একদা বাল্টিমোরে আয়োজিত বক্তৃতা শেখার একটি ক্লাসে জনৈক ছাত্র একদিন হঠাৎ দাঁড়িয়ে চেপাসেক উপসাগরে রক মাছ ধরা বন্ধ করার দাবি জানান। তিনি বলেন যে, বর্তমান পদ্ধতিতে এই মাছ। ধরা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই মাছটি বিশ্বের বুক থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। এই উপসাগরের মাছ সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না, আমি এটা জানতে আগ্রহীও ছিলাম না, কিন্তু আমার ছাত্রের বক্তব্য আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমি এবং অন্যান্য সকল শ্রোতা এই মাছটির বংশ রক্ষার জন্যে আগ্রহী হয়ে পড়ি এবং আমরা সম্মিলিত স্বাক্ষরে এটা রক্ষা করার দাবি পেশ করি কর্তৃপক্ষের। কাছে।
ইতালিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. রিচার্ড ওয়াশবর্ন চাইল্ডকে আমি একদা সাহিত্য ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণ জিজ্ঞেস করি। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন, জীবন সম্পর্কে আমি এত বেশি উত্তেজিত যে আমি তা অন্যের কাছে প্রকাশ না করে পারি না। সুতরাং আমি জনগণের কাছে তা প্রকাশ করি। একজন বক্তাও সেরূপ হলে সাফল্য নিশ্চিত।
একদা এক বক্তৃতা শুনে খ্যাতনামা বৃটিশ ঔপন্যাসিক মি. ই এফ বেনসন বলেছিলেন, বক্তৃতার শেষ অংশ তাঁর কাছে অধিকতর আকর্ষণীয় হয়েছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বক্তা নিজেও শেষ অংশ সম্পর্কে বেশি আগ্রহী।
এটা সকলের স্মরণ রাখা প্রয়োজন।
সংক্ষিপ্ত সার :
১। সাধারণ বিষয়ের বিশেষ তথ্য সম্পর্কে আমরা আগ্রহী।
২। আমাদের প্রধান আগ্রহ আমাদের নিজেদের সম্পর্কে।
৩। যে ব্যক্তি অন্যদের সম্পর্কে কথা বলে তাদেরকে আগ্রহী করে তুলতে পারেন তিনিই ভালো কথক।
৪। মানবিক কাহিনী সব সময় আকর্ষণীয় হয়। বক্তা সীমিত পয়েন্ট আলোচনা করবেন, তবে তাতে মানবিক কাহিনী যোগ করলে আকর্ষণীয় হবে।
৫। যা বলবেন সুস্পষ্ট ভাবে বলবেন, নির্দিষ্ট করে বলবেন। দরিদ্র কিন্তু সৎ না বলে ইতঃপূর্বে উল্লেখিত মার্টিন লুথারের কাহিনী স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করুন।
৬। এমন শব্দ প্রয়োগ করুন যা শ্রোতার মনে ছবির সৃষ্টি করে।
৭। বৈসাদৃশ্যমূলক ধারণা তুলে ধরে কোন বিষয় প্রকাশের চেষ্টা করুন।
৮। বক্তা যার প্রতি আগ্রহী শ্রোতাও তার প্রতি আগ্রহী হবে। তবে এর জন্যে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম কানুন নেই।
১২. উন্নত শব্দ নির্বাচন
একবার একজন ইংরেজ ফিলাডেলফিয়ায় চাকুরির সন্ধান করছিলেন। আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি চাকুরির সন্ধানে একদিন ওই শহরের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী মি. পল গিবসনের অফিসে গিয়ে উপস্থিত হন এবং তাঁর সাক্ষাৎ কামনা করেন। মি. গিবসন দূর থেকে আগন্তুককে লক্ষ্য করেন? আগন্তুকের চেহারা ছিল আকর্ষণীয়। পোশাক পরিচ্ছেদ ছিল নিতান্ত অপরিচ্ছন্ন এবং সর্বোপরি তার চলায় ফুটে ওঠেছিল চরম দারিদ্র। কিছুটা উৎসুক্য এবং কিছুটা দয়া পরবশ হয়ে মি. গিবসন আগন্তুককে সাক্ষাৎ দান করতে সম্মত হন। প্রথমে তিনি এক মুহূর্তকাল তার কথা শুনতে চান, অতঃপর মুহূর্ত হয় মিনিট এবং মিনিট হয় ঘণ্টা, তবু আলোচনা অব্যাহত থাকে, অতঃপর মি. রোল্যান্ড টেলরকে টেলিফোন করেন। ফিলাডেলফিয়ার নেতৃস্থানীয় ধনী ব্যক্তি মি. টেলর এই আগন্তুককে মধ্যাহ্ন ভোজে আমন্ত্রণ জানান এবং তার জন্যে একটি মর্যাদাপূর্ণ চাকুরির ব্যবস্থা করেন। অনাকর্ষণীয় চেহারা ও অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে কীভাবে এই আগন্তুক অল্প সময়ের মধ্যে সমাজের উঁচুস্তরের ব্যক্তিদের মন জয় করেন?
তাঁর এই সাফল্যের গুরুত্ব হচ্ছে ইংরেজি ভাষার উপর দখল। আগন্তুক ছিলেন অক্সফোর্ডের লোক, এই শহরে এসেছিলেন এক ব্যবসা মিশনে। মিশন ব্যর্থ হলে অর্থহীন ও বন্ধুহীন অবস্থায় তিনি ফিলাডেলফিয়ায় আটকা পড়েন। কিন্তু তিনি এত সুন্দরভাবে কথা বলতে পারতেন যে শ্রোতা মুহূর্তে তার ছেঁড়া জুতো, ময়লা কোটও খোঁচাখোঁচা দাড়িপূর্ণ চেহারার কথা বিস্মৃত হয়ে যেতেন। তাঁর বাচন ভঙ্গি ও শব্দ নির্বাচন অর্থাৎ সুবচন তাকে ব্যবসায়ী মহলে পরিচিত করে দেয়, এটা ব্যবসা মহলে প্রবেশের ছাড়পত্র হয়ে যায়।
এই লোকটির কাহিনী একটি অসাধারণ ঘটনা, কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে এই যে, আমরা প্রতিদিনই আমাদের বক্তব্য দ্বারা পরিচিতি লাভ করছি। আমাদের শব্দ প্রয়োগ ও ভাষা শুনে শ্রোতারা আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি জ্ঞানের কথা উপলব্ধি করতে পারছেন।
চারটি জিনিস দিয়ে আমাদের বিচার করা হয়। আমরা কী করি, কীভাবে তাকাই, কী বলি এবং কীভাবে বলি তা দিয়েই হয় আমাদের বিচার। বহুলোক আছেন, যারা স্কুল ছাড়ার পর আর কোনো নতুন শব্দ শেখেন না, যা শিখেছেন তা দিয়েই কাজ চালিয়ে যান! অপ্রচলিত শব্দই তিনি সাধারণত ব্যবহার করেন। এবং বার-বার ব্যবহার করেন? আরো আশ্চর্যের বিষয় যে, তিনি অনেক সময় ব্যাকরণের নিয়ম কানুন ও লংঘন করেন, এমন ভাষা ব্যবহার করেন যা সাধারণের বোধগম্য হয় না, আকর্ষণীয় হয় না। আমি অনেক স্নাতককে ভুল শব্দ ব্যবহার করতে দেখেছি। এই ধরনের শিক্ষিত লোক যদি ভাষা প্রয়োগে ভুল করেন তবে যে সব ব্যক্তি অর্থনৈতিক চাপে পড়ে শিক্ষা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছেন তারা কী করবেন?
কয়েক বছর আগে একজন ইংরেজের সাথে হঠাৎ আমার পরিচয় হয়। নিজের পরিচয় দিয়ে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা শুরু করেন। তিন মিনিটের মধ্যেই আমি দেখতে পাই যে তিনি ভুল ইংরেজি বলছেন, সকালে তিনি পালিশ করা জুতা পায়ে দেন, ইস্ত্রি করা কাপড় পড়েন। নিজেকে এমন নিখুঁতভাবে সাজান যাতে অন্যের দৃষ্টি তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়। তিনি যেন সম্মান পেতে পারেন। কিন্তু তিনি তাঁর ভাষাকে নিখুঁত করার চেষ্টা করে না। কথা বলার সময় কোনো মহিলা টুপি হাতে না নিলে তিনি তাকে লজ্জা দেন, কিন্তু ভুল ভাষা প্রয়োগের জন্যে নিজে লজ্জানুভব করেন না, তাঁর ভাষা প্রয়োগ দেখে শ্রোতারা এটা বুঝতে পারে যে, পোশাকে দুরস্ত হলেও তিনি সংস্কৃতিবান লোক নন।