- বইয়ের নামঃ সোনালী
- লেখকের নামঃ নিমাই ভট্টাচার্য
- প্রকাশনাঃ দে’জ পাবলিশিং (ভারত)
- বিভাগসমূহঃ উপন্যাস
১. খোকন থমকে দাঁড়িয়ে বলল
খোকন ওকে দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে বলল, কী আশ্চর্য! তুই শাড়ি পরেছিস!
সোনালী ওকে প্রণাম করে সুটকেশটা হাতে নিয়ে বলল, তুমি কি ভেবেছ আমি চিরকালই ছোট থাকব?
খোকন ড্রইংরুম পার হয়ে ভিতরের দিকে যেতে যেতে বলল, না, না, তুই মস্ত বড় হয়েছিস।
সোনালী সঙ্গে সঙ্গে খোকনের মার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, আমি বড় হইনি বড়মা?
খোকনের মা হাসতে হাসতে বললেন, হয়েছিস বৈকি!
শুনলে তো খোকনদা?
এখন আমি এসে গেছি। এখন আর বড়মা বা জ্যাঠামণিকে তেল দিয়ে লাভ নেই। এখন আমাকেই তেল দে।
সোনালী ঘরের একপাশে সুটকেশটা রেখে রান্নাঘরের দিকে যেতে যেতে নির্বিকার হয়ে বলল, আমি কাউকে তেল দিই না।
বাজে ফড়ফড় না করে চা দে।
সোনালী রান্নাঘরে চলে যেতেই খোকন বলল, দেখো মা, যত দিন যাচ্ছে সোনালীকে দেখতে তত সুন্দর হচ্ছে।
ওকে দেখে তো কেউ ভাবতেই পারে না ও আমাদের মেয়ে না।
খোকন হেসে বলল, তুমি ওকে যা সাজিয়ে-গুজিয়ে রাখো…।
বাজে বকিস না। ওকে দেখতেই ভালো। একটা সাধারণ শাড়ি-ব্লাউজ পরলেও ওকে দেখতে ভালো লাগে।
খোকন মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি যাই বলল মা, তুমি ওকে আদর দিয়ে দিয়েই…
তুই বাড়িতে এসেই আমার পিছনে লাগবি না।
সোনালী চা নিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই বলল, তোমার স্বভাব আর কোনোদিন বদলাবে না খোকনদা।
ঠাকুমা-দিদিমার মতন কথা বলবি তো এক থাপ্পড় খাবি।
আমাকে থাপ্পড় মারলে তুমিও বড়মার কাছে থাপ্পড় খাবে।
খোকন চায়ের কাপ হাতে নিতে নিতে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল, সত্যি, বাবা-মা তোকে আদর দিয়ে দিয়ে এমন মাথায় চড়িয়েছেন যে এরপর তোকে সামলানোই দায় হবে।
খোকনের মা জিজ্ঞাসা করলেন, হারে, তোর কলেজ খুলবে কবে?
কলেজ পনেরোই জুলাই খুলবে। তবে আমাকে দিন পনেরো পরেই ফিরে যেতে হবে। খোকন হাসতে হাসতে বলল, ছুটির মধ্যেই আমাদের টিউটোরিয়াল হবে।
খোকনের মা আর কিছু না বললেও সোনালী বলল, মাত্র পনেরো দিনের জন্য এত খরচা করে এলে কেন?
তোকে শায়েস্তা করতে।
যতদিন বড়মা জ্যাঠামণি আছেন, ততদিন আমার জন্য তোমাকে কিছুই করতে হবে না।
দ্যাখ সোনালী, আমি এ বাড়ির একমাত্র ছেলে।
আমি এ বাড়ির একমাত্র মেয়ে।
খোকনের মা হাসতে হাসতে বললেন, তুই ওর সঙ্গে পেরে উঠবি না। সোনালী এখন মাঝে মাঝে আমাকে আর তোর বাবাকেও শাসন করে।
সোনালী ঘর থেকে বেরিয়ে কয়েক মিনিট পরে এসেই বলল, নাও খোকনদা, এবার চান করতে যাও।
আগে আরেক কাপ চা দে।
আর চা খেতে হবে না।
কবিরাজি না করে যা বলছি শোনো।
বড়মার সামনে এই ধরনের কথা বলে?
খোকন হেসে বলে, আচ্ছা আর বলব না। তুই এক কাপ চা খাওয়া।
সোনালী রান্নাঘরের দিকে পা বাড়িয়েই পিছন ফিরে বলল, বড়মা, তুমি জ্যাঠামণিকে টেলিফোন করবে না? জ্যাঠামণি হয়ত ভাবছেন, খোকনদা এখনও আসেনি।
হ্যাঁ করছি।
.
খোকন বাথরুম থেকে বেরুতেই ওর মা ডাকলেন, খোকন খেতে আয়।
খোকন টেবিলে এসে বসতেই সনালী খেতে দিল।
তুমি খাবে না মা?
তুই খেয়ে নে। আমি আর সোনালী পরে বসব।
পরে বসবে কেন? এখনই বসো।
সোনালী মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল, তোমার মাছ বেছে দিতে দিতে বড়মার খেতে অসুবিধে হয়। তুমি নামেও খোকন কাজেও খোকন।
দ্যাখ সোনালী, আমি এ বাড়ির একমাত্র ছোট ছেলে।
তুমি কখনও এ বাড়ির একমাত্র বড় ছেলে, আবার কখনও একমাত্র ছোট ছেলে।
খোকনের মা হেসে উঠলেও খোকন ওর কথার কোনো জবাব না দিয়ে আলু-পটলের তরকারি মাখা ভাত মুখে দিয়েই বলল, তরকারিটা লাভলি হয়েছে।
খোকনের মা বললেন, সব রান্নাই সোনালীর।
ইস! কি নুন হয়েছে।
খোকনের মা হেসে উঠলেও সোনালী গম্ভীর হয়ে বলল না জেনে প্রশংসা করলে অন্যায় হয় না।
গ্রামের বুড়িদের মতন বেশ তো প্যাঁচ মেরে কথা বলতে শিখেছিস?
সোনালী হেসে বলে, যাই বলো বড়মা, খোকনদা না থাকলে বাড়িতে লোজন আছে বলেই মনে হয় না।
খোকন জিজ্ঞেস করল, তুই একলা একলা ঝগড়া করতে পারিস না?
তুমি পারো বুঝি?
আমি কি ঝগড়া করতে জানি নাকি?
খাওয়া-দাওয়ার পর কিছুক্ষণ ছেলের সঙ্গে গল্প করে খোকনের মা শুতে গেলেন। খোকন নিজের ঘরে শুয়ে শুয়ে ডাকল, সোনালী একগ্লাস জল দিয়ে যা।
সোনালী এক গেলাস জল নিয়ে ঘরে ঢুকতেই খোকন ইশারায় ওকে কাছে ডেকে বলল, দেশলাইটা আন ভো।
সোনালী এক গাল হাসি হেসে দুটো আঙুল ঠোঁটের উপর চেপে ধরে একটা টান দিয়ে বলল, ধরেছ?
বাজে বকিস না। তাড়াতাড়ি আন।
অত ধমকালে আনব না।
আচ্ছা প্লীজ আন।
সোনালী দেশলাই আনতেই খোকন সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করল।
বেশ পাকা ওস্তাদ হয়ে গেছ দেখছি।
আস্তে। মা শুনতে পাবে।
অ্যাসট্টে লাগবে না?
হ্যাঁ হ্যাঁ, প্লীজ নিয়ে আয়।
সোনালী আঁচল দিয়ে ঢেকে অ্যাসট্রে এনে জিজ্ঞেস করল, রোজ কটা খাও?
এক প্যাকেটের বেশি না।
সোনালী চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, এক প্যাকেট!
খোকন মৌজ করে টান দিতে দিতে বলল, আমি তো তবু কম খাই।
এক প্যাকেট কম হলো?
হোস্টেলের সব ছেলেরাই দুই-তিন প্যাকেট খায়।
অত সিগারেট খেলে তো টি বি হয়ে যাবে।
ওসব বাজে কথা ছেড়ে দে।
বেশি সিগারেট খাওয়া খারাপ না?
সে রকম ধরতে গেলে তো সব নেশাই খারাপ।