- বইয়ের নামঃ কবরের প্রহরী
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রোমাঞ্চকর গল্প
কবরের প্রহরী
০১.
খাওয়ার পর আবার এসে মুসার শোবার ঘরে ঢুকল সবাই। মুসা, ফারিহা, কিশোর, রবিন আর টিটু।
ঢুকেই বলল কিশোর, রবিন, শুরু করো এবার তোমার ভূতের গল্প।
গ্রীনহিলস। বড়দিনের ছুটি কিন্তু বাইরে বেরোনোর উপায় নেই ওদের। প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে। তবে এ জন্যে বেরোতে পারছে না ওরা তা নয়। আসল কারণ, খুব ঠাণ্ডা লেগেছে মুসা ও ফারিহার। অসুস্থ বিছানায় পড়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে ওরা।
কি আর করে? রবিন আর কিশোরেরও বাইরে ঘোরাঘুরি বন্ধ। মুসা এবং ফারিহাকে সঙ্গ দেয়ার জন্যে মুসাদের বাড়িতে এসে বসে থাকে ওরাও। গল্প করে কাটায়।
এদিনও গল্পই চলছে। ভূতের গল্প। প্রথম গল্পটা বলেছে মূসা এবার রবিনের পালা।
মুসা বালিশে আধশোয়া হলো তার বিছানায়। বাড়তি আরেকটা বিছানায় টিটুকে জড়িয়ে ধরে শুলো ফারিহা। মুসার বিছানায় দেয়ালে হেলান দিয়ে আরাম করে বসল কিশোর আর রবিন যেহেতু গল্প বলবে, সবাই যাতে তার মুখ দেখতে পায় সেজন্যে একটা চেয়ারে সবার মুখোমুখি বসল সে।
পায়ের ছাপগুলো ছিল সত্যি বিশাল, বুঝলে, শুরু করল রবিন, অনেক বড়!
এই সময় ঝাড়া দিয়ে ফারিহার হাত ছাড়িয়ে একলাতে উঠে দাঁড়াল টিটু। আরেক লাফে বিছানা থেকে নেমে জানালার দিকে ছুটে গেল।
ব্যাপার কি? অবাক হয়ে তাকাল সবাই।
কারণটা জানা গেল একটু পরেই। জানালায় উঁকি দিল লাল টকটকে নোল একটা মুখ কুকুরটাকে দেখে রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে মুখ কুঁচকাল, আহ, ঝামেলা। অ্যাই, ওটাকে থামতে বলো!
অ্যাই টিটু, থাম, আয় এদিকে, ডাক দিল কিশোর। মিস্টার ফগ? আপনি এখানে?
ফগর্যাম্পারকট। শুধরে দিল পুলিশম্যান।
সরি, মিস্টার ফগর্যাম্পারকট, আগের প্রশ্নটাই করল কিশোর, আপনি এখানে?
এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। বাগানে সবগুলো সাইকেল একসঙ্গে দেখে বুঝলাম, আছো সবাই এখানেই। অনেকদিন দেখি না, তাই ভাবলাম…
দেখাটা করেই যাই, তাই না? হাসল কিশোর। আসলে কিজন্যে এসেছেন বলি? আমরা কোন রহস্য পেয়েছি কিনা খোঁজ নিতে।
লাল মুখ আরও লাল হয়ে গেল ফগের। ঝামেলা! না না, তা নয়…ইয়ে, ঝামেলা, সত্যি কোন রহস্য পেয়েছ নাকি?
মুচকি হাসল কিশোর। পেয়েছি।
গোলআলুর মত চোখগুলো আরও গোল আর বড় হয়ে গেল ফগের। জানালার। দিকে আরেকটু এগিয়ে এল মুখটা। পেয়েছ?
পেয়েছি।
গলা খাকারি দিল ফগ। এদিক ওদিক তাকাল। যেন দেখতে চাইল আড়াল থেকে কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে কিনা। তারপর স্বর নিচু করে জিজ্ঞেস করল, রহস্যটা কি?
ভূত!
ঝামেলা! রসিকতা কোরো না তো! ফগ ভাবল, সে যে ভূত হয়ে গিয়েছিল সেই কথাটাই খোঁচা মেরে মনে করিয়ে দিতে চাইছে কিশোর।
না, সত্যি বলছি, রহস্যটা ভূতেরই।
সত্যি? ঠাট্টা করছ না তো?
না, ঠাট্টা করব কেন?
তা রহস্যটা কি?
আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে চাইছি, পৃথিবীতে ভূত বলে সত্যি কিছু আছে কিনা?
ঠাণ্ডার মধ্যেও ঘামতে আরম্ভ করল ফগ। রুমাল বের করে মুখ মুছল। কৌতূহল ঝিলিক দিয়ে উঠল চোখে। কিভাবে সিদ্ধান্তে আসবে?
মুসা একটা ভূতুড়ে গল্প বলেছে, ওর আর ফারিহার বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প। এখন বলতে যাচ্ছে রবিন। শুরু করেছিল। আপনি আসাতে থেমে গেছে। তা আপনার কি কোন কাজ আছে আমাদের কাছে? কিশোরের ভঙ্গিটা এমন, থাকলে বলুন, নাহলে বিদেয় হোন।
উসখুস করতে লাগল ফগ। আবার এদিক ওদিক তাকাল। তারপর হে-হে করে একটা বোকার হাসি দিয়ে বলেই ফেলল, ঝামেলা! যদি কিছু মনে না করো তোমাদের আলোচনায় কি আমি অংশ নিতে পারি?
এ রকম একটা প্রস্তাব দিয়ে বসবে স্বয়ং ফগ, কল্পনাও করতে পারেনি গোয়েন্দারা। এ ওর মুখের দিকে তাকাতে লাগল ওরা। টিটু কি বুঝল কে জানে, ফপের দিকে তাকিয়ে খোক খোক শুরু করল সে।
ধমক দিয়ে ওকে থামাল কিশোর। আবার তাকাল ফগের দিকে। আপনি আমাদের আলোচনায় অংশ নেবেন?
কেন, অসুবিধে কি? হাতে কোন কাজ নেই আমার। আর কি যে তুষারপাত শুরু হলো, বিচ্ছিরি! সময় একদম কাটে না। বাইরে বেরোনোও মুশকিল। একটা রহস্য পেলেও হতো, সমাধানের চেষ্টা করতে পারতাম। শোনো, যদি চাও, ভূতের গল্প আমিও শোনাতে পারি তোমাদের। কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আমারও আছে।
উৎসাহী হয়ে উঠল কিশোর। ফগের বাস্তব অভিজ্ঞতা! নিশ্চয় মজাদার কোন হাসির ব্যাপার হবে। সহকারীদের অবাক করে দিয়ে রাজি হয়ে গেল সে। বেশ, আসুন। রবিন, দরজাটা খুলে দাও, প্লীজ!
জানালা থেকে ফগের মুখ অদৃশ্য হয়ে গেল।
ওকে ঢুকতে দিচ্ছ? ভাল লাগছে না রবিনের। ভূতের গল্প শোনা না ছাই। ও আসলে আমরা কোন রহস্য পেয়েছি কিনা জানার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছে।
উঠুক। এখন কোন রহস্য নেই আমাদের হাতে, তদন্ত চলছে না, ও কোন বাগড়া দিতে পারবে না। তা ছাড়া ওকে সরাসরি মানা করে দেয়াটা অভদ্রতা হতো।
দরজা খুলে দিল রবিন।
ফগ ঘরে পা রাখতে না রাখতেই ঝাঁপ দিয়ে গিয়ে পড়ল টিটু। পায়ের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে গোড়ালিতে কামড়ে দিতে চাইল। চিৎকার করে উঠল ফগ, ঝামেলা! আহ, ঝামেলা! অ্যাই কুত্তা, সর, সর! কুকুরটার পেটে কষে এক লাথি হাঁকানোর ইচ্ছেটা দমন করল, লাথি মারলে যদি আর থাকতে না দেয় ছেলেমেয়েগুলো, এই ভয়ে।