তাকে লক্ষ্য করে কুকুরগুলো ডাকতে ডাকতে ছুটছে। মুহুর্মুহু গুলিও ছোঁড়া হচ্ছে। তাকে একমুহূর্ত আর চোখের আড়াল করা হচ্ছে না। যেমনভাবেই হোক আজ এই বিরাট দানবটির সঙ্গে শেষ খেলা খেলে যেতে হবে।
এতক্ষণে সে ল্যাবরেটরির কাছে এসে পড়েছিল। ক্লেরভাল বললেন–ওকে ল্যাবরেটরিতে ঢুকতে দিও না। একবার ল্যাবরেটরিতে ঢুকলে আর কেউ ওকে ধরতে পারবে না, অথচ আমরা সকলেই প্রাণ হারাব।
সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র পুলিশরা হাত-বোমা ছুঁড়ে মারল। হাত-বোমা কিন্তু কয়েকবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। তারপর একবার প্রবল বিস্ফোরণে ল্যাবরেটরিতে উঠবার সিঁড়িটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ল্যাবরেটরিতে ওঠার আর কোনো উপায় রইল না।
দানবটি দারুণ আক্রোশে তখন চিৎকার করে উঠল–আঁ আঁ আঁ…
তারপর সে পিছনদিকের খাড়া পাহাড় বেয়ে নিজের জীবন তুচ্ছ করে উপরে উঠতে লাগল। যেন ওই ল্যাবরেটরির মধ্যে নিহিত আছে তার যথাসর্বস্ব–তার জীবন-প্রদীপ।
দানবটি ল্যাবরেটরির ছাদের কাছাকাছি পৌঁছুতেই নিচ থেকে বন্দুক গর্জে উঠল–দুড়ুম…দুড়ুম…দুড়ুম…।
দুটি গুলি তার পিঠে লাগল। কিন্তু তবু সে তার সংকল্প হারাল না। হিংসায় বিদ্বেষে রুক্ষ হয়ে সে আরো তাড়াতাড়ি ল্যাবরেটরিতে উঠতে লাগল। আজ তাকে চূর্ণ করে, ধ্বংস করে, লাল আগুনের লেলিহান শিখায় সমস্ত আকাশ ভরিয়ে দিয়ে তার ঘৃণিত জীবনের ওপর শত শত অত্যাচারের প্রতিফল দিয়ে সে বিদায় নেবে।
আবার গুলি ছুটল। সে কোনো রকমে ছাদের কার্নিশের উপর এল। পুলিশের গুলি অবিশ্রান্ত তার দিকে ছুটে যাচ্ছে। কতগুলো যে তার গায়ে লাগছে, বোঝা যাচ্ছে না–সে শুধু ভাষাহীন অমানুষিক চিৎকার করছে এই অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে।
তারপর সে আর পারল না, পারল না আর সশস্ত্র সভ্য মানুষের সম্মিলিত আক্রমণের বিরুদ্ধে একা নিরস্ত্র যুদ্ধ করতে–রক্তাক্ত দেহে সে কার্নিশের উপর শুয়ে পড়ল। একবার সে তার হাত তুলতে চেষ্টা করল–একবার অনুসরণকারী ক্রুদ্ধ জনতার দিকে তাকাতে চেষ্টা করল। দু-একবার তার অসাড় ঠোঁটদুটো কেঁপে উঠল। তারপর শেষবারের মতো সে তার বিধাতার কাছে এই অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে চোখ বুজল।
তখন ভোরের আকাশ স্বচ্ছ হয়ে আসছে।