- বইয়ের নামঃ জলকন্যা
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী, রোমাঞ্চকর গল্প
জলকন্যা
০১.
গেল-রে, গেল, আবার হারালো! চিৎকার করে চত্বর ধরে ছুটে এলো মহিলা। কিটুটা আবার গায়েব! মহিলার বয়েস অল্প। সুন্দরী। চোখেমুখে ভয়ের ছাপ। মিস্টার ডেজার, ওকে খুঁজে পাচ্ছি না!
বেঞ্চে বসে তিন কিশোরের সঙ্গে গল্প করছেন মিস্টার ডেজার। বিরক্ত ভঙ্গিতে হাত নাড়লেন। দুত্তোর! একটা মুহূর্তের জন্যে কি স্থির থাকতে পারে না ছেলেটা!
উঠে এগিয়ে গেল মহিলার দিকে। এতে অস্থির হচ্ছো কেন, নিনা? ডব তো সঙ্গেই রয়েছে তার। ও-ই দেখবে।
ডব যায়নি, ঘুমোচ্ছে। মুহূর্তের জন্যে চোখ সরিয়েছিলাম কিটুর ওপর থেকে, অমনি পালালো!
পরস্পরের দিকে তাকালো বেঞ্চে বসা তিন কিশোর।
আপনার ছেলে? মহিলাকে জিজ্ঞেস করলো একজন। তার মাথা ভর্তি কোকড়া চুল। সুন্দর দুই চোখে বুদ্ধির ছটা। বয়েস কতো?
পাঁচ, জবাব দিলো নিনা। একা একা গেল, কোথায় যে হারায়…
বেশি দূরে যায়নি, বাধা দিয়ে বললেন ডেজার। দেখি, ওশন ফ্রন্টের দিকটায় খুঁজে। তুমি ওদিকে যাও, আমি মেরিনার দিকে যাচ্ছি। পেয়ে যাবো।
দুজন দুদিকে খুঁজতে চলে গেল।
পাঁচ বছর, বললো তিনজনের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম বয়স্ক কিশোরটি। হালকা-পাতলা রোগা শরীর তার। কিশোর, কাণ্ডটা দেখেছো! আজব চরিত্র এখানে। পাঁচ বছরের একটা বাচ্চাকে একা ছাড়লো কিভাবে?
অজান্তে পালালে কি করবে? চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো কিশোর পাশা।
তিন বন্ধু মিলে ক্যালিফোর্নিয়ার ভেনিস শহরটা দেখতে এসেছে ওরা। শুধু দেখতে এসেছে বললে ভুল হবে, কাজও আছে এই উপকূলীয় শহরে। বাজারের পার্কিং লটে সাইকেল রেখে হেঁটে এসেছে চওড়া সৈকতের কিনারে। দেখার অনেক কিছু আছে এখানে। কারনিভল চলছে। খোলা জায়গায় দড়াবাজির খেলা চলছে। সাইকেলের খেলা থেকে শুরু করে সার্কাসের আরও নানা রকম খেলা শেখ কয়েকটা মেয়ে। বাঁশি বাজাচ্ছে স্ট্রীট মিউজিশিয়ান। তার কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক আইসক্রীমওয়ালা। আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কয়েকজন ভাঁড়। একধারে গম্ভীর মুখে বসে লোকের ভাগ্য গণনা করছে এক জ্যোতিষ।
উৎসব চলছে ভেনিসের পথে। খেলা যেমন চলছে, তেমনি চলছে মদ আর জুয়ার আড্ডা। এক জায়গায় বসে একটা বোতল থেকেই পালা করে মদ খাচ্ছে তিন ভবঘুরে। হই চই শোনা গেল। কি ব্যাপার? একটা লোককে পুলিশে ধরেছে, বেআইনী ড্রাগ বিক্রি করছিলো সে। আরেক দিকে বগলে একটা বাক্স নিয়ে দৌড় দিলো একটা লোক। তার পেছনে চোর! চোর! ধরো! ধরো! বলে চিৎকার করে ছুটলো আরেকজন। নিশ্চয় কোনো দোকানের মালিক।
ভেনিসের মজার উৎসব সম্পর্কে যেমন শুনেছে কিশোর, তেমনি এর বদনামও অনেক শুনেছে সে। সৈকতের কাছে পিয়ারের নিচে বাস করে অনেক না-খেতে পাওয়া মানুষ। চোর, গুণ্ডা, বদমাশের স্বর্গ হয়ে উঠেছে জায়গাটা। পাঁচ বছরের একটা বাচ্চাকে এখানে ঘুরতে দেয়া নিতান্তই বিপজ্জনক।
বন্ধুদের দিকে তাকালে কিশোর। একটা কিছু সিদ্ধান্ত নেবে সে, এই আশায়ই তার দিকে চেয়ে রয়েছে রবিন আর মুসা। নির্দেশের জন্যে অপেক্ষা করছে।
হাসি ফুটলো অবশেষে গোয়েন্দা প্রধানের মুখে। বললো, মনে হচ্ছে, আরেকটা কেস এসে গেল হাতে। চলো, আমরাও খুঁজি।
ওশন ফ্রন্ট ধরে এগোলো তিনজনে। বৃদ্ধ মিস্টার ডেজার কিংবা কিটুর মায়ের চেয়ে খোঁজার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা তাদের অনেক বেশি, ফলে ওদের কাজটাও হলো। অনেক নিখুঁত। খোলা দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলো। তাকালো স্তূপ হয়ে থাকা ময়লার ওপাশে। খালিপায়ে সৈকতে হাঁটাহাঁটি করছে অনেক ছেলেমেয়ে, ওদের। সঙ্গে কথা বললো। ওশন ফ্রন্টে এসে পড়া সমস্ত গুলি উপগলিতে খুঁজলো। এমনকি স্পীডওয়ে আর প্যাসিফিক অ্যাভেনিউও বাদ দিলো না।
ওরকম একটা নিরালা পথেই এক বাড়ির বারান্দায় বসে থাকতে দেখা গেল ছেলেটাকে। একটা বাদামী রঙের বেড়ালের সঙ্গে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত। আলোচনাটা চলছে একতরফা। বকবক করে যাচ্ছে ছেলেটা, আর বেড়ালটা চোখ মুদে আদির খাচ্ছে। ছেলেটার চুল আর চোখ দুইই কালো, নিনার মতো।
এগিয়ে গেল কিশোর। এই, তোমার নাম কিটু?
জবাব দিলো না ছেলেটা। ধীরে ধীরে পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়ালো।
তুমি এখানে, আবার বললো কিশোর। আর তোমার মা ওদিকে খুঁজে মরছে। চলো।
আরেক মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলো ছেলেটা। তারপর হাত বাড়িয়ে দিলো, আচ্ছা।
কিটুর হাত ধরে তাকে নিয়ে চললো কিশোর। সাথে চললো রবিন আর মুসা। চত্বরে আসতেই প্রথম দেখা হলো মিস্টার ডেজারের সঙ্গে। চোখেমুখে দারুণ। উত্তেজনা আর উল্কণ্ঠার ছাপ। তাড়াহুড়ো করে এগিয়ে এসে কিটুর হাত চেপে ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন, এই দুষ্টু ছেলে, কোথায় গিয়েছিলি! তোর মা ওদিকে পাগল হয়ে গেছে!
পাগল মা-ও এসে হাজির হলো। প্রথমে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলো, তারপর গেল রেগে। কাধ ধরে জোড়ে জোড়ে ঝুঁকি দিয়ে বললো, এই, কোথায় গিয়েছিলি! বল, কোথায়! না বলে আবার যদি যাস…! কি করবে কথাটা উহ্য রাখলো নিনা।
এই হুমকি মোটেও গায়ে মাখলো না কিটু। তবে তর্ক না করার মতো বুদ্ধি তার আছে। চুপ করে রইলো।