মি. জ্যাকসন এই সুপারিশ গ্রহণ করে পুন পাঠ করেন এবং এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, লেখকের সাথে তিনি মোটেও একমত নন। এরপর তিনি পরবরর্তী বক্তৃতা প্রস্তুত করা জন্য তিনি নিজে নিজেই উদ্যোগী হন। এটা যেন তার একটা সন্তান। সন্তান যেভাবে আস্তে-আস্তে বড় হয়ে উঠে মি. জ্যাকসনের বক্তব্য দিন-দিন বড় হয়ে উঠতে থাকে। সংবাদ পত্রে একটি নিবন্ধ পাঠ করলে তিনি সে বিষয়টি নিয়ে এইরূপ গভীরভাবে চিন্তা করেন যে তার জ্ঞানের পরিধি দিন-দিন বাড়তে থাকে। এইভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চর্চা করতে শুরু করেন। এই বিষয় নিয়ে তিনি বন্ধুবান্ধবের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে থাকেন।
পরবর্তী সময় তিনি এমন এক বক্তব্য পেশ করেন যা তার নিজস্ব চিন্তাধারা হতে উদ্ভূত, যেন সেইটি তার নিজস্ব টাকশালে তৈরি মুদ্রা। তার বক্তব্য হয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার। লেখকের সাথে দ্বিমত পোষণ করার ফলে তার এই বক্তব্য হয় পরিপূর্ণ অর্থবহ।
এক পক্ষ কালের মধ্যেই তার বক্তব্যে সুস্পষ্ট বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। প্রস্তুতি গ্রহণ করার ফলেই এই বক্তব্যে স্পষ্টতা আসে।
আমরা এই ক্ষেত্রে আর একটি উদাহরণ উল্লেখ করতে পারি। এক ভদ্রলোক যাকে আমরা মি. ফাইন বলে অভিহিত করব, ছিলেন ওয়াশিংটনে আয়োজিত সাধারণ বক্তৃতা কোর্সের ছাত্র। অপরাহ্নে তিনি রাজধানী সম্পর্কে আলোচনায় বললেন। তিনি একটি সংবাদ পত্রের নিবন্ধ অনুসরণে রাজধানী সম্পর্কে বলেন। তার বক্তব্য অসংলগ্ন, সূক্ষ, অর্থহীন বলে প্রতীয়মান হয় কারণ তিনি এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেন নি এবং বিষয়টি তাকে আগ্রহী করে নি। বিষয়টি নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তা না করায় তার প্রকাশ ভঙ্গিও-হয়ে উঠে নিতান্ত গতানুগতিক সাধারণ। সমস্ত বিষয়টি হয়ে উঠে অনাকর্ষণীয়।
যে বক্তব্য কখনো ব্যর্থ হয় না :
এক পক্ষ কাল পরে এমন একট ঘটনা ঘটলো যা মি. ফ্লাইনের অন্তরে দাগ কাটে। ঘটনাটি হচ্ছে একটি সরকারি গ্যারেজ হতে গাড়ি চুরি। গাড়িটি চুরি হওয়ার পর তিনি পুলিশের কাছে যান এবং উদ্ধারের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। কিন্তু তার প্রস্তাব ব্যর্থ হয়। পুলিশ স্বীকার করে যে, তাদের পক্ষে অপরাধ প্রবণতা মোকাবিলা করা এবং গাড়ি উদ্ধার করা অসম্ভব। মাত্র এক সপ্তাহ আগে যে পুলিশ রাস্তায় ১৫ মিনিট অতিরিক্ত গাড়ি রাখার জন্যে মি. ফ্লাইনকে জরিমানা করেছিলেন সে পুলিশই সময়াভাবের প্রশ্ন তুলেন। পুলিশের সময়াভাবের কথা মি. ফ্লাইনকে ক্রোধান্বিত করে তুলে। তিনি অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি চিন্তা করেন, এখন তকে এমন কিছু বলতে হবে যা শুধু সংবাদ পত্র পুস্তিকায় উদ্ধৃত আছে এমন নয়, তার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা প্রসূত। তিনি নিজে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং মনে করেন যে, পুলিশকে উত্তেজিত করা গেলে কাজ হতে পারে। তিনি উত্তেজিত কণ্ঠে ওয়াশিংটনের অপরাধের ইতিহাস এবং পুলিশের ব্যর্থতার কথা প্রকাশ করতে থাকেন। এই সময় তিনি এত উত্তেজিত হয়ে পড়েন যে তিনি তাঁর পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে পঁড়িয়ে পড়েন এবং তার মুখ গহবর হতে পুলিশের বিরুদ্ধে এইরূপ গালাগলি বেরুতে থাকে যেন বিসুবিয়াসে অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে। এতে কাজ হয়। পুলিশ উত্তেজিত হয়ে অনুসন্ধানের প্রতিশ্রুতি দেয়। মি. ফ্লাইনের বক্তব্য সফল হয়। চিন্তা ও অভিজ্ঞতার ফলে জয় যুক্ত হন মি. ফ্লাইন।
প্রকৃত পক্ষে প্রস্তুতি কী?
একটা বক্তৃতা প্রস্তুতির অর্থ কি কতকগুলো নির্ভুল বাক্য লিখে নেয়া অথবা মুখস্থ করা? না। এর অর্থ কি কিছু-কিছু সাময়িক চিন্তা যা সব সময় আপনার মনে আসে না তার একত্র সন্নিবেশ? মোটেই না। এর অর্থ আপনার চিন্তা, আপনার আদর্শ, আপনার বিশ্বাস, আপনার আগ্রহের একত্র সন্নিবেশ এবং আপনার মধ্যে এরূপ চিন্তা এরূপ আগ্রহ আছে যেইগুলি আপনার প্রতিদিনের নিত্য সঙ্গী, আপনার স্বপ্নেও সহচর। আপনার অস্তিত্ব এই অনুভূতি ও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। সমুদ্রতীরে পাথর যেভাবে স্তরে স্তরে সজ্জিত থাকে এগুলোও অপনার সুপ্তমনে ঠিক সেভাবে সজ্জিত। প্রস্তুতি অর্থ চিন্তা করা, ধ্যান করা, পুনঃস্মরণ করা, যে বিষয়টি আপনার মনের দাগ কাটে তা নির্ধারণ করা। এ সবকে সাজানো। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে এগুলোকে বিশেষভাবে সাজানো। এইগুলো কিন্তু তেমন কঠিন কর্মসূচি নয়।
এ গুলো কঠিন কী? না, কঠিন নয়। বিষয়টির প্রতি সামান্য মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করলেই এ কাজটি সুসম্পন্ন হয়। ডুইট, এল, মুড়ি কীভাবে তাঁর আধ্যত্মিক ইতিহাস সৃষ্টিকারী বক্তৃতা প্রস্তুত করতেন? ”এতে গোপনীয় কিছু নেই,“ প্রশ্নের জবাবে তিনি এরূপ উত্তর দিতেন।
‘যখন আমি কোনো একটি বিষয় ঠিক করি তখন একটি বড় খামের বর্হিভাগে তাঁর নাম লিখে রাখি। আমার এই ধরণের বহু খাম আছে। কোনো বই পড়ার সময় আকর্ষণীয় কিছু দেখলে তা লিখে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের খামের মধ্যেই রেখেছি।
সব সময় আমরা সাথে একটি নোট বই থাকে এবং কোনো ধর্ম উপদেশ মূলক বক্তৃতায় নতুন কিছু শুনলে আমি তা নোট করি? অতঃপর তা আমি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের খামের মধ্যে রেখে দেই। এইভাবে এই সব কাগজ পত্র এক বছর অথবা আরো বেশি সময় পড়ে থাকে। যখন আমি ধর্ম উপদেশ মূলক বক্তৃতা দানের সিদ্ধান্ত করি তখন সংরক্ষিত সব কিছু হাতে নিই। এই সব কাগজ পত্রের তথ্য ও চিন্তা ধারা মিলিয়ে আমি আমার নতুন বক্তব্য ঠিক করি। এই বক্তব্য প্রচুর মাল-মসলায় পূর্ণ হয়। আমি সব সময় আমার ধর্ম উপদেশ মূলক বক্তৃতায় কোথাও কিছু যোগ করি। কোথাও বা কিছু বাদ দেই। ফলে আমরা বক্তব্য কখনো পুরোনো হয় না।