- বইয়ের নামঃ দি কিং অফ ক্লাব
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
দি কিং অফ ক্লাব
১. ডেইলি নিউজমঙ্গার পত্রিকা
দি কিং অফ ক্লাব (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
এরকুল পোয়ারো ডেইলি নিউজমঙ্গার পত্রিকাটা একবারে সরিয়ে রেখে বলে উঠল, এমন এমন সাজানো ঘটনা আছে যার কাছে সত্য ঘটনা হার মেনে যায়।
এই উক্তিটি সম্ভবত নকল। মনে হয় আমার বন্ধুটি কোনো বিষয়ের ওপর অভিমান করে একথা বলেছেন। ছোটখাটো মানুষটি তার ডিমের মত মাথাটা একপাশে ঘুরিয়ে ট্রাউজারের ভাজ যাতে নষ্ট না হয় তাই খুব সতর্কভাবে ট্রাউজারের ধুলো ঝাড়ল। হেস্টিংস খুবই ভাবনাশীল।
তার এই ধরনের উপহাসসূচক কথাবার্তা শুনে বিন্দুমাত্র বিরক্তি প্রকাশ না করে কাগজটার দিকে হাত বাড়ালাম আমি। সকালের এই কাগজটা তুমি পড়েছ?
পড়েছি এবং তারপর সেটা সহানুভূতির সঙ্গে ভাঁজ করে রেখেছি। তুমি যে রকমভাবে মেঝের ওপর সেটা ফেলে দিলে সেরকম আমি করিনি। সমস্ত কিছুরই একটা নিয়মশৃঙ্খলা ও পদ্ধতি আছে। সবচেয়ে বড় দুঃখের কথা কি জানো সেই বোধটুকু তোমার মধ্যে নেই। (পোয়ারোর এটাই খারাপ দিক। নিয়ম আর পদ্ধতি হল তার ঈশ্বর। তার দৌড় এতই যে, সে তার সব সাফল্যই উৎসর্গ করে থাকে এদের উদ্দেশ্যে।)।
ও তাহলে তুমি থিয়েটার হলের কর্মসচিব হেনরী রীডবার্নের খুনের ঘটনাটা পড়েছ? আমার এই মন্তব্যটি খুনের পরিপ্রেক্ষিতেই। অনেক সময় সত্য ঘটনা সাজানো কাহিনীর কাছে শুধু মিথ্যে হয়ে দাঁড়ায় না, নাটকীয়ও হয়ে দাঁড়ায়। সেই সুপ্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত ইংরেজ অগল্যাণ্ড পরিবারের কথা চিন্তা করে দেখ, মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে ও দেশের হাজার হাজার পরিবারের আদর্শ তারা। পরিবারের পুরুষরা শহরে যায় কাজ করতে আর নারীরা বাড়ির কাজ করতে থাকে। তাদের জীবন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। গতকাল রাত্রে তারা তাদের শহরতলীর ডেইজিমেড স্ট্রেথামের বাড়ির ড্রইংরুমে বসে ব্রীজ খেলছিল। আচমকা আগে থেকে কোনো সতর্কবাণী না জানিয়ে জানলার কপাট খুলে গেল এবং একজন মহিলা ঘরের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তার ধূসর রঙের সার্টিনের ফ্রকে লাল দাগ লেগে থাকতে দেখা যায়। মেঝের ওপর পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হবার আগের মুহূর্তে তার মুখ দিয়ে একটামাত্র শব্দ উচ্চারিত হয়েছিল, খুন! ভ্যালেরি সেন্টক্লেয়ার, সম্প্রতি লণ্ডনে ঝড় তোলা বিখ্যাত নর্তকী সে, তার ছবি দেখেই তারা তাকে চিনে থাকবে!
পোয়ারো জানতে চাইল, দি ডেইলি নিউজমাঙ্গারের রিপোর্ট? না তোমার কথার মারপ্যাঁচ?
সংবাদটা দ্রুত প্রেসে দেওয়ার তাগিদ ছিলো দি নিউজমঙ্গারের –আর প্রকাশিত সংবাদটা নেহাতই ঘটনাভিত্তিক। কিন্তু এ কাহিনীর নাটকীয় সম্ভাবনার কথা সঙ্গে সঙ্গে আমার মাথায় খেলে যায়।
পোয়ারো ভাবুক ভাবে মাথা নাড়লো। মানুষ যেখানে সেখানেই মানুষের জীবন এবং তার নাটক। জীবন নিয়ে নাটক? তুমি যা চিন্তা করছ সবসময় তা নাও হতে পারে। তবু তা সত্ত্বেও আমি এই কেসের ব্যাপারে আগ্রহী কেন জানো? এই কেসের সঙ্গে আমি জড়িয়ে পড়তে পারি।
সত্যি তাই?
হ্যাঁ, আজ সকালে একজন ভদ্রলোক আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন যে মাওরানিয়ার রাজকুমার পলের পক্ষে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
কিন্তু এর সঙ্গে তার কি সম্পর্ক থাকতে পারে?
তুমি নিশ্চয় ইংরেজি দৈনিকের কলঙ্কের ঘটনার সংবাদগুলো পড়নি। সে সবের মধ্যে একটা মজাদার ঘটনা হলো একটি নেংটি ইঁদুর শুনেছে– কিম্বা একটা ছোট্ট পাখি শুনতে চায়– এখানে দেখ!
পোয়ারো তার ছোট্ট বেঁটে মোটা আঙুল দিয়ে একটি পরিচ্ছদের ওপর দেখাতেই আমি সেদিকে তাকালাম। বিদেশী রাজকুমার এবং বিখ্যাত নর্তকীর সম্পর্ক কি সত্যি সত্যি অন্তরঙ্গ? আর নতুন হীরের আংটিটা কি মহিলাটির পছন্দ?
পোয়ারো ওই নাটকীয় বিশ্লেষণ প্রসঙ্গ শুরু করতে গিয়ে বলল, তোমার মনে আছে নিশ্চয়, ডেইজিমেডের ড্রইংরুমের কার্পেটের ওপর মাদমোয়াজেল সেন্টক্লেয়ার সবেমাত্র তখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে
আমি কাঁধ নাড়িয়ে বললাম, হ্যাঁ মানে আছে বৈকি! সে যখনই ঐ শব্দটা অস্ফুট স্বরে উচ্চারণ করল ঠিক তখনই অগল্যাণ্ড পরিবারের দুজন পুরুষ সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, একজন ছুটে যায় মহিলাটির চিকিৎসা করানোর জন্য ডাক্তার আনতে, আর একজন ছুটে যায় পুলিস স্টেশনে সেখানে সে তার আতঙ্কের কাহিনী বলে পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে মনডেসারে মিঃ রীভবার্নের চমৎকার ভিলায় যায়, ডেইজিমেড থেকে জায়গাটা খুব বেশি দূরে নয়। সেই বিখ্যাত মানুষটিকে সেখানে তারা দেখতে পায়, এক অপ্রীতিকর ঘটনায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাকে। লাইব্রেরীতে পড়েছিলেন তিনি। দূর থেকে তার মাথার পেছন দিকটা দেখা যাচ্ছিল, মাথাটা ফেটে চৌচির, ডিমের খোলার মতোন।
পোয়ারো নরম গলায় বলল, আপনার ভাবধারার অনুগামী আমিও, আমাকে ক্ষমা করবেন।
কাউন্ট ফিওডরের ভূমিকায় আমাদের সম্মানিত অতিথির আবির্ভার ঘটল সেখানে। আশ্চর্য চেহারা তার। দীর্ঘদেহী, চোখেমুখে একটা অদৃশ্য ইচ্ছার ছাপ স্পষ্ট, পাতলা চিবুক বিখ্যাত মোরানবার্নের আদলে মুখ, এবং কালো গভীর চোখ থেকে মুঠো মুঠো আগুন ঝড়ে পড়ছিল যেন।