- বইয়ের নামঃ রেসের ঘোড়া
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
রেসের ঘোড়া
০১.
এসে গেছি, জীপের পেছনের সিট থেকে বলল কিশোর পাশা। রুক্ষ পথে ঝাঁকুনি খেতে খেতে চলেছে গাড়ি। মাথা থেকে খুলে স্টেটসন হ্যাটটা কোলের ওপর রাখল সে। তাকিয়ে রয়েছে তীর চিহ্ন দেয়া নির্দেশকের দিকে। তাতে লেখাঃ ডাবল সি র্যাঞ্চ।
এলাম তাহলে, গুঙিয়ে উঠল মুসা। কিশোরের পাশে সীট খামচে ধরে রেখেছে। যা রাস্তা। হাড্ডিমাংস সব এক হয়ে গেছে।
সামনের প্যাসেঞ্জার সীটে বসেছে রবিন। ড্রাইভ করছে ব্ৰড় জেসন। হেসে বলল, আমরা কিন্তু সব সময়ই চলি এই রাস্তায়। আমাদের কিছু হয় না।
আপনাদের তো অভ্যাস হয়ে গেছে, মুসা বলল। মনে হচ্ছে সেই কোন যুগে রকি বীচ থেকে বেরিয়েছি। এতদিনে এসে পৌঁছলাম।
মিস্টি ক্যানিয়নে স্বাগতম, ব্রড বলল। ডাবল সি র্যাঞ্চের কর্মচারী সে, র্যাঞ্চ হ্যাণ্ড। শুকনো খড় রঙা চুল। বয়েস পঁচিশ-টচিশ হবে, আন্দাজ করল কিশোর।
মিস্টি ক্যানিয়ন, বিড়বিড় করল সে। তাকিয়ে রয়েছে পাহাড়ের দিকে। রবিন আর মুসারও চোখ সেদিকে। মনটানার একটা র্যাঞ্চে ঢুকছে ওরা। ঘিরে থাকা পাহাড়ের কোল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে র্যাঞ্চের জমি। রোদ খুব গরম। বাতাস শুকনো, পরিষ্কার।
এই পাহাড়ের কোলে অনেক র্যাঞ্চ আছে, ব্রঙ জানাল। ডাবল সি তারই একটা। মিস্টি ক্যানিয়ন কেন নাম হয়েছে জান? একটা ঝর্নার জন্যে। পাহাড়ের গোড়ায় বইছে গরম পানির ওই ঝর্নাটা, বাষ্প ওঠে ওটা থেকে। দূরের একটা শৈলশিরার দিকে হাত তুলে দেখাল সে।
নৌকার মত দুলে উঠল জীপ। তিক্ত কণ্ঠে মুসা বলল, রাস্তারই এই অবস্থা। গরম পানির ঝর্না কেমন হবে কি জানি। পা দিলেই হয়তো ফোঁসকা পড়ে যাবে, হট বাথ আর হবে না।
বাতাসে লম্বা সোনালি চুল এসে পড়ছে রবিনের চোখে মুখে। সরিয়ে দিতে দিতে বলল, এই ঝাঁকুনিতেই এই? আসল ব্রোঙ্কোতে তো এখনও চড়ইনি।
চড়েছি। ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল মুসা, যে কোন ঘোড়ায় চড়লেই হলো।
না, হলো না। ঘোড়ার নানা রকম জাত আছে, একেকটায় চড়তে একেক রকম লাগে। টাট্ট ঘোড়ায় চড়া আর মনটানার মাসট্যাঙে চড়া এক কথা নয়, ওই যেমন তোমার ঝরঝরে ভেগা আর চকচকে মার্সিডিজ কিংবা জাগুয়ার,
হয়েছে হয়েছে, রেগে উঠল মুসা, আর খোঁচা মারতে হবে না!
ওদের ঝগড়া থামানোর জন্যে হাসল কিশোর। রবিন, তুমিও ভুল করছ। র্যাঞ্চের সব ঘোড়াই বুনো কিংবা খেপা নয়।
ঠিক বলেছ, কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকিয়ে বলল ব্রড। হেসে অভয় দিল মুসাকে, সব রকমের আরোহীর জন্যেই ঘোড়া রাখি আমরা। একেবারে আনাড়ির জন্যেও আছে।
ভাল! নাক কুঁচকাল মুসা। আনাড়ি শুনতে ভাল লাগেনি। তবে আমার জন্যে ভাল ঘোড়াই দরকার। চড়তে জানি। বহুবার চড়েছি। নবিস নই।
বুনো মাসট্যাংও নিশ্চয় আছে আপনাদের? ব্রডকে জিজ্ঞেস করল রবিন।
সরু হয়ে এল লোকটার চোখের পাতা। বুনো?
ঝড়ো বাতাসের মত জোরাল বাতাস এসে ঢুকছে জানালা দিয়ে। বইয়ের পাতা মেলা মুশকিল। অনেক কায়দা করে ডাবল সি র্যাঞ্চের ঝলমলে কভার ওয়ালা ব্ৰশিয়ারটা খুলে দেখাল রবিন, একটা কালো ঘোড়ার ছবিতে আঙুল রাখল। সামনের পা তুলে দিয়ে পেছনের দুপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে ঘোড়াটা, যেন পক্ষিরাজের মত আকাশে উড়াল দেয়ার মতলব।- এই যে এটার মত? ইউনিকর্ন?
ইউনিকর্ন? চোখ গোল গোল হয়ে গেল মুসার। গ্রীক মিথলজির দানব এল কোত্থেকে এখানে? এটারও শিং আছে নাকি?
বাস্তব ঘোড়ার শিং থাকে না, বলে আবার ব্রডের দিকে তাকাল রবিন, চোখে জিজ্ঞাসা নিয়ে।
ওতে চড়ে না কেউ, কাটা কাটা শোনাল ব্রডের কণ্ঠ।
ব্রশিয়ারেও অবশ্য তাই লেখা রয়েছে। কেউ নাকি চড়তে পারে না।
কিশোর জিজ্ঞেস করল, দেখতে পাব তো ওকে?
রিয়ারভিউ মিররে কিশোরের চোখে চোখে তাকাল ব্রড। একটা পরামর্শ দিচ্ছি, কিশোর, ইউনিকের কাছ থেকে দূরে থাকবে। মরতে না চাইলে। গ্যাস প্যাডালে চাপ বাড়াল সে। খেপা ঘোড়ার মতই যেন লাফ দিয়ে আগে বাড়ল গাড়ি। এবড়োখেবড়ো পথে ঝাঁকি খাওয়া বাড়ল, পেছনে বাড়ল ধুলোর ঝড়।
বিষণ্ণ হাসি ফুটল মুসার মুখে। গাড়ি তো নয়, মনে হচ্ছে নাগরদোলায় চড়ছি।
কিশোর চুপ। ইউনিকর্নের কথা ভাবছে। ব্রডের হুঁশিয়ারি ঘোড়াটার প্রতি কৌতূহল বাড়িয়ে দিয়েছে ওর। কয়েকটা কোরাল পেরিয়ে এল গাড়ি। অনেক ঘোড়া দেখা গেল। তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে কিশোর। ইউনিকর্নকে দেখার জন্যে। মায়ের পাশে ছোটাছুটি করতে দেখল অস্বাভাবিক লম্বা পা-ওয়ালা বাচ্চা ঘোড়াকে। ধুলোয় ঢেকে রয়েছে ঘোড়াগুলোর শরীর। তৃণভূমিতে ঘোড়ার পাশাপাশি চড়ছে সাদা চৌকোণা মুখওয়ালা লাল গরু। ওগুলোর গায়েও ধুলো।
কালো ঘোড়াটাকে দেখা গেল না।
র্যাঞ্চের মূল বাড়িটার সামনে এনে গাড়ি রাখল ব্রড়। এক সময় সাদা রঙ করা। হয়েছিল দোতলা বাড়িটাকে। রঙ চটে গেছে এখন, জানালার কাছগুলোতে ফাটা ফাটা হয়ে আছে। লাল রঙ করা শার্সির অনেকগুলো কজা ছুটে গিয়ে কাত হয়ে। রয়েছে বিচিত্র ভঙ্গিতে। টালির ছাত মেরামত করা হয়েছে বহু জায়গায়। সামনের বারান্দা বাড়িটার সমান লম্বা, এককোণ থেকে মোড় ঘুরে পাশ দিয়েও এগিয়ে। গেছে। রেলিঙের খুটি জায়গায় জায়গায় খুলে পড়ে গেছে, রেলিঙের ওপরটা দেবে। রয়েছে ওসব জায়গায়।