একটি বাক্য একশত চার বার পুনর্লিখন :
আপনি যা বলতে চান তা সংক্ষেপে স্পষ্টভাবে বলতে চেষ্টা করুন। এটা সব সময় তেমন সহজ নয়-অভিজ্ঞ লেখকের জন্যেও এটা সহজ নয়। কেনী হাস্ট আমাকে বলেছিলেন যে, তিনি সময়-সময় তাঁর বাক্যসমূহকে ভাব থেকে একশত বার পর্যন্ত লিখেন। তিনি বলেন, আমার সাথে আলাপের কয়েকদিন আগে তিনি একটি বাক্য একশত চার বার লিখেছেন? মার্বেল উরনার বলেছেন যে, তিনি সময়-সময় দীর্ঘ একটি অপরাহ্নে সংবাদপত্রের একটি মাত্র বাক্য শিখেন।
সঠিক শব্দ চয়নের জন্যে রিচার্ড হার্ডিং ডেভিস কীভাবে চেষ্টা চালাতেন তা মরিস ব্যক্ত করেছেন :
বহু ফ্রেজ নিয়ে তিনি বাক্য বাঁধনের চেষ্টা করতেন এবং সর্বশেষ যেটি তাঁর কাছে অর্থবহ বলে মনে হত সেটিই ব্যবহার করতেন। ফ্রেজ অধ্যায় পৃষ্ঠাটি এবং এমনকি সমগ্র গল্পটি তিনি বারবার লিখতেন। স্মরণ রাখার লক্ষ্য সামনে রেখে তিনি লিখতেন। ফটকের কাছ দিয়ে যে যান বাহনটি চলে গেল তার সম্পর্কে লিখতে গেলে তিনি শুধু সেই যানবাহনটির আকার, রং আকৃতির কথা লিখতেন না, যানবাহনের ইতিহাস লিখতেন যতক্ষণ পর্যন্ত না পাঠকদের সামনে যানবাহনটির ছবি স্পষ্ট করে তুলতে পারতেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি লিখতেন। এখন কি ছবিটি স্বচ্ছ? তিনি প্রশ্ন করতেন। এতেও স্পষ্ট না হলে তিনি আবারো লিখতেন, নতুন ভাবে নতুন-নতুন শব্দ ব্যবহার করে। ফলে পাঠক তাঁর লেখা পাঠ করে যানবাহন সম্পর্কে সহজে সঠিকভাবে জানতে সক্ষম হত।
আমাদের মধ্যে অনেকেই নতুন-নতুন শব্দ চয়নের সময় দিতে পারি না অথবা তেমন আগ্রহীও হই। উদাহরণগুলো উল্লেখ করে এটা দেখান হল যে নামী লেখকগণ কীভাবে সঠিক শব্দ চয়ন ও তা প্রয়োগ করেন। এটা ছাত্রদের ভাষা শুদ্ধভাবে শিখতে উৎসাহিত করবে বলে আশা করা যায়। তবে বক্তৃতা করার সময় আগে চিন্তা না করে নতুন-নতুন শব্দ ব্যবহারের চিন্তা সুস্থতার লক্ষণ নয়। নতুন শব্দ প্রয়োগ করতে বক্তৃতা মঞ্চে দাঁড়ানোর আগে সে সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। এটা কি সব বক্তা করেন? না, করেন না, করা সম্ভব হয় না।
মিল্টন আট হাজার শব্দ ব্যবহার করেছেন, শেক্সপীয়র ব্যবহার করেছেন পনের হাজার শব্দ। একটি স্টান্ডার্ড অভিধানে আছে ৫০ হাজার শব্দ। সাধারণ হিসাবে প্রতিটি মানুষ গড়ে দুহাজার শব্দ মুখস্থ রাখেন। এর মধ্যে কিছু আছে ক্রিয়াপদ, কিছু সংযোগরক্ষাকারী শব্দ, কিছু বিশেষ্য আর কিছু বিশেষণ। আমি কিছুকাল কলরেডোতে অতিবাহিত করেছি। এই সময়টার কথা আমি কখনো ভুলবো না। একদিন আমি দেখলাম যে একজন মহিলা কুকুরের জন্যে যে বিশষণ ব্যবহার করছেন কনসার্ট পার্টিকেও সেই বিশেষণে ভূষিত করছেন। এর কারণ সীমিত শব্দ ভাণ্ডার। সীমিত শব্দ ভাণ্ডারের জন্যে তিনি কুকুরকেও বলছেন বিউটিফুল, ক্লনসার্ট পার্টিকেও বলছেন বিউটিফুল!
তার শব্দ ভাণ্ডার যদি সীমিত না হত তাহলে তিনি বিউটিফুল এর স্থলে কি শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন? তিনি ব্যবহার করতে পারেন বিউটিয়াস, হ্যাঁন্ডসাম, প্রেটি, লাভলী, গ্রেসফুল, এরিজেন্ট, একসকুইজিট, ডেলিকেট, ডেইনটি প্রভৃতি বিশেষণ।
শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে ঠিক একই অর্থের বিভিন্ন বিশেষণ স্থল ও ক্ষেত্রের সাথে সঙ্গতি রেখে ব্যবহার করা যায়।
এ প্রসঙ্গে আমি রোগেট এর ‘ট্রেজারী অব ওয়ার্ডস’ বই এর কথা বলব। আমি কাজ করার সময় অভিধান যেভাবে ব্যবহার করি এটিও ঠিক সমভাবে ব্যবহার করি।
এটি গ্রন্থাগারের বা পাঠাগারের বুক শেলফ এ ফেলে রাখার মতো বই-নয়। এটা অভিধানের মতো সব সময় ব্যবহার যোগ্য বই? আপনার বক্তৃতা প্রস্তুতি কালে অভিধান ব্যবহার করুন। যে কোনো প্রতিবেদন রচনা কালেও ব্যবহার করুন অভিধান, দৈনিক ব্যবহার করুন, ফরে আপনার শব্দ ভাণ্ডার সহজে বেড়ে যাবে।
জীর্ণ বাগবৈশিষ্ট্য পরিহার :
শুধুমাত্র সঠিক নয়, মূল ব্যবহারের চেষ্টা করুন, যা দেখবেন তা বলার সাহস রাখুন। উদাহরণ স্বরূপ বন্যার পর কতিপয় ব্যক্তি বন্যার ঠাণ্ডাকে শশার সাথে তুলনা করেন। এটা নিতান্ত তাজা বাক্য বিধায় এটা গ্রহণ যোগ্য ও আকর্ষণীয়।
ঠাণ্ডা সম্পর্কে কতিপয় উদাহরণ উদ্ধৃত করা যাচ্ছে। এগুলো কি সহজে গ্রহণযোগ্য ও হৃদয়গ্রাহী নয়?
ব্যাঙের মতো ঠাণ্ডা।
সকালের হট ওয়াটার ব্যাগের মতো ঠাণ্ডা।
ভেড়ার মতো ঠাণ্ডা।
মন্দিরের মতো ঠাণ্ডা।
গ্রীনল্যান্ডের বরফ গলা পাহাড়ের মতো ঠাণ্ডা।
ক্লারিজের মতো ঠাণ্ডা।
লবণের মতো ঠাণ্ডা।
কেঁচোর মতো ঠাণ্ডা।
প্রত্যুষের মতো ঠাণ্ডা।
শরতের বৃষ্টির মতো ঠাণ্ডা।
সুতরাং এভাবে চিন্তা করে ঠাণ্ডা সম্পর্কে আরো বহু অর্থবহ আকর্ষণীয় উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
স্টাইল সম্পর্কে একদা আমি কেথেলিন মরিসকে প্রশ্ন করতে তিনি উত্তর দেন ”খ্যাতনামা লেখকদের গদ্য পাঠ এবং তাতে ব্যবহৃত ফ্রেজ কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা দেখে নিজের বাক্যের উন্নয়নই প্রকৃষ্ট পন্থা।”
একজন ম্যাগাজিন সম্পাদক একবার আমাকে বলেছিলেন যে, কোনো লেখক তার কাছে প্রকাশের জন্যে কিছু পাঠালে তাতে একাধিক উদ্ধৃতি দেখলে তা তিনি লেখকের কাছেই ফেরত পাঠাতেন। কারণ তিনি মনে করেন যে প্রকাশের যার মৌলিকত্ত্ব নেই চিন্তারও তার মৌলিকত্ত্ব থাকতে পারে না।