- বইয়ের নামঃ খেলনা ভালুক
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
খেলনা ভালুক
০১.
গোবেল বীচ গাঁয়ের পথ ধরে সাইকেল চালাচ্ছে জিনা। পাশে তার বন্ধুরা, কিশোর, মুসা আর রবিন। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। তবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে এ রকম হবেই। চকচক করছে তার চোখ। ঠাণ্ডা আবহাওয়া খারাপ লাগে না তার, যদি দিনটা হয় মেঘমুক্ত, উজ্জ্বল। অন্যদেরও খারাপ লাগছে না। গান গাইছে চারজনেই। কেউ গলা ফাটিয়ে, কেউ গুনগুন করে।
চারটে সাইকেলের পাশে দৌড়াচ্ছে রাফি, গা আর পায়ের পাতা গরম করার চেষ্টা করছে। পাঁচজনের মধ্যে এই একটি চরিত্র, যার ভাল লাগছে না এই আবহাওয়া। কান চেপে রেখেছে মাথার সঙ্গে। কারণ মাথা গরম রাখার আর কোন ব্যবস্থা নেই তার। উলের গরম টুপি নেই মানুষের মত। ঘরে থাকলে অবশ্য এই কষ্টটা করতে হত না, তবে সেটা চায় না সে। জিনাকে ফেলে একলা থাকতে ভাল লাগে না তার। মাঝে মাঝে হেঁড়ে গলায় ডেকে উঠছে ঘাউ ঘাউ করে। তাতে গানের সঙ্গে সঙ্গত হচ্ছে না, বরং বেসুরো বেতাল করে দিচ্ছে।
রাস্তার শেষ মোড়টা পেরোতেই চোখে পড়ল সামনে গোবেল বীচ গির্জার উঁচু স্তম্ভ।
এসে গেছি, খুশি খুশি গলায় বলল জিনা। দেখো, গ্রামটাকে কি রকম বদলে দিয়েছে বড় দিনের উৎসব।
গাঁয়ের সবচেয়ে বড় দোকান গোবেল বীচ স্টোর। সেটার সামনে আসার আগে সাইকেল থেকে নামল না ওরা। নানা রকম জিনিস বিক্রি হয় দোকানটায়। জানালার কাছে শো-কেসে অসংখ্য খেলনা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। আর রয়েছে উপহারের বিভিন্ন সামগ্রী। থাকবেই। কারণ আজ হলোগে ক্রিসমাস ইভের আগের দিন।
ইস্কুল ছুটি। গোবেল বীচে, জিনাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে তিন গোয়েন্দা। জিনার আব্বা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জনাথন পারকার আর জিনার আম্মা মিসেস ক্যারোলিন, তিন গোয়েন্দার কেরিআন্টি, ভীষণ আদর করেন ওদের। এখানে এলে একেবারে ঘরোয়া পরিবেশ পেয়ে যায় ওরা। তার ওপর লেখাপড়ার চাপ না থাকলে তো কথাই নেই। তাই ছুটি কাটানোর কথা ভাবলে প্রথমেই মনে চলে আসে গোবেল ভিলার কথা। এটা হলো জিনাদের বাড়ির নাম। সত্যিই যেন চিরবসন্ত বিরাজ করে এই বাড়িটাতে। এখানে যেন শুধুই সুখ, দুঃখ নেই। বাড়িটা অনেক বড়। বহু বছরের পুরানো। কিনে সংস্কার করে নিয়েছেন জিনার আব্বা।
সেদিন সকালে ছেলেমেয়েদেরকে ডেকে বাজার করে আনতে বললেন কেরিআন্টি। সেজন্যেই বেরিয়েছে ওরা।
এই দেখো! প্রায় চিৎকার করে উঠল রবিন। জানালার কাঁচে নাক ঠেসে ধরেছে। দারুণ সুন্দর, না? ওই যে ওই জেট প্লেনটা? আর ওই যে ওই ইলেকট্রিক ট্রেন, কি বিশাল! আর…কিন্তু আন্টিকে তো এগুলো উপহার দিতে পারব না…
জিনা আর মুসাও জানালার কাঁচে নাক চেপে ধরে খেলনা দেখছে।
হ্যাঁ, ভাল ভাল খেলনা আছে, একমত হল মুসা। আর ওই যে সাইকেলগুলো দেখো। কি সুন্দর! কোন্ কোম্পানির বুঝতে পারছি না। ওরকম একটা সাইকেল পেলে চুটিয়ে চালাতে পারতাম, যেখানে খুশি যেতে পারতাম। ভাড়া করা সাইকেল দিয়ে কি আর মজা হয়।
এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলনা আর সাইকেল দেখলে কাজ হবে না, তাগাদা দিল কিশোর। জিনিসপত্রগুলো কিনে ফেলা দরকার। আন্টি নিশ্চয় বসে আছেন। তাড়াতাড়ি যেতে বলে দিয়েছেন মনে নেই?
ঠেলে দোকানের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল সে। পেছনে ঢুকল অন্য তিনজন। ভেতরে উজ্জ্বল আলো। আর বেশ গরম। সব কিছুতেই কেমন যেন একটা উৎসব উৎসব গন্ধ। বাজারের তালিকা নিয়ে কাউন্টারের কাছে গিয়ে দাঁড়াল ওরা।
জিনিসপত্র বের করে সাজিয়ে গুছিয়ে প্যাকেট করে ব্যাগে ভরে দিল সেলসম্যান। হিসেব মিলিয়ে দাম মিটিয়ে দিল কিশোর। বেরোনোর আগে আরেকবার ঘুরে ঘুরে দেখল রবিন আর জিনা। অনেক চমৎকার জিনিস রয়েছে, দেখলেই কিনতে ইচ্ছে করে।
দোকানের একজন কর্মচারী এককোণে একটা মলাটের বড় বাক্স খুলছে। বয়েসে তরুণ। নাম ডিক, তাকে চেনে জিনা! জিজ্ঞেস করল, কেমন আছেন?
মুখ তুলে তাকিয়ে হাসল লোকটা। বলল, আরে, তুমি। ওরা কারা? বন্ধু বুঝি?
হ্যাঁ।
তা বন্ধুদের নিয়ে চলে এসো না আমাদের বাড়িতে। বড়দিনের দাওয়াত।
আরও অনেক দাওয়াত পেয়েছি, হেসে বলল জিনা। দেখি, চেষ্টা করব যাওয়ার। থ্যাংক ইউ।
বাক্সটা খোলা শেষ করল ডিক। ইতিমধ্যে মুসা আর কিশোরও এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে। এ-হপ্তায় সাংঘাতিক বিক্রি হচ্ছে, তরুণ কর্মচারী জানাল। বিশেষ করে ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর জিনিসপত্র। লোকের কাণ্ড! কিনতেই যখন হবে আগে কিনলেই হয়ে যায়। অনেক ঝামেলা বেঁচে যায়। দামেও সস্তা পায়। তা না। কিনবে তো কিনবে, একেবারে শেষ মুহূর্তে। তবে লোকের দোষও একতরফা ভাবে দেয়া যায় না। কোম্পানিগুলোরও দোষ আছে, যারা বানায়। আরে বাবা আরেকটু আগে বানিয়ে দিলে কি এমন ক্ষতি হয়? দিলি তো দিলি, সেই পনেরো দিন পর। পনেরো দিন ধরে বসে আছি এই ভালুকগুলোর জন্যে।
বড় বাক্সের ভেতর থেকে ছোট একটা বাক্স বের করল সে। ভেতরে আরও দুটো ওরকম বাক্স রয়েছে। একটা বাক্সের ডালা খুলে দেখাল ছেলেমেয়েদেরকে। ভেতরে অনেকগুলো ছোট ছোট খেলনা ভালুক সাজানো রয়েছে। বিভিন্ন রঙের। গাঢ় লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সাদা, বেগুনি আর কমলা।