যখন কোনো বক্তা শ্রোতার মনে প্রভাব সৃষ্টির লক্ষ্য সামনে রেখে বক্তৃতা শুরু করেন, তখন তাঁকে এটা বুঝতে হবে যে, বক্তব্য হতে হবে তাৎপর্যবহ। সুপ্রস্তুত বক্তৃতার প্রস্তুতিতেই দেশের দশভাগের নয় ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়।
অধিকাংশ ব্যক্তি কেন এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চায় তা প্রথম পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আত্মবিশ্বাস, সাহস ও আত্মপ্রত্যয় লাভ। কথিকা বা বক্তব্য প্রস্তুত না করাই হচ্ছে বক্তৃতার জন্যে মৌলিক ভুল। ভেজা বারুদ ও খালি শেজ নিয়ে অথবা কোনোরূপ অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে সৈন্যদলের পক্ষে কি শত্রুর মোকাবেলা করা সম্ভব? একই ভাবে প্রস্তুতি না নিয়ে ভয় ভীতি ও স্নায়বিক দুর্বলতা জয় করা সম্ভব হতে পারে না। স্মরণ রাখতে হবে যে, যখন শ্রোতাদের সামনে দাঁড়ান তখন তিনি আর নিজ বাড়িতে নন। “আমি বিশ্বাস করি” লিংকন হোয়াইট হাউসে বলেছেন “আমি কখনো সংশয় মুক্ত মনে সব কিছু বলে শেষ করতে পারবো না।”
আপনি যদি আত্মবিশ্বাস লাভ করতে চান তা হলে কেন এই আত্মবিশ্বাস লাভের কাজ করেন না? ”প্রকৃত ভালবাসা” লিখেছেন আপোসেল জন ”ভীতি বিতাড়িত করে।“ প্রকৃত প্রস্তুতিও একই কাজ করে। ওয়েরেনটার লিখেছেন তিনি যখন শ্রোতাদের সামনে যাবার কথা ভাবেন তখন তার মনে হয় তিনি অর্ধ উলঙ্গ ও অপ্রস্তুত হয়ে উঠেছেন।
কেন আমরা আমাদের বক্তব্য অধিকতর যত্নসহকার প্রস্তুত করি না? কেন? কেহ কেহ কী প্রস্তুত কীভাবে পরিষ্কার কি তা বুঝতে পারেন না এবং কীভাবে দক্ষতার সাথে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন তাও বুঝে না। অন্যরা সময়াভাবের কথা বলেন। সুতরাং অত্র অধ্যায়ে আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব।
প্রস্তুতির সঠিক পথ :
প্রস্তুতি কী? বই পড়া। এটি একটি পথ, তবে শ্রেষ্ঠতম পথ নয়। বই পড়া প্রস্তুতিতে সহায়তা করবে, কিন্তু কোনো বক্তা যদি শুধু বই পড়ে, বইতে যাহা আছে সরাসরি বই এর ভাষায় তা পেশ করেন, তা হলে শ্রোতারা সন্তুষ্ট হয় না। সরাসরি বুঝতে না পারলেও তারা একটা কিছুর অভাব অনুভব করেন। বক্তার বক্তব্যে কিসের অভাব আছে স্পষ্টভাবে তারা তা না বুঝলে এই বক্তব্যে তাদের অনুপ্রাণিত করে না। কয়েক বছর আগে এই লেখক নিউইয়র্ক সিটি ব্যাঙ্কের কর্মকর্তাদের জন্য একটি সাধারণ কোর্স পরিচালনা করেন। অনেক বিষয় ছিল যেগুলি সম্পর্কে অংশগ্রহণকারীরা অনেক কিছু জানতে চেয়েছেন। কেননা এত দিন নিজ-নিজ ব্যক্তিগত চিন্তাধারায় কাজ করেছেন নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে সব কিছুর বিচার করেছেন এবং তাদের কর্মপদ্ধিতে অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো কিছু ছিল না। এইভাবে তারা চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন। ফলে বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করা তাদের কারো পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
পাইন বিষলতার আচ্ছাদনের জন্য পর্বত তাদের দৃষ্টির অগোচরে পড়ে গেছে। এই গ্রুপ প্রতি শুক্রবার ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত ক্লাসে বসতেন। এক শুক্রবার এই গ্রুপে সাথে এক ভদ্রলোক, যাকে আমরা পরিচিতির জন্য মি. জ্যাকসন বলে অভিহিত করবো, অফিসে বসে ঘড়িতে সাড়ে চারটা বেজেছ দেখতে পেলেন। সেদিন তার বক্তৃতা করার কথা ছিল, কিন্তু তিনি অপ্রস্তুত। এখন তিনি কী করবেন? তিনি আস্তে-আস্তে তার অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন, স্টল থেকে ম্যাগাজিনের একটি কপি কেনেন, সংক্ষিপ্ত পথ হেঁটে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কে আয়োজিত ক্লাসে উপস্থিত হন।”সাফল্য লাভে আপনার মাত্র ১০বছর সময় লাগবে।” শীর্ষক তিনি একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। তিনি এই বিষয়টির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এটি পাঠ করে নি, বরঞ্চ তাকে কিছু বলতে হবে এই জন্য তিনি এই নিবন্ধটি পাঠ করেন।
এক ঘণ্টা পর এই নিবন্ধটি ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি উঠে দাঁড়ান।
এর ফল কী হল? পরিণতি কী হল, তিনি যা বলতে চাইছিলেন তা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারলেন না। শুধু স্পষ্টভাবে বললেন, আমি বলতে চাই যে, তিনি চেষ্টা করলেন, কিন্তু তিনি এই নিবন্ধের বিষয়বস্তু তিনি নিজে বুঝেন নি, হৃদয়ঙ্গম করেন নি সুতরাং তিনি তা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলেন। তিনি যে বিষয়টি বুঝেন নি শ্রোতারা সে বিষয় তার বক্তব্য হতে বুঝে নিবে কীভাবে? এই নিবন্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি বারবার বললেন, লেখক এটা বলতে চেয়েছেন, ওটা বলতে চেয়েছে। এই বক্তব্য কিন্তু মি. জ্যাকসনের নয়। সুতরাং গ্রন্থকার বলেন, মি. জ্যাকসন, যে লেখক এই নিবন্ধটি লিখছেন তিনি এখানে উপস্থিত নেই। সুতরাং আমরা তার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আমরা আগ্রহী নই, কারণ আমরা তাঁকে দেখছি না কিন্তু আমরা আপনার চিন্তাধারা সম্পর্কে আগ্রহী। আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী চিন্তা করছেন বলুন, অন্যে কী বলেছেন তা বলার প্রয়োজন নেই। এখানে মি. জ্যাকসনের বক্তব্য অধিক প্রয়োজন।
যে বিষয়টি আজ পড়েছেন সেটি আগামী সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত করুন। তখন নিবন্ধটি আবার পড় ন এবং নিজেকে নিজে জিজ্ঞাসা করুন আপনি লেখকের সাথে একমত অথবা কতটুকু ভিন্নমত পোষণ করেন। তা করতে হলে লেখকের প্রবন্ধটি আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্লেষণ করতে হবে। যদি আপনি লেখকের সাথে একমত না হন তা হলে কারণ ব্যাখ্যা করুন। এই নিবন্ধের মূল বক্তব্য ধরে নিয়ে আপনার বক্তৃতা শুরু করুন।