- বইয়ের নামঃ সবুজ ভূত
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প
সবুজ ভূত
এক
তীক্ষ্ণ চিৎকার শুনে চমকে উঠল রবিন মিলফোর্ড আর মুসা আমান।
পুরানো ড্রাইভওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে ওরা, চারপাশে আগাছার জঙ্গল। চোখ মস্ত এক পোড়ো বাড়ির দিকে। এক পাশ থেকে ভেঙে ফেলা শুরু হয়েছে, নতুন বাড়ি করা হবে। চাঁদের আলোয় কেমন যেন অবাস্তব, রহস্যময় মনে হচ্ছে ভাঙা বাড়িটাকে।
রবিনের কাঁধে ঝোলানো একটা পোর্টেবল টেপ রেকর্ডার, চালু করে দিয়ে পরিবেশ আর দৃশ্যাবলীর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছে জোরে জোরে, টেপ করে নিচ্ছে। চিৎকার শুনে চুপ হয়ে গেল ক্ষণিকের জন্যে। মুসার দিকে ফিরে বলল, লোকে বলে, ভূতুড়ে বাড়ি। ভূতের চিৎকার না তো?
যেন তার কথার জবাব দিতেই আবার শোনা গেল টানা চিৎকার: ইইইইইইই আআআআহহ! মানুষ না, যেন কোন জানোয়ারের কণ্ঠ। ঘাড়ের রোম খাড়া হয়ে গেল ছেলেদুটোর।
ভূতই! ঢোক গিলল মুসা। চাপা কণ্ঠে বলল, চলো, পালাই।
দাঁড়াও, ঘুরে দৌড় দেয়ার ইচ্ছেটা রোধ করল রবিন। দ্বিধা করছে মুসা, তার দিকে চেয়ে বলল, দেখি আর কোন শব্দ হয় কিনা। রেকর্ড করে নেব। কিশোর হলে তা-ই করত।
গোয়েন্দাপ্রধান কিশোর পাশা আসেনি ওদের সঙ্গে।
কিন্তু… থেমে গেল মুসা। ভলিউম কন্ট্রোল ঠিক করে মাইক্রোফোন বাড়ির দিকে বাড়িয়ে ধরেছে রবিন, যদি আর কোন আওয়াজ হয়।
হলো। আবার সেই আগের মতই টানা চিত্তার: ইইইইইইই-আআআআহহ।
আর না, চলো ভাগি! ঘুরে ছুটতে শুরু করল মুসা।
একা দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হলো না রবিনের, মুসার পিছু নিল সে-ও, পার্ক করে রাখা সাইকেলের দিকে।
হঠাৎ জোর করে ধরে তাদের থামিয়ে দিল কেউ।
আউউ! লম্বা এক লোকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মুসা। রবিনকে ধরেছে। বেঁটে আরেকজন।
বেশ কয়েকজন লোক যেন মাটি খুঁড়ে উদয় হয়েছে, গায়ে পড়ার আগে খেয়ালই করেনি দুই গোয়েন্দা। চিৎকার শুনে বোধহয় দেখতে এসেছে লোকগুলো, কি হচ্ছে বাড়িতে।
তুমি তো মিয়া ফেলেই দিয়েছিলে আমাকে, মুসাকে বলল লম্বা লোকটা।
কিসের চিৎকার? জিজ্ঞেস করল বেঁটে লোকটা রবিনকে। দেখলাম দাঁড়িয়ে ছিলে, তারপরই দৌড় দিলে।
জানি না, বলল মুসা, ভূত ছাড়া আর কি?
ভূত? বোকা কোথাকার। মানুষের চিৎকার। কেউ বিপদে পড়েছে।
একই সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল পাঁচ-ছয়জন লোক, মুসা আর রবিনের উপস্থিতি ভুলেই গেল। নানারকম মন্তব্য করছে ওরা। সব কজনই ভদ্রলোক, অন্তত পোশাকে আশাকে তা-ই মনে হচ্ছে। বোধহয় প্রতিবেশী, রাতের বেলা পোড়ো বাড়িতে চিৎকার শুনে তদন্ত করে দেখতে এসেছে।
চলুন, ঢুকে দেখি, প্রস্তাব দিল একজন। অস্বাভাবিক ভারি কণ্ঠ, জোরে জোরে কথা বলে। চাঁদের দিকে পেছন করে রয়েছে, লোকটার চেহারা স্পষ্ট দেখতে পেল না রবিন, তবে গোঁফ আছে দেখা যাচ্ছে। বাড়ি ভাঙা হচ্ছে শুনে দেখতে এসেছিলাম। পুরানো বাড়ি, যদি কিছু বেরোয়-টেরোয়? ….চিৎকার শুনেছি, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইট খসে পড়েছে কারও মাথায়।
পুলিশকে খবর দেয়া দরকার, বলল আরেকজন। কণ্ঠে দ্বিধা। পরনে চেককাটা স্পোর্টস জ্যাকেট। ওরা ঢুকে দেখুক কার কি হয়েছে।
নিশ্চয়ই কেউ ব্যথা পেয়েছে, বলল ভারি কণ্ঠ। চলুন, দেখি সাহায্য করতে পারি কিনা। পুলিশের জন্যে দেরি করলে মরেও যেতে পারে।
ঠিকই বলেছেন, সায় দিল ভারি লেন্সের চশমা পরা একজন। চলুন, আগে আমরাই গিয়ে দেখি।
আপনারা যান, আমি পুলিশ ডেকে আনছি, বলল চেক-জ্যাকেট।
একজনের সঙ্গে ছোট এক কুকুর, কুকুরের গলার চেন ধরে দাঁড়িয়ে চুপচাপ দেখছিল এতক্ষণ বাড়িটাকে। চেক-জ্যাকেটকে ডেকে বলল, আরে কই যাচ্ছেন, সাহেব? পেঁচার ডাকও হতে পারে। শেষে লোক হাসাবেন তো। থামুন।
থেমে গেল চেক-জ্যাকেট, দ্বিধা করল, ঘুরল। ঠিক আছে…
নেতৃত্ব দিল বিশালদেহী একজন লোক, কৌতূহলী জনতার সব কজনের মাথাকে ছাড়িয়ে গেছে তার মাথা, সেই অনুপাতে শরীর। বলল, আসুন, সবাই। ছসাতজন আমরা, টর্চও আছে। ঢুকে দেখি, তেমন কিছু দেখলে পুলিশ ডাকা যাবে। এই যে, ছেলেরা, বাড়ি যাও, তোমাদের আসতে হবে না।
পাথরে তৈরি পথ ধরে গটগট করে হেঁটে চলল সে। এক মুহূর্ত দ্বিধা করে অনুসরণ করল অন্যেরা। কুকুরের মালিক আর চেক-জ্যাকেট রয়েছে সবার পেছনে, নির্ভয় হতে পারছে না।
এসো, রবিনের হাত ধরে টানল মুসা, বাড়ি চলে যাই।
কিসের শব্দ না জেনেই? রবিন যেতে চাইছে না। কিশোর কি ভাববে? তার পিন-মারা সইতে পারবে? আমরা গোয়েন্দা, এভাবে চলে যাওয়া উচিত না। তাছাড়া এখন আর ভয় কি? অনেক লোক।
লোকগুলোর পেছনে রওনা হলো রবিন। মাথা নেড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুসা তার পিছু নিল।
বাড়ির মস্ত সদর দরজায় এসে দাঁড়াল লোকগুলো। এখনও দ্বিধাগ্রস্ত। অবশেষে দরজায় ঠেলা দিল বিশালদেহী লোকটা। খুলে গেল পাল্লা। ওপাশে গাঢ় অন্ধকার।
টর্চ জ্বালান, বলল নেতা। দেখি কি আছে।
নিজের হাতের টর্চ জেলে ভেতরে ঢুকে পড়ল সে। অন্ধকার চিরে দিল আরও তিনটে উজ্জ্বল আলোক রশ্মি। লোকগুলো সব ঢোকার পর ওদের অলক্ষে নিঃশব্দে ভেতরে পা রাখল দুই গোয়েন্দা।
বিরাট এক হলরুম। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আলো ফেলে দেখতে লাগল লোকেরা। বিবর্ণ সিল্কের কাপড়ে দেয়াল ঢাকা, কাপড়ে আঁকা প্রাচ্যের নানারকম দৃশ্যের রঙও চটে গেছে জায়গায় জায়গায়।