এবং এটা হচ্ছে লেখা শেখার পদ্ধতি। এর দ্বারা লাভবান হোন বা না হোন, এই পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। কীটস এই পদ্ধতিই অনুসরণ করে ছিলেন এবং তার সৃষ্ট সাহিত্য অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সম্পদ।
এই পদ্ধতি অনুসরণ কষ্টকর। এতে ব্যর্থতা আসতে পারে? তবে এটা সত্য যে ব্যর্থতাই সাফল্যের চাবিকাঠি।
আইনজীবী হতে আকাঙ্ক্ষী একজন তরুণকে লিংকন লিখেছিলেন : ‘বই সংগ্রহ কর, তা পাঠ কর এবং যত্ন সহকারে তা অধ্যয়ন কর। কাজ, কাজ এবং কাজই হচ্ছে প্রধান বিষয়।”
কী বই? আর্নল্ড ব্যানেট-এর ‘দিনের চব্বিশ ঘণ্টা কীভাবে কাটাবেন’ বই দিয়ে শুরু করুন। এই বই পড়ে আপনি প্রয়োজনীয় সকল বিষয় জানতে পারবেন। এটা পড়ে জানতে পারবেন, প্রতিদিন কতটুকু সময় আপনি নষ্ট করেছেন, কীভাবে অপচয় বন্ধ করা যায় এবং কীভাবে সময়ের ব্যবহার সম্ভব।
সমগ্র বইটি ১০৩ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট। একসপ্তাহে সহজে আপনি এটা শেষ করতে পারবেন। প্রতিদিন সকালে ২০ পৃষ্ঠা কেটে নিয়ে পেছনের পকেটে রাখুন। প্রতিদিন সকালে আপনি যে ২০ বা ৩০ মিনিট কাল সংবাদ পত্র পাঠ করেন তা হতে কিছু সময় কেটে দিয়ে বইটি পাঠ করুন, সহজে পাঠ পর্ব শেষ হবে।
“টেসিটাস ও থুসি ডিভেস এবং নিউটন ও ইউক্লিড পাঠের জন্যে আমি সংবাদ পত্র পাঠ ছেড়ে দিয়েছিলাম।” লিখেছেন থমাস জেফারসন, “এবং আমি অত্যন্ত আনন্দ লাভ করি?” আপনি কী বিশ্বাস করেন যে, সংবাদপত্র পাঠের সময় কমিয়ে উন্নত মানের বই পড়ে আপনি এক মাসের মধ্যে জ্ঞানী ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারেন? আপনি এভাবে একমাস চেষ্টা চালান, বাসের জন্যে অপেক্ষা কালে, খাবার টেবিলে বসে খাবার আসার জন্যে অপেক্ষা কালে আপনি পড়েন না কেন?
এভাবে ২০ পৃষ্ঠা শেষ করার পর আরো ২০ পৃষ্ঠা এইভাবে কেটে নিন। এভাবে সমস্ত বই শেষ করার পর খোলা পৃষ্ঠাগুলোকে আবার বাঁধাই করে নিন। অতঃপর মনে মনে বইয়ের সমগ্র বিষয়টি আলোচনা করুন এবং বইটি বুক শেলফ-এ রেখে দিন।
‘দিনের ২৪ ঘন্টা কীভাবে কাটানো যায়’ পাঠ করার পর আপনি একই লেখকের মানব যন্ত্র বই সম্পর্কে আগ্রহী হতে পারেন। এটা পাঠ করাও প্রয়োজন। এই বইতে কী বলা হয়েছে তা দেখার জন্যে এটি পড়তে বলা হচ্ছে না। বরঞ্চ কীভাবে বলা হয়েছে তা দেখার জন্যই এটি পাঠের সুপারশি করা হচ্ছে। এটা পাঠে আপনার ভাষা জ্ঞান নিশ্চিত ভাবেই উন্নত হবে।
আরো কতিপয় প্রয়োজনীয় বইয়ের তালিকা দেয়া হচ্ছে : ফ্রাঙ্ক মরিসের লেখা ”দি অকটোপাস” ‘ও ”দি পিট।” এ দুটি হচ্ছে আমেরিকার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। প্রথমটিতে কালিফোর্নিয়ার গম ক্ষেতে মানব জীবনের যে বিয়োগান্ত ঘটনা ঘটেছিল তা বিবৃত হয়েছে, দ্বিতীয়টিতে শিকাগো বাণিজ্য বোর্ডের সগ্রামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। টমাস হার্ডির লেখা ‘টেল অব দ্য ডি উরবার ভিলস’ হচ্ছে একটি শ্রেষ্ঠ গল্প। নেওয়েল ডুইট হিলির, সমাজে মানুষের মূল্য এবং প্রফেসর উইলিয়াম জেমস এর ‘শিক্ষকদের প্রতি আচরণ’ বই দুটি পাঠের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী। আপনার পাঠ্য তালিকায় আন্দ্রে মরিসের লেখা শেলীর জীবনী, বায়রনের শিশুদের তীর্থ যাত্রা এবং রবার্ট লুই স্টিফেনসনের ‘বানর নিয়ে ভ্রমণ’ রাখতে পারেন।
রালফ ওয়ারডো এমারসনকে আপনার নিত্যসঙ্গী করুন। তাঁর ‘আত্মপ্রত্যয়’ লেখাটি পাঠ করুন। এটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। এটিতে লেখা হয়েছে :
যা কিছু শিখবেন তা পরিষ্কার ভাবে, স্বচ্ছভাবে-শিখুন। মুসা, প্লেটো ও মিল্টনের জ্ঞান সম্পর্কে সবাই ওয়াকেবহাল, তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে মানুষ কি বলেন তা বড় কথা নয়, মূল কথা হচ্ছে মানুষ কী চিন্তা করেন। যে আলো মানুষের অন্তরকে স্বচ্ছ করে, হৃদয় উজ্জ্বল করে, সেই আলো সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ প্রয়োজন, আমরা যে চিন্তা পরিহার করি সে চিন্তা বার-বার আমাদের মনে ফিরে ফিরে-আসে। এটা আমাদের এই শিক্ষাদান করে যে, কোনো কিছুই ফেলনা নয়, সব কিছুরই একটা প্রভাব মানব জীবন আছে। কোনো সময় কোনো আগন্তুকের অর্থহীন কোনো বাক্যও আমাদের মনকে প্রভাবিত করতে পারে, এবং তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকতে পারে।
মানুষের শিক্ষা জীবনে এমন এক সময় অসে যখন সে এটা বুঝতে পারে যে অজ্ঞানতা শত্রুতার জন্ম দেয়, অনুকরণ আত্মহত্যার সামিল এবং ভালো মন্দ সকল অবস্থার মোকাবেলার জন্যে প্রস্তুত থাকাই হচ্ছে। প্রকৃষ্ট পন্থা। পাঠকের মনে যে ধারণা আছে তা সে নিজে ছাড়া আর কেহ উপলব্ধি করতে পারে না?
স্যার হেনরী ইরভিং একশতটি শ্রেষ্ঠ বই এর নাম লিখতে বললে তিনি উত্তর দেন, ‘একশত বই এর আগে বাইবেল ও শেক্সপীয়র পাঠ করুন।‘ স্যার হেনরীর উত্তর অত্যন্ত সঠিক। ইংরেজি সাহিত্যের এ দুটি প্রশ্নবাণ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
এভাবে এগুলে কি পুরষ্কার পাবেন? আস্তে-আস্তে আপনার ভাষাজ্ঞান, শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে? কী পড়ছেন তা আমাকে বলুন, বলেছেন গ্যেটে, এবং আমি বলব আপনি কী।
আমি যে পাঠ্য সূচি দিলাম তা দীর্ঘ হলেও তা অনুসরণে আপনার সমৃদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার হবে। আপনি ইচ্ছা করলে ইমারসনের লেখা ও শেক্সপিয়রের নাটকের পকেট কপি কিনতে পারেন।
মার্ক টোয়েন পদ্ধতির গূঢ়তত্ত্ব :
কীভাবে মার্ক টোয়েন তাঁর শব্দ ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছিলেন? তরুণ বয়সে তিনি ঘোড়ার গাড়িতে করে মিশৌরী থেকে নেভার্দা পর্যন্ত সমস্ত জায়গা ভ্রমণ করেছিলেন। এই গাড়িতে যাত্রী এবং ঘোড়া উভয়েরই খাবার এবং এমনকি পানীয়জলও পরিবহন করতে হত। কাজেই যাত্রীর সাথে লটবহর নেয়া ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। এতৎসত্ত্বেও মার্কটোয়েন তার সাথে ওয়েবেস্টারের অভিধান রাখতেন। পার্বত্য পথের চড়াই উতরাই পেরোবার ক্লান্তিকর পরিস্থিতি অথবা মরুভূমি অতিক্রমের অস্বস্তিকর পরিবেশে তিনি গভীর অভিনিবেশ সহকারে অভিধান পাঠ করতেন, নতুন-নতুন শব্দ শিখতেন। এভাবে কঠোর পরিশ্রম করে তিনি তার জ্ঞান সমৃদ্ধ করেছিলেন, শব্দ সম্ভারে সমৃদ্ধ হয়েছিল তার মস্তিষ্ক।