায় বিমান। ক্যাপ্টেন স্টারকে এরপর আর কেউ দেখেনি। রাডার থেকে উধাও হয়ে যায় তাঁর বিমান। তাঁকে কিংবা বিমানটাকে আর কেউ কোনদিন দেখতে পায়নি।
আবহাওয়া পরিষ্কার হলে গোটা এলাকা তন্নতন্ন করে খোঁজা হয়। বিমান দুর্ঘটনার কোন চিহ্ন নেই। স্রেফ কুয়াশায় মিলিয়ে গেছে যেন ওটা।
তার পর থেকে গুজব রটে গেছে, ভুতুড়ে বিমান নিয়ে এখনও উড়ে বেড়াচ্ছেন ক্যাপ্টেন স্টার। এখনও ল্যাণ্ড করার এবং তাঁর কথা রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
অ্যাটেনশন প্লিজ! ফ্লাইট নম্বর ৩৪৫। দুমিনিটের মধ্যে ল্যাণ্ড করবে, ঘোষণা শোনা গেল পিএ সিস্টেম থেকে। সচকিত হয়ে উঠলাম আমি। মার্ক এই ফ্লাইটেই আসছে।
আমরা এখন লাউঞ্জ-টার্মিনাল এরিয়াতে দাঁড়িয়ে। চাচা-চাচী ফ্লাইট কাউন্টারে গেছে শিডিউল বোর্ড দেখতে।
হঠাৎই আকাশে বাতি জ্বলতে দেখলাম, এয়ারপোর্টের উদ্দেশে আসছে। নিশ্চয়ই মার্কের বিমানে! ·
লাউঞ্জের শেষ প্রান্তে সরে গেলাম, বিমানটাকে যাতে ভাল মত রানওয়েতে নামতে দেখতে পারি। আমিই শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছি ওখানে। আর সবাই টার্মিনালের মাঝখানে।
অন্ধকার আকাশে মেঘ নেই দেখে স্বস্তি পেলাম। মার্কের বিমান মেঘের কিংবা কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার ভয় নেই।
এসময় সহসা বিশাল এক কুয়াশা কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠল, ঠিক আগুয়ান বিমানটার পথের উপরে। বিমানটা উড়ে এসে ঢুকে পড়ল কুয়াশার মধ্যে। তারপর অদৃশ্য হয়ে গেল!
২
ঘুরেই এক দৌড়ে টার্মিনালের মাঝখানে চলে গেলাম। চাচা-চাচীকে খুঁজছি।
চাচা! চাচী! চেঁচালাম। প্যাসেঞ্জার এন্ট্রি ডোরের পাশে দ তারা।
কীরে, কী হয়েছে? চাচা জানতে চাইল।
প্লেন! মার্কের প্লেনটা উধাও হয়ে গেছে! কুয়াশার মধ্যে মিলিয়ে গেছে!
পরস্পর মুখ তাকাতাকি করল চাচা-চাচী।
তোর কল্পনার ঘোড়াকে লাগাম পরা, বলল চাচী। কাছের এক জানালার দিকে আঙুল তাক করল। দেখ। হেসে বলল।
জানালা দিয়ে চাইলাম। ওই তো, বিশালদেহী জেট প্লেনটা। ল্যাণ্ড করেছে, এখন ট্যাক্সিইং করে কাছের এক গেটের সামনে থেমে দাঁড়াচ্ছে।
কিন্তু আমি কুয়াশা দেখেছি! বললাম। ভাগ্য ভাল ক্র্যাশ করেনি! জানালার সামনে এসে দাঁড়াল চাচা। চেয়ে রইল আকাশের দিকে।
কোথায়? কোন মেঘ বা কুয়াশা তো দেখতে পাচ্ছি না। পরিষ্কার, চাঁদ-তারার রাত।
প্যাসেঞ্জাররা নেমে আসছে বিমান থেকে। টার্মিনাল সরগরম হয়ে উঠছে। আমাদের কুয়াশা সংক্রান্ত আলোচনার ওখানেই ইতি। চাচা-চাচী একটা সাইন তুলে ধরল। ওতে লেখা: স্বাগতম, মার্ক! পাশা পরিবার। থেকে।