সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, এই বক্তৃতার সমাপ্তিতে লিংকন যে ফ্রেজ প্রয়োগ করেছেন তা তার নিজেরই সৃষ্টি। কিন্তু এটা কি সত্যি? তাঁর আইন অংশীদার হেরনডন বেশ কয়েক বছর আগে লিংকনকে থিওডর পারকারের বক্তৃতা মালার একটি অনুলিপি দিয়েছিলেন। লিংকন এটি পাঠ করেন এবং এই বই এর, “গণতন্ত্র হচ্ছে সকল জনগণের স্বশাসিত সরকার বা সকল জনগণ কর্তৃক সকল জনগণের জন্যে গঠিত” এই অংশের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। থিওডর পারকার সম্ভবত এটি ওয়েবেস্টার থেকে ধার করেছিলেন, কেননা, ওয়েবেস্টার আরো চার বছর আগে হেইনের কাছে প্রদত্ত তাঁর বিখ্যাত ভাষণে বলেছিলেন, “জনগণের সরকার হচ্ছে তা যা জনগণের জন্যে গঠিত, জনগণের দ্বারা গঠিত এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করার যোগ্য।” ওয়েবেষ্টার এটি সংগ্রহ করেছিলেন সম্ভবত প্রেসিডেন্ট জেমস মনরের কাছ থেকে। কেননা মনরো এক তৃতীয়াংশ শতাব্দী আগে সরকার সম্পর্কে ঠিক এরূপ মনোভাবই প্রকাশ করেছিলেন এবং কার কাছে জেমস মনরো ঋণী? মনরোর জন্মের পাঁচ সাত বছর আগে ওয়াইক্লিফ তার ধর্মশাস্ত্র বই এর ভূমিকায় লিখেছেন, “এই বাইবেল হচ্ছে জনগণের সরকার জনগণের দ্বারা গঠিত ও জনগণের জন্য।” এবং ওয়াই ক্লিফের জন্মের ও বহু বছর আগে, খ্রিস্টের জন্মের ৪০০ বছরেরও আগে এথেন্স এর জনগণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক ভাষণে ক্লিওন”জনগণের, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্যে এক শাসকের কথা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু কোন প্রাচীন সূত্র থেকে ক্লিওন এই অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তা বিস্তৃতির অতল তলে তলিয়ে আছে।
তা হলে এটা কীভাবে নতুন হতে পারে। সুবক্তাগণ খ্যাতনামা বক্তা এবং তাদের রচনা পাঠের জন্যে কতটুকু ঋণী।
বই! এটিই হচ্ছে গোপন তথ্য। যে ব্যক্তি শব্দ ভাণ্ডার বাড়াতে পারেন সে ব্যক্তিই সাহিত্য ও সাহিত্য জগতে উত্তরণে সক্ষম হন।”কোনো গ্রন্থাগারে উপস্থিত হলে সব সময় আমার যে কথাটা মনে পড়ে, বুলেছেন জব্রাইট, “তা হচ্ছে জীবন এত সংক্ষিপ্ত যে আমার সামনে ছড়িয়ে থাকা জ্ঞান আহরণ করার সুযোগ আমার নেই।’ ব্রাইট পনের বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করে কাপড় কলে চাকুরি নেন, এবং এর পর তিনি আর কখনো স্কুলে ফেরার সুযোগ পান নি। এতৎসত্ত্বেও তিনি তার সময়ের একজন খ্যাতনামা বক্তা হতে পেরেছিলেন, তিনি খ্যাতি লাভ করেছিলেন, “ইংরেজি ভাষার উপর ব্যাপক দখলের জন্যে। তিনি পড়তেন, লিখতেন, নোট বুকে কপি করতেন এবং বাইরন, মিলটন, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, হুইটার, শেক্সপিয়ার ও শেলীর দীর্ঘ কবিতা পড়তেন এবং মুখস্থ করতেন। শব্দ ভাণ্ডার বৃদ্ধির জন্যে তিনি বার-বার, প্রতি বছর প্যারাডাইস পড়তেন।
নিজের স্টাইল উন্নত করার জন্যে চার্লস জেম ফক্স উচ্চস্বরে শেক্সপীয়র পাঠ করতেন। গ্লাডস্টোন তাঁর পড়ার ঘরকে ”শান্তির মন্দির” বলতেন এবং এতে তিনি ১৫,০০০ বই সংগ্রহ করেছিলেন। সেইন্ট অগাস্টাইন, বিশপ বাটলার, দান্তে, অ্যারিস্টোটল ও হোমারের লেখা তাঁকে বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করত বলে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। ইলিয়ড ওডেসী তাকে যেন দাসত্বে আবদ্ধ করেছিল। হোমারের কবিতা ও হোমারের সময় সম্পর্কে তিনি ছয়টি বই লিখেছিলেন।
পিটের অভ্যাস ছিল গ্রিক বা ল্যাটিন ভাষা বইয়ের এক বা দুটি পৃষ্ঠা পড়া এবং নিজস্ব ভাষায় তা অনুবাদ করা। দশ বছর ধরে দৈনিক তিনি এ কাজ এবং ”অতুলনীয় পদ্ধতিতে নিজস্ব চিন্তা ধারাকে সাবলীল ভাষা ও স্বচ্ছন্দ শব্দে প্রকাশ করার অদ্ভুত শক্তিলাভ করেন।”
ডেমোস্থেনিস থুসিডিভেস এর ইতিহাস আট বার নিজের হাতে নকল করেছিলেন। এই খ্যাতনামা ঐতিহাসিকের ব্যবহৃত পদ্ধতি শেখার জন্যে তিনি তা করেছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? দু’হাজার বছর পরে নিজস্ব স্টাইল উন্নয়নের জন্যে উড্রো উইলসন ডেমোস থেনিসের লেখা পাঠ করেছিলেন। মি. আসকুইথ বিশপ বারকেলের লেখা পাঠে সুষ্ঠু প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন।
টেনিস প্রতিদিনই বাইবেল পাঠ করতেন। টলস্টয় মুখস্থ না হওয়া পর্যন্ত খ্রিস্টের জীবনী বার-বার পড়তেন। রাস্কিনের মতো প্রতিদিনই তার সন্তানকে বাইবেলের দীর্ঘ প্যাসেজ মুখস্থ করতে এবং প্রতি বছর পূর্ণ বাইবেল শব্দ করে পাঠ করতে “প্রতিটি সিলেবল, রহস্যোৎঘাটন পূর্ব পর্যন্ত তাকে পাঠ করতে হত।” এই ভাবে শৃঙ্খলা অনুসরণের ফলে রাস্কিন তার সাহিত্যে উন্নত মানের স্টাইল প্রবর্তনে সক্ষম হয়েছিলেন।
রবার্ট লুই স্টিভেনসন ইংরেজি সাহিত্যের একজন খ্যাতনামা লেখক ছিলেন, তিনি ছিলেন লেখদের লেখক, যে স্টাইল তাঁকে খ্যাতি দিয়েছিল তা তিনি কীভাবে অর্জন করেছিলেন? সে কাহিনী তিনি নিজেই আমাদের বলেছেন। যখন আমি কোনো বই বা রচনা পাঠ করি এবং যা পড়তে আমি আনন্দ লাভ করি, যা আমরা মনেক আকর্ষণ করে, যাতে আমি নতুন আইন দেখতে পাই, আমি তা অনুকরণে সেরূপ গুণ অর্জনের জন্যে তা অনুসরণ করি। আমি ব্যর্থ হই, আবারো চেষ্টা করি, ব্যর্থ হই, আবারো চেষ্টা করি, বার-বার চেষ্টা ও ব্যর্থতার ফলে আমি স্টাইল পুরোপুরি অনুসরণ করতে না পারলেও নতুন শব্দ বুঝতে পারি, শিখতে পারি, প্রয়োগ বা ব্যবহার করতে সক্ষম হই।
তাই আমি হেজলিট, ল্যাম্ব, ওয়ার্ডওয়ার্থ, স্যার টমাস ব্রাউন, ডেফো, হাওর্টনও মন্টেইগনির ব্যবহৃত বহু শব্দ, বহু বাক্য, বহু ছন্দ সাফল্যের সাথে ব্যবহার করতে পারি, ব্যবহার করি।