- বইয়ের নামঃ দি ক্লকস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
দি ক্লকস
০১. আর পাঁচটা বিকেলের মতো
আর পাঁচটা বিকেলের মতোই ছিলো সেপ্টেম্বর মাসের ন তারিখের বিকালটা। ওদিন ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘটনাগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষেই আগে থেকে কোনোরকম ধারণা করা সম্ভব ছিলো না।
শুধু মাত্র ব্যতিক্রম সাতচল্লিশ নম্বর ক্রিসেন্ট উইলিব্রাহামের মিসেস প্যাকার। তিনি কোনো ঘটনা ঘটার আগে সতর্ক করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। মিসেস প্যাকার আসন্ন কোনো অমঙ্গলের ব্যাপারটা প্রায় অনেকটাই বলতে পারতেন। কিন্তু সাতচল্লিশ আর উনিশ নম্বরের মধ্যে এত বেশি ফারাক এবং ঘটনার সঙ্গে এত কম জড়িত যে তার পক্ষে আগে থেকে ভাবাটা অপ্রয়োজনের মনে হলো।
ক্যাভেনডিস সেক্রেটারিয়াল অ্যান্ড টাইপ রাইটিং ব্যয়োর প্রিন্সিপাল মিসেস কে. মার্টিনডেলের কাছে আজকের দিনটা বড়োই একঘেয়ে লাগছিলো। ন তারিখের দুটো পঁয়ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত দিনটা ছিলো আর পাঁচটা দিনের মতোই, একেবারে সাদামাটা। ঠিক দুটো বেজে পঁয়ত্রিশ মিনিটে মিসেস মার্টিনডেল ইন্টারকমের বেলটা টিপলেন। এডিনা বেল বাইরের ওদিকে বসেছিলো। মিসেস মার্টিনডেল বললেন, এডিনা শীলা ওয়েবকে কাজে পাঠিয়ে দাও।
এডিনা বেল বললেন, এখনো ফেরেনি। তিনি বললেন যে, ও ফিরলে পাঠিয়ে দিও।
এডিনা টাইপ করছিলো। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দরজা খুলে গেলো। শীলা ভেতরে ঢুকলো। সামান্য হাসছিলো ও। এডিনা বলে উঠলো, স্যাণ্ডিক্যাট তোমাকে ডাকছিলো।
শীলা বললো, কি ভাগ্য, এইদিনই আমার দেরি হয়ে গেলো।
মিসেস মার্টিনডেলের বছর চল্লিশেক বয়স, বিবর্ণ কালচে চুল আর ক্রিশ্চান নাম ক্যাথরিনের জন্য ওর নামই স্যাণ্ডিক্যাট হয়ে গেছে। তিনি বললেন, তুমি দেরিতে ফিরছো মিস ওয়েব।
সে বললো সে দুঃখিত, সে একটা ট্রাফিক জ্যামে আটকে গিয়েছিলো। তিনি শীলাকে বললেন যে, মিস এক্স নামে এক ভদ্রমহিলা ফোন করেছিলেন। ঠিক তিনটে নাগাদ। তিনি একজন ফটোগ্রাফার চান। বিশেষ করে তার কথাই বলেছেন। সে আগে কখনো কাজ করেছে। কিনা জিজ্ঞাসা করলো।
শীলা ওয়েবকে বললেন মার্টিনডেল, ভদ্রমহিলার ঠিকানা হলো উনিশ নম্বর উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট।
শীলা ওয়েব তার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। বললো, ওখানে আগে কখনো গিয়েছি বলে তো মনে করতে পারছি না।
তিনি বললেন, তিনটের সময় তুমি সহজেই ম্যানেজ করতে পারবে। বিকালে কি তোমার আর কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?
কনুই-এর কাছে রাখা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকটার দিকে তাকালেন। প্রফেসর পাড়ি, কারফিউ হোটেল। ঠিক পাঁচটার সময়। ঐ সময়ের আগে তোমার ফেরা উচিত। আর যদি একান্তই না পারো তাহলে আমি জ্যানটকে পাঠিয়ে দেবো। তিনি ইশারা করে জ্যানটকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। সে খানিক পরে দ্রুতবেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
উইলিব্রাহামের ক্রিসেন্ট অট্টালিকা ছিলো বিদঘুঁটে ধরনের। ১৮৮০ সালে জনৈক ভিক্টোরিনার স্থপতি এটি তৈরি করেছিলেন। এটি দুটো বাড়ি মিশিয়ে অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকার ধরনের। বাগান দুটো পাশাপাশি করা। বাড়িগুলোর নম্বর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাড়িগুলোর মধ্যে শৈল্পিক আভাস পাওয়া যায়। বাইরের দিকটায় কোনোরকম আধুনিকতার ছবি পড়েছে কিনা সন্দেহ।
উনিশ নম্বর বাড়িটার ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছুই ছিলো না। নিখুঁতভাবে পর্দা দিয়ে ঘেরা।
শীলা ওয়েব সদরের গেট খুলে দরজা পর্যন্ত ধীরে ধীরে হেঁটে গেলো। দরজার সামনে গিয়ে বাজালো বেলটা। তারপর সে হাতল ঘুরিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো। ছোটো হলঘরটার ডান দিকের দরজাটা সামান্য খোলা ছিলো। সেখানে গিয়ে টোকা মেরে ভেতরে ঢুকে পড়লো।
সারা ঘরে যা সবচেয়ে লক্ষণীয় তা হলো ঘড়ির প্রাচুর্য। দেওয়ালে কয়েকটা বিভিন্ন ধরনের ঘড়ি। গ্রান্ডফাদার ক্লক, ফায়ার প্লেসে ড্রেয়ডেন চীনা ঘড়ি, ডেস্কের ওপরে রুপোর ক্যাথেজ ঘড়ি। এছাড়া একটা ছোটো শৌখিন ঘড়ি ফায়ার প্লেসের আর একদিকে রাখা। টেবিলের ওপরে একটা ঘড়ি। এই ঘড়িটার এক কোণে সোনার জলে রোজমেরী নামটা লেখা।
শীলা মাথার উপর একটা শব্দে চমকে উঠলো। দেওয়ালে কাঠের খোদাই করা ঘড়ি, যেটায় বিকট আওয়াজ হচ্ছিল। সে সোফার পাশ দিয়ে সামনের দিকে এগোলো। সামনের দিকে তাকালো। মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে একটা দেহ পড়েছিলো। লোকটার চোখদুটো অর্ধেক খোলা অবস্থায়, চোখের দৃষ্টি একেবারে প্রাণহীন। পরনে কালচে ধূসর রঙের একটা কোট। সামনের দিকে ভিজে একটা কালো দাগ। কিছুক্ষণ পর লোকটিকে দেখে থাকায় তার গা স্পর্শ করলো। ভীষণ ঠান্ডা এরপর ভিজে ঐ দাগটা স্পর্শ করে হাতটা দ্রুত সরিয়ে নিলো। একটা অজানা আতঙ্কে নিজের আঙুলের দিকে তাকালো।
হঠাৎ গেট খোলার শব্দ হলো। সে জানালার দিকে তাকালো। একজন মহিলা দরজা খুলে ভেতের ঢুকলেন। মহিলার ঢেউখেলানো চুল, কপাল থেকে পিছন দিকে টেনে আঁচড়ানো। চোখদুটো বড়ো বড়ো চমৎকার নীল রঙের। নিস্পৃহভাবে তিনি সামনের দিকে তাকালেন, মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলেন যে এখানে কি সে-ই আছে?
শীলা বললো যে, আমি আছি। মহিলাটা সোফার দিকে যেতেই শীলা বললো, এগোবে না। একজন লোক মৃত অবস্থায় পড়ে আছে এখানে। আপনি ওর ওপরে পড়ে যাবেন।