- বইয়ের নামঃ ছিনতাই
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী, অ্যাডভেঞ্চার, কল্পকাহিনী
ছিনতাই
০১.
অবশেষে এল সেই বহু প্রতীক্ষিত দিন।
সাউথ আমেরিকান এয়ারলাইনসের বিমানে চড়ল তিন গোয়েন্দা, সঙ্গে জরজিনা পারকার, যাবে দক্ষিণ আমেরিকার রিও ডি জেনিরোতে। এবার ছুটিতে ব্রাজিল দেখবে ওরা। সমস্ত খরচ দিয়েছেন জিনার বাবা মিস্টার পারকার, এটা তার তরফ থেকে জিনার জন্মদিনের উপহার।
লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্লেনে নিউইয়র্ক এসেছে ওরা, এখানে প্লেন বদল করতে হয়েছে।
বসার জায়গা দেখিয়ে দিল সুন্দরী স্টুয়ার্ডেস।
সবাই হাসিখুশি, তবে জিনাকে কিছুটা উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে, রাফিয়ানের জন্যে দুশ্চিন্তা। মানুষের সঙ্গে একসাথে যাওয়ার নিয়ম নেই, প্লেনে জন্তু-জানোয়ারের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা।
স্টুয়ার্ডেসকে জিজ্ঞেস করল জিনা, আমার কুকুরটাকে ঠিকমত ভোলা হয়েছে, জানেন?
কিচ্ছু ভেব না। তোমাদের মতই আরামে যাবে কুকুরটাও, আরেকটা হাসি উপহার দিয়ে চলে গেল স্টুয়ার্ডেস।
আশ্বস্ত হলো জিনা। নরম গদিমোড়া সীটে আরাম করে হেলান দিয়ে চারদিকে তাকাল। জানালার ধারে বসেছে সে। তার পাশে মুসা আমান। ওদের পেছনের সীটে কিশোর পাশা আর রবিন মিলফোর্ড।
যাত্রীরা সব অল্পবয়েসী, কিশোর-কিশোরী, কিংবা আরও ঘোট স্কুল লেভেলের ওপরে কেউ নেই। সবারই ছুটি, কেউ পেয়েছে জন্মদিনের উপহার, কেউ বা পরীক্ষায় ভাল ফল করার প্রেজেন্ট-এই বেড়াতে যাওয়া।
হাসছে, কথা বলছে, উত্তেজনা আর খুশিতে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে কেউ কেউ বা গান ধরেছে বেসুরো গলায়। কোলাহল, কলরবে মুখর করে তুলেছে বিরাট বিমানের বিশাল কেবিন।
খাইছে! ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে হাসল মুসা। চিড়িয়াখানায় ঢুকলাম নাকিরে বাবা?
খানিক পর সবাইকে সীট-বেল্ট বাঁধার নির্দেশ দিল স্টুয়ার্ডেস।
রানওয়েতে চলতে শুরু করল বিমান।
বিমান বন্দরের বড় বড় ভবনগুলো যেন ছুটতে লাগল জানালার পাশ দিয়ে।
আকাশে উঠল বিমান। যাত্রা হলো শুরু।
দেখতে দেখতে ছাড়িয়ে এল শহর। নদী-নালা মাঠ-বন পেরিয়ে বেরিয়ে এল খোলা সাগরের ওপর। নিচে নীল আটলান্টিক।
শোনা গেল স্টুয়ার্ডেসের কণ্ঠ, চুপ করার অনুরোধ জানাচ্ছে। সিনেমা দেখানো হবে।
কেবিনের সামনের দিকে ওপর থেকে সাদা পর্দা নেমে এল। নিভে গেল আলো। ছবি শুরু হলো।
সিনেমা শেষে এল খাবার।
খেয়েদেয়ে আবার জাঁকিয়ে বসে গল্প শুরু করল কেউ, কেউ মিউজিক শুনতে লাগল, কেউ ঘুমিয়ে পড়ল, কেউ বা জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল সাগরের দিকে। দিগন্তজোড়া বিশাল এক নীল চাদর যেন বিছিয়ে রয়েছে, মাঝে মাঝে ছোট-বড় দ্বীপগুলোকে দেখাচ্ছে সবুজ ফুটকির মত। খুব সুন্দর।
স্যান স্যালভ্যাডরে নামল বিমান।
স্টুয়ার্ডেস জানাল, এখানে কিছুক্ষণ দেরি করবে প্লেন, যাত্রীরা ইচ্ছে করলে নেমে খানিকক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আসতে পারে, চাইলে এয়ারপোর্ট ক্যাফেটেরিয়া থেকে কোকা কোলা কিংবা মিল্কশেক খেয়ে আসতে পারে। অনেকেই নামল।
তিন গোয়েন্দা বসে রইল, কিন্তু জিনা নামল। অনেকক্ষণ রাফিয়ানকে দেখেনি, আবার দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে তার। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখে আসবে। একবার।
ঠিকই বলেছে স্টুয়ার্ডেস, সত্যি, খুব আরামে রাখা হয়েছে কুকুরটাকে। তার কেবিনে রাফিয়ানই একমাত্র যাত্রী, আর কোন কুকুর কিংবা অন্য জানোয়ার নেই।
ফেরার পথে সরু গলিতে ধাক্কা লাগল একটা লোকের সঙ্গে। দোষটা কার। বোঝা গেল না, দুজনেরই তাড়াহুড়ো। জিনা নাহয় উঠেছে কুকুর দেখতে, কিন্তু লোকটা কেন উঠেছে।
জিনা তাকে চেনে, নাম চ্যাকো। বাচ্চাদের দেখেশুনে রাখার জন্যে চারজন। লোক দিয়েছে ট্রাভেল এজেন্সি, চারজন কেয়ার টেকার, চ্যাকো তাদের একজন।
ভুরু কুঁচকে তাকাল চ্যাকো। দেখে চলতে পারো না?
আপনিও তো দেখে চলতে পারেন, পাল্টা জবাব দিল জিনা।
ক্ষণিকের জন্যে জ্বলে উঠল লোকটার চোখ, তারপর জিনাকে অবাক করে দিয়ে হাসল। মাথা নাড়ল আপনমনেই। নেমে চলে গেল একটা সিগারেটের দোকানের দিকে।
ফিরে এসে বন্ধুদেরকে জানাল জিনা।
মুসা আর রবিন দুজন দুরকম মন্তব্য করল।
ও কিছু না, শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। বাচ্চাকাচ্চা সামলানো, যা-তা ব্যাপার নাকি। সব তো বিচ্ছু। ওর জায়গায় হলে আমার মেজাজ আরও আগেই খারাপ হয়ে যেত।
কিন্তু তবু মেনে নিতে পারছে না জিনা, ওভাবে না ধমকালেও পারত।
পরে তো আবার হেসেছে, মুসা বলল। তুমিও তো ভাল ব্যবহার করোনি। ধাক্কা মেরেছ, তারপর ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, মুখে মুখে আবার তর্ক করেছ। তারপরও মেজাজ ঠাণ্ডা হচ্ছে না তোমার। কে বেশি বদমেজাজী? জিনা, কিছু মনে। করো না, এ-কারণেই লোকে পছন্দ করে না তোমাকে।
তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল জিনা, ওই হারামীটার সঙ্গে আমার তুলনা করছ।
আহহা, হাত তুলল কিশোর, গেল তো লেগে। জিনা এ-রকম যদি করো, আর কখনও তোমার সঙ্গে কোথাও যাব না।
কেন, মুসার দোষ দেখছ না? ও আমাকে বাজে কথা বলছে কেন?
বাজে বলছে কোথায়? ও-তো তোমাকে বোঝাচ্ছে।
থাক! অত বোঝার দরকার নেই আমার, ঝটকা দিয়ে জানালার দিকে ফিরল সে, তাকিয়ে রইল বাইরে।