যে বক্তব্য সব সময় দৃষ্টি আকর্ষণ করে :
আপনার বক্তব্য শুনে শ্রোতারা ক্লান্তি অনুভব করতে পারে, কিন্তু আপনি যদি শ্রোতাদের সম্পর্কে বলেন তা হলে তারা কখনো ক্লান্তি অনুভব করবে না বরং আকর্ষণ অনুভব করবে। চায়ের টেবিল বা ডিনার টেবিলে বসে ব্যক্তিত্বের কথা বলে কী রূপ হয়। যদি বলা হয় মি. এক্স এই করেছেন, মিস ওয়াই ওই করেছেন, মিসেস জেড এই করেছেন তাহলে কেহই ক্লান্ত বোধ করবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বহু স্কুলে ছাত্র সমাবেশে আমি বক্তৃতা করেছি। অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করলে ছাত্ররা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। কেহ কেহ নানাভাবে বিরক্তি উৎপাদন করে। কিন্তু বক্তৃতা কালে আমি যখন গল্প বলি, গল্পচ্ছলে আমার বক্তব্য ব্যাখ্যা করি তখন সকলেই মনোযোগী হয়।
অভিজ্ঞতা থেকে আমি দেখেছি যে বক্তৃতা কেহ শুনতে চায় না, শুনতে চায় গল্প, মানুষের গল্প, এইভাবে গল্পের ছলে বক্তৃতা করা গেলে তা হয় আকর্ষণীয়, অর্থবহ।
সুতরাং আমি ক্লাসে বক্তৃতা কালে বলতাম, আমরা কেউ বক্তৃতা শুনাতে চাই না। বক্তৃতায় আমাদের কোনো উপকার হয় না। আমরা সকলেই আনন্দ পেতে চাই সুতরাং আমাদের সবার আনন্দ পেতে হবে। স্মরণ রাখবেন যে, গল্প হচ্ছে বিশ্বের একটি শ্রেষ্ঠ আনন্দ। সুতরাং যাক আমরা আমাদের পরিচিত দুজন লোকের গল্প বলি। আলোচনা করি কেন একজন সফল হল, আর জন হল ব্যর্থ। এর পরে শ্রোতারা আমরা কথা শুনতে বিশেষ আগ্রহী হল!
একবার বক্তৃতা কোর্সে একজন ছাত্র নিজের বিষয় এবং শ্রোতাদের জন্য বিষয় নির্বাচনে ভয়ঙ্কর অসুবিধা অনুভব করল। বিষয়টি তিনি তার দুজন সহপাঠীর সাথে আলোচনা করল। তাদের মধ্যে একজন ছিল ইঞ্জিনিয়ার? সে নিজের পোশাক পরিচ্ছদ সম্পর্কে এবং নিজের শিক্ষা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিল, নিজেকে সে নিজের বাস্তব অবস্থার চাইতে বড় বলে ভাবত, সুতরাং সে গোড়া থেকে কোনো কাজ করতে প্রস্তুত ছিল না। সে কোনো কিছুতে সন্তুষ্ট হত না। পরে দেখা গেল যে, যে অবস্থায় তার উন্নতি লাভ করার প্রয়োজন ছিল সে অবস্থা বা পদমর্যাদাও সে পায় নি। অপর জন কিন্তু যে কোনো অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকত।
চিন্তা করে বক্তা পথ খুঁজে পান। তার এ দু’জন সহপাঠীকে কেন্দ্র করে এবং পরবর্তীকালে প্রথম ব্যক্তির চাইতে অনেক বেশি উন্নতিলাভ করেন। পরে তিনি লক্ষপতি হন।
বক্তা কী বললেন আমরা কি এখানে তার একটা রূপরেখা মাত্র দিচ্ছি। বক্তা তার নিজস্ব ভাষা এবং মানসিক কাহিনী দিয়ে তা আকর্ষণীয় করে তুলবেন। এভাবে চেষ্টা করলে যে ব্যক্তি তিন মিনিট বক্তৃতা করতে সক্ষম নন, তিনি একঘণ্টাও বক্তৃতা করতে পারেন যদি বিষয়টি তিনি নিজে বোঝেন। একঘণ্টা বক্তৃতা করার পরও, ভাষা যদি প্রাঞ্জল হয়, আকর্ষণীয় হয়, সুললিত হয়, শিক্ষনীয় হয়, শ্রোতারা মনে করবেন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল?
এই পদ্ধতি অনুসরণ করে সবাই লাভবান হতে পারেন। মানবিক কাহিনী হলে সকল বক্তৃতাই হয় আকর্ষণীয়। এই ধরনের বক্তৃতা কখনো ব্যর্থ হয় না।
সংগ্রামে ব্যর্থতাও বিজয়ের কাহিনী সকলে পছন্দ করে। সুতরাং ব্যর্থতা ও বিজয়ের কাহিনী সম্পর্কে বক্তৃতা শ্রোতার মনে আকর্ষণ করতে পারে।
ব্যবসায়ের কোনো ব্যক্তি কীভাবে সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছে তা বললে শ্রোতার দৃষ্টি আকৃষ্ট হবে। একদা এক ম্যাগাজিন সম্পাদক আমাকে বলেছিলেন, সকল ব্যক্তির জীবনের অজানা কাহিনী অত্যন্ত আনন্দদায়ক। সঠিকভাবে তা প্রকাশ করা গেলে তা শ্রোতার মন জয় করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাস্তব হোন : একবার এক বক্তৃতা শিক্ষা কোর্সের ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হন। তিনি তার প্রথম জীবন কাটিয়েছেন নৌবাহিনীতে। অতঃপর তিনি পড়াশোনা করে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে অধ্যাপক হন। অপর একজন ক্ষুদ্র দোকানি, রাস্তার পাশের চলন্ত গাড়িতে ছিল যার দোকন, তিনিও এই কোর্সে অংশ নেন। কোর্স চলাকালে দেখা যায় যে, দোকানি জ্ঞানী না হওয়া সত্ত্বেও তার বক্তৃতায় ডক্টরেট চাইতে অনেক বেশি মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। ডক্টর অত্যন্ত সুন্দর ভাষায় বক্তৃতা করেন। তাঁর বক্তৃতায় সংস্কৃতিবান মনের প্রতিফলন হয়, বক্তৃতায় যুক্তি থাকে। স্পষ্টতা থাকে। কিন্তু অশিক্ষিত দোকানির বক্তৃতার ভাষা সরল সুন্দর না হলেও তিনি যা বলেন তা উদাহরণ সহ বলেন, অর্থাৎ তার বক্তৃতা হয় বাস্তব। তাই দোকানির বক্তৃতা পণ্ডিতের বক্তৃতার চাইতে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়। তাই দোকানি সহজে শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
আমি এই উদাহরণটা তুলে ধরছি এই জন্য যে, আকর্ষণীয় বক্তৃতা করার জন্য উচ্চতর শিক্ষার প্রয়োজন হয় না, তা বোঝানোর জন্য যে ব্যক্তির বক্তৃতার বাস্তব উদাহরণ থাকে তার বক্তৃতার ভাষা উন্নতমানের না হলেও আকর্ষণীয় হয়।
এই নীতি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিধায় আমরা এই ক্ষেত্রে কতিপয় ব্যাখ্যা উল্লেখ করছি। আমরা আশা করব আপনারা কখনো তা ভুলবেন না, বিস্মৃত হবেন না।
বালক কালে মার্টিন লুথার অত্যন্ত একগুয়ে ও অবাধ্য ছিলেন। তাঁর শিক্ষকেরা বারবার চেষ্টা করেও চাবুক দিয়ে তাঁকে সংশোধন করতে না পেরে নিজেরাই হতবুদ্ধি হয়ে পড়তেন?