- বইয়ের নামঃ মঞ্চভীতি
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
মঞ্চভীতি
০১.
এই কাজও কোরো না, কিশোর! সাবধান করল মুসা আমান। টেবিলের ওপাশ থেকে তাকিয়ে আছে।
খপ করে কিশোরের হাত চেপে ধরল জিনা, মরবে!
ডাক্তার আছে নাকি এখানে? বলল রবিন।
ভিড়ের দিকে তাকাল সে। রকি বীচ শপিং মলের একটা খাবারের দোকানে রয়েছে ওরা। রঙিন নিওন আলোয় রাঙা মুখ। এককোণে তাকের অনেক ওপরে চলছে একটা টেলিভিশন, ভিসিআরে পুরানো ছবি দেখানো হচ্ছে তাতে। দেখছে আর হাসছে লোকে।
একটু ভুরু উঁচু করল কিশোর। মুসা আর রবিনের দিকে তাকাচ্ছে না। গরমের ছুটি শেষ হয়ে এসেছে। আবার শুরু হবে স্কুল, তার আগেই শরীরটাকে যতটা সম্ভব ঠিক করে নিতে চায়।
শীতল সয়া বারগারের চারপাশ দিয়ে বেরিয়ে থাকা আলফালফার উঁটাগুলো মুখে ঠাসল কিশোর। এখানকার স্পেশাল খাবার এটা। তবে সে কেবল একলাই এর অর্ডার দিয়েছে। ইদানীং হঠাৎ করে আবার মোটা হতে শুরু করেছে, ছোটবেলার সেই রোগ। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সে। শরীর ফুলিয়ে ঢোল হতে আর চায় না। সেটা ঠেকানোর জন্যে যত কষ্ট হোক করবে। আদা আর ভাটুইয়ের মূলের রস বেরিয়ে এল বনরুটির ফাঁকের ভেতর থেকে। ফোঁটা পড়ল হাতে। দেখেও দেখল না সে। যত যাই বলো, এ জিনিস আমি খাবই। মজাও লাগবে।
কিন্তু মজা যে কি লাগছে, সেটা তার মুখের বিকৃত ভঙ্গি দেখেই আন্দাজ করতে কষ্ট হচ্ছে না। তবে কামড়ে নেয়া অংশটুকু চিবিয়ে গিলে ফেলে আবার কামড় বসাল।
ও তো সত্যিই খেয়ে ফেলছে। প্রায় ফিসফিস করে বলল রবিন।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল মুসা, এ ভাবে ডায়েট কন্ট্রোল করে বাঁচার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল। প্লেট থেকে বীফ বারগারটা তুলে নিয়েও নামিয়ে রাখল আবার। আমার খিদে নষ্ট করে দিলে!
মুসা আমানের খিদে নষ্ট? চিবানোর ফাঁকে বলল কিশোর। তাড়াতাড়ি গিলে নিয়ে আবার কামড় দিল। কই, আমার তো খেতে খারাপ লাগছে না?
শুকনো কাঠ খেতে ভালও লাগে না, খারাপও লাগে না, মন্তব্য করল রবিন।
জবাব দিতে যাচ্ছিল কিশোর, হাসির হুল্লোড় বাধা দিল তাকে। ফিরে তাকিয়ে দেখল গোল একটা টেবিল ঘিরে বসে আছে জনাদশেক লোক, টিভির দিকে চেয়ে হাসছে। মঞ্চভীতি
মুহূর্তে মুখের ভার বদলে গেল কিশোরের, সর্বনাশ…
কি হয়েছে? জানতে চাইল জিনা।
জবাব দিল না কিশোর। চুপ করে তাকিয়ে আছে।
টিভির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল রবিন, ও, এই ব্যাপার। পাগল সংঘ ছবিটা দেখাচ্ছে, যেটাতে অভিনয় করে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল কিশোর।
কুঁকড়ে গেছে কিশোর। অনেক বছর আগে নিজের শৈশবের শরীর দেখে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। তাড়াতাড়ি কামড় বসাল বিস্বাদ বারগারে।
পর্দায় দেখা যাচ্ছে দশ বছরের একটা ছেলে ঢুকল ঘরে। মুখে শয়তানি হাসি। একটা চেয়ারে আঠা লাগিয়ে দিচ্ছে, ওটাতেই বসবে ছোট্ট কিশোর।
কি ঘটবে আন্দাজ করেই হাসতে লাগল দর্শকরা।
হাতের বাকি বারগারটুকু প্লেটে ফেলে দিল কিলোর। আর বসতে পারছি না। চলো, উঠি।
এক সেকেন্ড, কোণের একটা টেবিল দেখাল রবিন, জাহির বিলিয়ার্ডও এসেছে। আমার বস লজ বার্টলেটের নতুন একটা ব্যান্ডের ড্রামার। ভাল লোক। উঠে দাঁড়াল সে। চলো, পরিচয় করিয়ে দিই।
সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াল মুসা আর জিনা। কিন্তু কিশোরের তেমন ইচ্ছে নেই। সে এখন এখান থেকে পালাতে পারলে বাঁচে।
শেষে জোর করে মন শক্ত করে নিয়ে উঠল সে। অনেক দিন হয়ে গেছে, এখন আর তাকে চিনতে পারবে না কেউ।
অভিনয় তখনও দারুণ করতে! বলল লাল-চুল এক লোক।
চমকে গেল কিশোর। চিনে ফেলল নাকি? কিন্তু না, তার দিকে নয়, অন্য দিকে তাকিয়ে আছে লোকটা।
জাহির, কেমন আছেন? আন্তরিকতা দেখিয়ে বলল রবিন।
ফিরে তাকাল লোকটা। ও, রবিন। বোসো। আমার বন্ধু পিটারের অভিনয় দেখছি।
গোয়েন্দাদের দিকে তাকাল তার পাশে বসা বন্ধু।
জিনা বলে উঠল, আপনাকে তো চিনি! কাল রাতে টিভিতে সাক্ষাত্তার দিয়েছেন। গারবার থিয়েটারে নতুন মিউজিক্যালটার স্টার আপনি।
মাথা ঝাঁকাল পিটার, উজ্জ্বল হলো চোখ, ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড! হ্যাঁ, ওটারই…
গোল টেবিলে বসা দর্শকদের হাসিতে চাপা পড়ে গেল তার কথা। ফিরে তাকাল পিটার। টিভির দিকে তাকিয়ে বলল, ওই যে, ওটাতেও অভিনয় করেছি আমি সেই ছোটবেলায় শুরু করেছিলাম, কিছুতেই আর ছাড়তে পারলাম না।
টিভির দিকে তাকাল কিশোর। চেয়ারের আঠায় তার প্যান্ট আটকে গেছে। টেনে তুলতে পারছে না। অসহায় করুণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে চারপাশে, সাহায্যের আশায়। হাসি হাসি মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে দশ বছরের ছেলেটা, ওর দুর্দশা দেখে খুব মজা পাচ্ছে।
লাউডস্পীকার! নিজের অজান্তেই মুখ ফসকে বেরিয়ে এল কিশোরের।
ঝট করে তার দিকে ঘুরে গেল পিটার।
জাহির বলল, লাউডস্পীকার?
ছবিতে ওই নামই ছিল তার, বলতে বাধ্য হলো কিশোর। কণ্ঠস্বরটা ছিল খুব জোরাল। মাইকও বলত কেউ কেউ।
স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে পিটার, তুমি জানলে কি করে?
বোকার মত ফাঁস করে দিয়েছে বলে রাগ হচ্ছে কিশোরের। আর পিছিয়ে আসার উপায় নেই। দেখল, অনেকেই ফিরে তাকিয়েছে ওর দিকে। কেশে গলা পরিষ্কার করে বলল, ওই যে চেয়ারে আটকে আছে, ওই ছেলেটা আমিই ছিলাম।