- বইয়ের নামঃ বিমান দুর্ঘটনা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, রোমাঞ্চকর গল্প, অ্যাডভেঞ্চার
বিমান দুর্ঘটনা
০১.
সকালের রোদে গুঞ্জন তুলে উড়ে চলেছে সেসনা। ছোট্ট বিমানটার নিচে ছড়িয়ে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার সিয়েরা নেভাডা রেঞ্জের পাহাড়ী অঞ্চল। সবুজ পাইন বনের ভেতর থেকে মাথা তুলেছে অসংখ্য লাল পাহাড়ের চূড়া।
ককপিটের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল রবিন। চোখে বিনোকিউলার। পাশে পাইলটের সীটে বসে তার বাবা রোজার মিলফোর্ড। সিঙ্গল-ইঞ্জিন টার্বোপ্রপেলার বিমানটাকে স্বচ্ছন্দে উড়িয়ে নিয়ে চলেছেন গ্র্যানিটের পাহাড় আর পান্না-সবুজ উপত্যকার ওপর দিয়ে।
নিচে ওটা কি? রবিন বলল। ওই তৃণভূমিটার ওপারে। দেখতে পাচ্ছ?
কিশোরকে কনুইয়ের তো মেরে চৌখ টিপল মুসা। রবিন আর তার বাবার পেছনে প্যাসেঞ্জার সীটে বসে দুজনে। ওরাও তাকিয়ে নিচে। তবে খালি চোখে। সব কিছু ভাল দেখা যাচ্ছে না বলে পালা করে বিনোকিউলারটা নিয়ে দেখছে। নিচে একের পর পার হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের চূড়া।
কি আর, মুসা বলল রবিনকে। মেয়েটেয়ে হবে। সুন্দরী। তোমার মুখটা, দেখতে পেলেই হাত নাড়বে।
এবং পরক্ষণেই ফোন নম্বর চাইবে, হেসে যোগ করল কিশোর।
জিজ্ঞেস করবে, মুসা বলল, আজকে সন্ধেয় তোমার কোন কাজ আছে কি না।
আঙ্কেল, মিস্টার মিলফোর্ডকে জিজ্ঞেস করল কিশোর, ডায়মণ্ড লেকে সিনেমা হল আছে? শান্ত, নিরীহ ভঙ্গি। সন্ধ্যায় রবিনকে তো আর পাব না। মুসার আর আমার সময় কাটাতে হবে।
শব্দ করে হাসলেন মিলফোর্ড।
চোখ থেকে দূরবীন সরাল রবিন। মেয়েটেয়ে কিছু না, ওটা কুগার। ফিরে তাকাল দুই বন্ধুর দিকে। সুন্দর চেহারা, সোনালি ঘন চুল, কালচে নীল চোখ, আর। আকর্ষণীয় হাসি। যেখানেই যায়, কোথা থেকে যেন এসে উদয় হয় মেয়েরা, পিছে লাগে তার। টিটকারি তো খুব মারলে আমাকে। আমি কি একা নাকি?
আর কে? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
কেন, কমিক গার্লকে ভুলে গেলে? মিরিনা জরডান? ও আমার পিছে লেগেছিল?
কিশোরের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল মুসা। কিশোর মিয়া, এইবার তোমাকে পেয়েছে…
আর আমি যা করি, মুসার কথা শেষ হওয়ার আগেই বলল রবিন, সেটা স্বাভাবিক। মেয়েদের নিয়ে বেড়াতে যাই, রেস্টুরেন্টে খেতে যাই, ছবি দেখি…অ্যাটমের স্ট্রাকচার বোঝাতে বোঝাতে বিরক্ত করে ফেলি না।
মুখ তুলল কিশোর। পিস্তলের নলের মত করে রবিনের দিকে চোখা থুতনি। নিশানা করল যেন। রেগে গেছে। জিনা জানতে চাইল, আমি কি করব? ও-ই তো বলল, ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে…
ছেলেদের এই ঝগড়া দারুণ উপভোগ করছেন মিলফোর্ড। হো হো করে হেসে উঠলেন। লাল হয়ে গেল কিশোর। রবিন আর মুসাও হাসছে। শেষে সবার সঙ্গে তাল মেলাতেই যেন অল্প একটু হাসল সে-ও। মেয়েরা তাকে পছন্দ করে। কিন্তু ওদের সঙ্গে সহজ হতে পারে না সে। তার প্রখর বুদ্ধিমান মগজের কাছেও যেন মেয়েরা একটা বিরাট রহস্য।
উঠে দাঁড়াল সে। সেসনার ছাত নিচু, সোজা হয়ে দাঁড়ানো যায় না। মাথা নুইয়ে রেখেই লেজের দিকে এগোল সে। ওখানে মালপত্র আর নানা রকম যন্ত্রপাতি গাদাগাদি করে ফেলে রাখা হয়েছে।
কোথায় যাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল মুসা।
আরেকটা বিনোকিউলার দরকার, না তাকিয়েই জবাব দিল কিশোর। নিচে কে আছে দেখব। এমন কেউও থাকতে পারে, যে আগে থেকেই ই ইকোয়্যাল টু এম সি টু দি পাওয়ার টু-এর মানে জানে। আমাকে আর শেখাতে হবে না।
আরেকবার হাসল সবাই। এবার কিশোরের হাসিটা সবার চেয়ে জোরাল শোনাল। গ্রীষ্মের এই উইক এণ্ডের শুরুটা বড় চমৎকার। উজ্জ্বল রোদ। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার, গাঢ় নীল। তিন দিন লাগতে পারে মিস্টার মিলফোর্ডের কাজ শেষ হতে হতে। চুটিয়ে আনন্দ করে ছুটি কাটাতে পারবে তাহলে তিন গোয়েন্দা। খবরের কাগজের একটা স্টোরি করার জন্যে ডায়মণ্ড লেকে চলেছেন তিনি।
কাজ অনেক পেছনে ফেলে এসেছে ওরা, রকি বীচে। কোন বাধা নেই, কোন দায়িত্ব নেই। মুক্ত, স্বাধীন, কয়েকটা দিনের জন্যে। হেসেখেলে কাটাতে পারবে ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে দামি মাউনটেইন রিসোর্টে। ডায়মণ্ড লেকে গলফ কোর্স আছে, বিশাল সুইমিং পুল আছে, টেনিস কোর্ট আছে। ঘোড়ায় চড়া, ক্যাম্পিং এসবের ব্যবস্থা আছে। রানওয়ে আছে, যাতে প্লেন নামতে পারে, কারণ। মাঝেসাঝেই এখানে পালিয়ে এসে নিঃশ্বাস ফেলে বাঁচেন ভীষণ ব্যস্ত ব্যবসায়ী কিংবা সরকারী কর্মকর্তারা। কিছু দিন নির্বিঘ্নে কাটিয়ে চাঙা হয়ে আবার ফিরে যান। তাদের নৈমিত্তিক কাজে।
এটাওটা সরিয়ে জিনিসপত্রের মাঝে বিনোকিউলার খুঁজতে লাগল কিশোর। লোকটাকে হয়ত দেখতে পাব। আনমনা হয়ে বলল সে। কয়েকটা যন্ত্রপাতি তুলে নিয়ে একপাশে ফেলে রাখল, একটা খালি ফলের রসের ক্যান, একটা দোমড়ানো নার্ফ বল, এবং আরও কিছু বাতিল জিনিস সরাল। হঠাৎ মিস্টার মিলফোর্ডের দিকে মুখ তুলে জিজ্ঞেস করল, আঙ্কেল, যার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন, লোকটার নাম যেন কি বললেন?
কই, বলিনি তো!
হুম, তাহলে যার কাছ থেকে সংবাদ জোগাড় করতে যাচ্ছেন, সে একজন, পুরুষ। আমি বললাম, লোকটা, আপনি বললেন বলিনি। তার মানে স্বীকার করে। নিয়েছেন, আপনার সংবাদদাতা একজন পুরুষ। যাক, একটা সূত্র মিলল।