(গ) সেন্ট পিটারস হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম গির্জা, যার দৈর্ঘ্য ৩৬৪ গজ ও প্রস্থ ২৩২ ফুট।
(ঘ) ওয়াশিংটনের দুটি ভবনের একটির ওপর অপরটি দাঁড় করালে যে সাইজ হবে এটির সাইজ তাই।
অণু সম্পর্কে বক্তৃতাকালে স্যার অলিভার লজ এই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। ইউরোপীয় শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে আমি তাকে বলতে শুনেছি, একবিন্দু পানিতে যত অণু আছে ভূমধ্য সাগরেও তত বিন্দু পানি আছে, তার শ্রোতাদের মধ্যে এরূপ অনেকে ছিলেন যারা জিব্রাল্টার থেকে সুয়েজখাল পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন, এতৎসত্ত্বেও বিষয়টি আরো পরিষ্কার করার জন্যে তিনি আরো বলেছিলেন, একবিন্দু পানিতে যত অণু আছে সমগ্র বিশ্বের বুকে ঘাসের পরিমাণ হবে তাই।
রিচার্ড হার্ডিং ডোভিস নিউইয়র্কের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে বলেছিলেন, সেন্ট সোকিয়ার মসজিদের আকার হচ্ছে ৫ম অ্যাভিনিউ থিয়েটারের সমান, তিনি বলেন, নিকট থেকে দেখলে তাকে আপনার কাছে একটি দ্বীপ নগরী বলে ভ্রম হবে।
অতপর আপনার বক্তৃতায় এই নীতি অনুসরণ করুন। পিরামিড সম্পর্কে বলতে হলে প্রথমে বলুন, এটি ৪৫১ ফুট, অতঃপর তার উচ্চতা শ্রোতারা যে সব গৃহ প্রতিদিন দেখেছে তার সাথে তুলনা করে বোঝন। বলুন এটি নগরীর কতটুকু অংশ জুড়ে আছে। এত হাজার গ্যালন এটা অথবা অতশত হাজার ব্যারল সেটা বলে কিছু বর্ণনা করবেন না, বলবেন, এই তরল পদার্থ দিয়ে কতটা ঘর ভর্তি করা সম্ভব। ২৫ ফুট উচ্চ বলার চাইতে এই সিলিং হতে দেড়গুণ উঁচু বলা কি শ্রেয় নয়। মাইলে দূরত্ব বর্ণনা করার চাইতে নির্দিষ্ট স্থান হতে কতদূরে অথবা ঐ সড়ক হতে এত দূরে একথা বলা কি ভালো নয়? লিংকনের বক্তব্যের স্পষ্টতার রহস্য : লিংকনের শ্রোতাদের কাছে তাঁর বক্তব্য পরিষ্কার করে তোলার জন্যে সাধারণত জনপ্রিয় ফ্রেইজ ব্যবহার করতেন। কংগ্রেসে প্রদত্ত তাঁর প্রথম ভাষণে তিনি ”চিনি আচ্ছাদিত” ফ্রেজ ব্যবহার করেন। খ্যাতনামা মুদ্রাকর ও লিংকনের ব্যক্তিগত বন্ধু মি. ডেফ্রিজ বলেছিলেন যে, এই ফ্রেজটি ইলিনয়েস এ জনসভার জন্যে এটি যথোপযুক্ত হলেও রাষ্ট্রীয় ঐতিহাসিক রেকর্ডের জন্যে এটি উপযুক্ত নয়। প্রত্যুত্তরে মি. লিংকন বলেন, “তুমি যদি মনে কর এমন সময় আসবে যখন জনগণ ”চিনি আচ্ছাদিত” শব্দের অর্থ বুঝবে না, আমি তা ব্যবহার পরিত্যাগ করব, অন্যথা আমি এটি প্রয়োগ অব্যাহত রাখব।”
তিনি কীভাবে সহজ ভাষা শেখেন তা একবার কনক্স কলেজের প্রেসিডেন্ট ড. গ্যালিভারের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন :
আমার ছোট বেলায় কেহ আমরা সাথে কোনো বিষয়ে আলোচনা করলে আমি বিষয়বস্তু বুঝতে না পারলে উত্তেজনা অনুভব করতাম। তবে আমি মোটে ক্রুদ্ধ হতাম না। তবে সময়-সময় তা আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাত। আমি যখন রাতে শুতে যেতাম তখন আমি সেদিন বিকেলে প্রতিবেশী যে বিষয়টি নিয়ে আমার পিতার সাথে আলোচনা করছেন তা ভাবতে-ভাবতে যেতাম। শুয়ে-শুয়ে ভাবতাম। অনেক সময় বিষয়টি ভাবতে-ভাবতে আমার ক্ষুদ্র কক্ষে পায়চারী করতাম। বিষয়টি বোঝার জন্যে, উপলব্ধি করার জন্যে অনেক সময় বিদ্রি রজনী যাপন করতাম। বিষয়টি বুঝতে পারলেও আমার মনে হত আমি যেন তা সঠিকভাবে বুঝি নি। তাই আবার চিন্তা করতাম।
আমি বিষয়টিকে প্রাঞ্জলও সরল ভাষায় রূপ দিতে না পারা পর্যন্ত শান্তি পেতাম না, এটাই ছিল আমার সেদিনের আবেগ প্রবণতা। এবং এই আবেগ প্রবণতা দিয়েই আমি একটি বিষয় বুঝতে পারতাম এবং এভাবেই আমি সহজ ভাষা আয়ত্ত্ব করি।
আসক্তি? হ্যাঁ এটা সেভাবেই বিবেচিত হওয়া উচিত। নিউসালেম এর স্কুল শিক্ষক মেন্টার গ্রাহাম বলেছেন, “আমি লিংকনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লেখাপড়া করতে দেখেছি। তবে তার পাঠাভ্যাসের মূল লক্ষ্য ছিল কীভাবে সহজে তা প্রকাশ করা যায়।”
এই ক্ষেত্রে সাধারণ বক্তার ব্যর্থতার মূল কারণ হচ্ছে এই যে, তারা যে বিষয়টি পরিষ্কার করে তুলে ধরতে চান সে বিষয়টি নিজেরাও বোঝে না। অস্পষ্ট ধারণা ভাসা-ভাসা জ্ঞান দিয়ে কোনো কিছু অন্যকে বোঝানো অসম্ভব। এর ফল কী হয়? কুয়াশায় ক্যামেরায় ছবি আসে না। এই রূপ ক্ষেত্রে বক্তার বক্তব্যও হয় কুয়াশাচ্ছন্ন। লিংকনের পদ্ধতি অনুসরণে বিষয় পরিষ্কার করা নিশ্চিতভাবে সহজ।
দৃশ্য বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত :
চতুর্থ পরিচ্ছেদে আমরা বলেছি, যে সব মাংসপেশী কান থেকে মাথায় গিয়েছে তার চাইতে চোখ থেকে মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত মাংসপেশী অনেক বেশি বড় এবং বিজ্ঞানের মতে আমরা কানে যা শুনি তার চাইতে চোখে যা দেখি তার প্রতি ২৫ গুণ বেশি দৃষ্টি দিই।
একটা প্রাচীন প্রবাদ আছে, “একবার দেখা শতবার বলার চাইতে উত্তম।” সুতরাং আপনার বক্তব্য পরিষ্কার করতে চাইলে ছবিকে কেন্দ্র করে বক্তব্য প্রকাশ করুন। খ্যাতনামা ন্যাশনাল ক্যাশ রেজিস্টার কোম্পানির প্রেসিডেন্ট জন এইচ, প্যাটারসন এই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। কর্মচারীদের প্রতি তার বক্তব্য সম্পর্কে একবার তিনি সিস্টেম ম্যাগাজিনে একটি প্রবন্ধ লেখেন :
আমি বিশ্বাস করি কোনো ব্যক্তি শুধুমাত্র বক্তৃতা শুনে সবকিছু বুঝতে পারে না অথবা বক্তৃতা সকল শ্রোতারে দৃষ্টি একইভাবে আকর্ষণ করতে পারে না। এই ক্ষেত্রে বক্তৃতার সাথে একটি নাটকীয় বিকল্প প্রয়োজন। যে ক্ষেত্রে সম্ভব সে ক্ষেত্রে বক্তৃতার সাথে ছবি প্রদর্শন করা বাঞ্ছনীয়। শব্দের চাইতে নক্সার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় বেশি এবং নক্সার চাইতে ছবি অধিকতর আকর্ষণীয়। একটি বিষয়ের আদর্শ উপস্থাপন হচ্ছে বিষয়টি সম্পর্কে সামগ্রিক ছবি প্রদর্শন করে ছবিসমূহের সংযোগ বিধানের জন্যে শব্দ বা বাক্য ব্যবহার। এটা আমার বাস্তব অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি যে, আমার বক্তব্যের চাইতে প্রদর্শিত ছবি দেখে শ্রোতারা অনেক সহজে বিষয়টি বুঝতে পারেন।