আমি এই তত্ত্বই অনুসরণ করেছি। প্রথমে আমি যে কোনো কাজেই ভয় পেতাম কিন্তু সেদিন হতে আমি ভাবতে শুরু করলাম, আমি ভীত নই, ভীতি আমার মন হতে আস্তে-আস্তে দূর হয়ে গেল। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভীতি মুক্ত হওয়া সম্ভব।
ইচ্ছা করলে আপনিও এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন। ‘যুদ্ধ’ বলেছেন মার্শাল ফেচ ”প্রতিরক্ষার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে আক্রমণ।” সুতরাং আপনার ভীতির বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করুন, প্রতিরোধের চেষ্টা করুন, সগ্রাম করুন, দৃঢ়তার সাথে তা জয় করার চেষ্টা করুন, সাফল্য অনিবার্য।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে ভীত হবেন না। বলতে যখন দাঁড়িয়েছেন, বলতে আপনাকে হবেই। আপনি বলবেন, সুতরাং এমনভাবে বলার চেষ্টা করুন যাতে শ্রোতারা বুঝতে না পারে, আপনি ঐ বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন। যা বলবেন তা দৃঢ়তার সাথে স্বচ্ছন্দ ভাষায় প্রকাশ করুন, তাহলে শ্রোতারা মুগ্ধ হবে, আপনি জয়ী হবেন।
চতুর্থত: অভ্যাস, অভ্যাস আর অভ্যাস :
এ ক্ষেত্রে আমরা সর্বশেষ যে বিষয়টি উল্লেখ করছি তা হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, এ পর্যন্ত আপনি যা পড়েছেন তা সম্পূর্ণ ভুলে গেলেও স্মরণ হবেই। বক্তৃতায় আত্মবিশ্বাস সৃষ্টির উপায় হচ্ছে বলা, বলার অভ্যাস করা। এর অর্থ হচ্ছে যে কোনো কিছু সঠিক ভাবে করতে হলে প্রয়োজন অভ্যাস, অভ্যাস আর অভ্যাস। এটিই সাফল্যের পূর্ব শর্ত।
”যে কোনো প্রাথমিক শিক্ষার্থী জড়তায় আক্রান্ত হতে বাধ্য,“ বলেছেন রুজভেল্ট। এই জড়তা হচ্ছে স্নায়বিক দুর্বলতা প্রসূত। এই জড়তার আক্রমণে যে কোনো মানুষই বক্তৃতা করতে দাঁড়িয়ে বিফল হতে পারে। শুধু প্রথম দিন নয়, এই জড়তা কাটাবার চেষ্টা না করলে বারবার এ অবস্থান সৃষ্টি হতে পারে। এই রূপ ক্ষেত্রে বক্তৃার যা প্রয়োজন তা হল সাহস নয়, স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং স্থির। মস্তিষ্কে চিন্তা করা। এটা করা অর্থাৎ স্নায়ু নিয়ন্ত্রণ ও স্থির মস্কিষ্কে চিন্তা করা নির্ভর করছে প্রচেষ্টা ও অভ্যাসের উপরে। ইচ্ছা এবং চেষ্টা করলে যে কোনো ব্যক্তিই তাঁর স্নায়ুকে সম্পূর্ণ নিজ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। এটা হচ্ছে ইচ্ছা শক্তির বারবার প্রয়োগের ব্যাপার। মনোবল যদি দৃঢ় হয় স্নায়ু নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা যদি প্রবল হয়, তবে যে কোনো ব্যক্তির মনই দৃঢ় হতে দৃঢ়তর হবে, তার ইচ্ছা শক্তির জয় হবে।
আপনি কি শ্রোতাভীতি থেকে মুক্ত হতে চান? এর কী কারণ আসুন আমরা তা জানার চেষ্টা করি।
“অজ্ঞতা ও অনিশ্চয়তাই ভীতির উৎস” বলেছেন অধ্যাপক রবিনসন্স, মনের জন্ম বইতে। অন্যভাবে এ কথা বলা যায়, আত্ম বিশ্বাসের অভাবেই ভীতি?
এর ফল কী হয়? আপনি কি করতে চান তা আপনি কি পারেন না? এবং অভিজ্ঞতার অভাবেই আপনি বুঝতে পারেন না, আপনি নিজেই জানতে করতে পারেন। আপনি বার বার সফল হলে আপনার ভীতি দূর হয়ে যাবে। জুলাই মাসের উজ্জ্বল সূর্যালোকের মতো সাফল্য জ্বলজ্বল করবে।
জলে হাবুডুবু খাওয়া ছাড়া সাঁতার শেখা যায় না, এটা সকলের কাছেই নিশ্চিত সত্য। আপনি দীর্ঘদিন হতে এই বই পড়ছেন, সুতরাং কেন চেষ্টা করে দেখছেন না, সাফল্য কতটুকু এল?
আপনি একটি বিষয় বেছে নিন, এমন বিষয় বেছে নিন, যা আপনি জানেন। ওটার ওপর তিন মিনিটের একটি কথিকা লিখুন। কয়েক বার তা নিজে-নিজে প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। অতঃপর তা নিয়ে বন্ধুদের সামনে হাজির হোন। তাদের সামনে দৃঢ়তা ও আত্মপ্রত্যয়ের সাথে প্রকাশ করুন। বক্তৃতার ভঙ্গিতে পেশ করুন।
(১) কয়েক হাজার ছাত্র এই গ্রন্থকারের কাছে লিখেছেন তারা কেন জনসমক্ষে বক্তৃতা পেশ শিখতে চান এবং শিক্ষা হতে তাঁরা কী পেতে চান। তাঁদের প্রায় সকলের বক্তব্য হচ্ছে যে কোনো সংখ্যক শ্রোতার সামনে দাঁড়াতে তাঁরা স্নায়বিক দুর্বলতা মুক্ত হতে চান, যা বলবেন সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে চিন্তা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজ বক্তব্য পেশ করে জয়ী হতে চান।
(২) এই রূপ যোগ্যতা অর্জন তেমন কষ্টকর নয়। এটা কতিপয় ব্যক্তির জন্য প্রকৃতির দান নয়। এটা গলফ খেলার যোগ্যতা অর্জনের মতো ব্যাপার। যে কোনো ব্যক্তি পুরুষ বা নারী ইচ্ছা করলে এবং আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে এই যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন।
(৩) বহু অভিজ্ঞ বক্তা শ্রোতাদের সামনে যেরূপ সহজ ও সাবলীলভাবে বক্তব্য পেশ করতে পারেন, ব্যক্তি বিশেষের সাথে কথোপকথনে সেরূপ সহজভাবে মনের কথা প্রকাশ করতে পারেন না, এরূপ ক্ষেত্রে বহু সংখ্যক ব্যক্তির উপস্থিতি বক্তাকে উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করেন। আপনি যদি এই বই এ উপদেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করেন, একদিন দেখবেন, এই অভিজ্ঞতা আপনার ভাণ্ডারেও সঞ্চিত হয়েছে। আপনি সব সময় প্রস্তুত রয়েছেন জনসমক্ষে বক্তৃতা করতে, কেননা, এই বক্তৃতা আপনাকে আনন্দ দেয়।
(৪) যত বেশিই আপনি বক্তৃতা করুন না কেন, সব সময়ই দৃঢ় আত্ম প্রত্যয়ের সাথে বক্তব্য পেশ করার চেষ্টা করুন। তা হলে আপনি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভীতি মুক্ত হতে পারেন।
০২. প্রস্তুতির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস
।প্রতি বছর গড়ে ছয় হাজার বক্তৃতা শোনা ও তার সমালোচনা করা এই গ্রন্থকারের পেশাগত দায়িত্ব এবং আনন্দ। ১৯১২ সাল থেকেই তিনি এটা করে আসছেন। এ সব বক্তৃতা কলেজ ছাত্রদের নয়, বয়স্ক ব্যবসায়ী ও পেশাগত ব্যক্তিদের। সমালোচনা কালে তিনি এসব বক্তৃতার রচনা পদ্ধতি, সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার বক্তব্য, যে কথা অন্যদের অনুপ্রাণিত করে, যাতে একটি বিষয় প্রকাশে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দিকই অপ্রকাশিত না থাকে, তার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আপনার মনের ভাব ভাষা এমনভাবে প্রকাশ করতে হবে যাতে শ্রোতার মন ও হৃদয় আপনার বক্তব্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। শ্রোতার মনের উপর প্রভাব সৃষ্টিই বক্তৃতার সাফল্য।