- বইয়ের নামঃ ফাউণ্ডেশন্স এজ
- লেখকের নামঃ আইজাক আসিমভ
- প্রকাশনাঃ সন্দেশ
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
ফাউণ্ডেশন্স এজ
১. কাউন্সিলম্যান
ফাউণ্ডেশন্স এজ (১৯৮১) – সায়েন্স ফিকশন
মূল : আইজাক আসিমভ
অনুবাদ : নাজমুছ ছাকিব
কাউন্সিলম্যান
০১.
আমি বিশ্বাস করি না। সেলডন হলের চওড়া সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে গোলান ট্র্যাভিজ কথাগুলো বলল। দূরে টার্মিনাস সিটি সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে।
টার্মিনাসের আবহাওয়া মৃদুভাবাপন্ন, স্থল / জলের অনুপাত অনেক বেশি। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তির কারণে এটা হয়ে উঠেছে আরো বেশি আরামদায়ক এবং ট্র্যাভিজের মতে পুরোপুরি নিরানন্দ।
আমি এর কোনোটাই বিশ্বাস করি না। হেসে কথাগুলো আবার বলল ট্র্যাভিজ তারুণ্যদীপ্ত মুখে দুধসাদা দাঁতগুলো ঝকমক করে উঠল। ট্র্যাভিজ লম্বা। ঢেউ খেলানো লম্বা কালো চুল। সব সময় নরম ফাইবারের স্যাশ পড়ে।
তার সঙ্গী এবং সহকর্মী কাউন্সিলম্যান মানলী কম্পর অস্বস্তির সাথে মাথা নাড়ল। কম্পরের চুল মাখনহলুদ, চোখ নীল। পোশাক-আশাক সব সময় এলোমেলো। সরাসীরা মূলত দুই শব্দের নাম ব্যবহার করে। কম্পর-এর নাম তিন শব্দে।
কি বিশ্বাস করো না, ট্র্যাভিজ? সে জিজ্ঞেস করল! এই শহর আমরা রক্ষ করেছি, সেটা?
আরে না, টার্মিনাল নিরাপদ থাকবে : সেন চশ বছর আগেই জানতেন। এ-ও জানতেন যে আমরা খুব ভালোভাবেই এই শহর রক্ষা করতে পারব।
কম্পর গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলল, দেখ, এই কথাগুলে! শুধু তার কাছে বললে, কোনো সমস্যা নেই : কিন্তু চিৎকার করে লোকজনের সামনে বললে, তখন সত্যিকথা বলতে কি আমি তোমার আশেপাশে থাকতে চাই : কারণ ঠিক জানিনা ওরা কতখানি নিখুঁতভাবে রশি দিয়ে আঘাত করতে পারে।
ট্র্যাভিজের হাসি মলিন হলে! ন! ৷ টার্মিনাস নিরাপদ এই কথাগুলো বললে কোনো দোষ হবে। আর এই শহর আমরা রক্ষা করেছি কোনো যুদ্ধ ছাড়াই।
যুদ্ধ করার মতো কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না। কম্পর বলল।
তুমি সিভিল ওয়ারের কথা শোননি কম্পর?
রাজধানীর ভিতরে সিভিল ওয়ার?
এই প্রশ্নই সেলডন ক্রাইসিস তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। এই কারণেই হ্যাঁনিস এর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার খতম হয়ে গেছে। তুমি আমি কাউন্সিলের মেম্বার হয়েছি। তারপরও ব্যাপারটা এখনো ঝুলে আছে- ট্র্যাভিজ ভারসাম্য রাখার মতো করে দুটো হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিল।
ট্র্যাভিজ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার চারপাশে রয়েছে সরকারের সদস্য, মিডিয়ার লোকজন, সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ যাদেরকে সেলডনের প্রত্যাবর্তন ( অথবা তার ইমেজের প্রত্যাবর্তন) দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাই নিচে নামছে, কথা বলছে, হাসছে, সব কিছুর নির্ভুলতা নিয়ে উৎফুল্ল। সেলডনের প্রশংসায় মুখর।
ট্র্যাভিজ কোনোকিছুই লক্ষ্য করছে না। কম্পর দুই ধাপ নিচে নেমে দাঁড়িয়ে পড়েছে। চল যাই, মিটিং শুরু হবে।
এখনই না, দেরী আছে। তাছাড়া মেয়র ব্র্যান্নোর ভাষণ শোনার কোনো ইচ্ছা নেই। চলো বরং শহর দেখি।
দেখেছি। গতকালও দেখেছি।
কিন্তু পাঁচশ বছর আগে যখন এই শহর তৈরি হয়, তখন দেখেছ।
চারশ আটানব্বই বছর আগে, কম্পর স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভুল শুধরে দিল। ঠিক দুই বছর পরে হেমিমিলেনিয়াম উৎসব হবে। আশা করি ব্র্যান্নো তখনো গদিতে থাকবে।
আশা করি, ট্র্যাভিজ শুকনো গলায় বলল। কিন্তু পাঁচশ বছর আগে টার্মিনাস ছিল একটা শহর। একটা ছোট শহর। অধিবাসী ছিল একদল লোক, একটা এনসাইক্লোপেডিয়া তৈরি করছিল। যা কখনো শেষ হয়নি।
অবশ্যই শেষ হয়েছে।
এখন যে এনসাইক্লোপেডিয়া আমরা ব্যবহার করি, তখন এটা ছিলনা। এখন পুরোটা রয়েছে কম্পিউটারে এবং প্রতিদিন সেটা সংশোধন করা হয়। অসম্পূর্ণ মূল কপি তুমি দেখেছ?
হার্ডিন মিউজিয়ামে যেটা রয়েছে?
স্যালভর হার্ডিন মিউজিয়াম অফ অরিজিন–পুরো নাম বল। দিন-তারিখের ব্যাপারে তুমি যখন এত নিখুঁত। দেখেছ?
দেখা উচিত ছিল?
না তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছুনা। যাই হোক আসল কথা হচ্ছে–একদল এনসাইক্লোপেডিষ্ট পাঁচশ বছর আগে এই ছোট শহরের ভিত্তি তৈরি করে এমন এক বিশ্বে যেখানে ধাতুর নিজস্ব উৎপাদন নেই। যে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে সেটা বাকী গ্যালাক্সি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। গ্যালাক্সির একেবারে শেষ প্রান্তে অবস্থিত। আর এখন আমরা উন্নত বিশ্ব। পুরো গ্রহই বিশাল এক পার্ক। সব কিছুর কেন্দ্র এখন আমরাই।
পুরোপুরি না। কম্পর বলল। এখনো আমাদের সূর্য সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং গ্যালাক্সির শেষপ্রান্তে রয়েছে।
তুমি না ভেবেই বলছ। যে সেলডন ক্রাইসিস শেষ হয়েছে তার মূল ব্যাপারটাই এখানে। আমরা টার্মিনাস নামের এই ছোট বিশ্বের চেয়েও বড় কিছু। আমরা ফাউণ্ডেশন-গ্যালাক্সির শেষ প্রান্ত থেকেই আমাদের ক্ষমতা পুরো মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ আমরা আসলে বিচ্ছিন্ন নই–অবস্থান ছাড়া। অবস্থান খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না।
ঠিক আছে। কম্পর বলল, কোনো আগ্রহ বোধ করছে না। সে আরো একধাপ নামল।
ট্র্যাভিজ এমনভাবে হাত বাড়ালো যেন বন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে চায়। তুমি বুঝতে পারছ না কম্পর। এই যে বিশাল সব পরিবর্তন আমরা সেগুলো মেনে নিতে পারছি না। মনে-প্রাণে আমরা অতীতে ফিরে যেতে চাই–সেই বীর নায়ক আর পবিত্র সন্ন্যাসীদের যুগে।