আমি নেপোলিয়নের কথা উল্লেখ করব। যদিও রক্তসাগরে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন নি, “প্রতিশোধ নয়” এটাই ছিল তার জীবনের নীতি, এটিই তিনি মেনে চলেছেন সারা জীবন। জীবন সায়াহ্নে স্বীয় পুত্রকে তিনি বলেছেন, ‘প্রিয় বৎস, একদিন তোমাকে সান্টো ডোকিঙ্গোতে ফিরে যেতে হবে, তখন ভুলে যেও যে, ফরাসিরা তোমার পিতাকে হত্যা করেছে। আমার মনে পড়ে ক্রমওয়েলের কথা, যিনি একজন সাধারণ সৈনিক হয়েও একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে রাষ্ট্র শেষে মিশে গেছে তার কবরের সাথে। ওয়াশিংটনের কথা আমি উল্লেখ করব, দাসত্ব প্রথার বিরোধী হয়েও যিনি নিজ রাজ্যে দাসত্ব ব্যবসা চালু রাখতে দিয়েছিলেন।
ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে আপনি আমাকে গোড়া ভাবতে পারেন। কিন্তু একথা কী অস্বীকার করতে পারেন যে গ্রিক বীর পুলিয়ন রোমান বীর ব্রটাস, ইংল্যান্ডের হাসম্পডেন, ফ্রান্সের লাফায়েত এবং আমাদের ওয়াশিংটন বিশ্বসভ্যতার স্থপতি। আর জব্রাউন হচ্ছেন মধ্যাহ্ন সূর্যকালের সুপরিপক্ব ফল।
আঙুল লাগবে যখন :
একটা সুসমাপ্তি এবং ভালো প্রারম্ভ না পাওয়া পর্যন্ত অনুসন্ধান করুন, পরীক্ষা করুন। অতঃপর দুটোকে একত্রিত করুন।
যে বক্তা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বক্তৃতা করতে সক্ষম নয়, সে সুবক্তা নয় এবং তাকে কোথাও আমন্ত্রণও জানানো যায় না।
এক্ষেত্রে সেল্টসুলটার সুসও একজন ব্যর্থ বক্তা। কেননা তার বক্তৃতাকালে শ্রোতাদের মধ্যে ”উটিসুক নামে এক তরুণ” ঘুমিয়ে পড়েন এবং জানালা ভেঙে পড়ে গিয়ে ঘাড় ভেঙে ফেলা পর্যন্ত তিনি বক্তৃতা করছিলেন। এই ঘটনার পরও তার বক্তৃতা অব্যাহত ছিল। আমি একরাতে একজন ডাক্তারকে ব্রকলিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে বক্তৃতা করতে দেখেছি। এটা ছিল একটি বড় ভোজসভা, বহু বক্তা বক্তৃতা করেন। সকাল দুটায় তিনি বক্তৃতা করতে ওঠেন। তিনি বুদ্ধিমান হলে ডজন খানেক বাক্য বলে শেষ করে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি কী তা করেছিলেন? না তা করেন নি। কিন্তু তিনি বাণিজ্য সম্পর্কে দীর্ঘ বক্তব্য শুরু করেন। শ্রোতারা তখন কামনা করতে থাকেন, উটিসমের মতো জানালা ভেঙে কেউ পড়ে যাক, কিছু ভাঙুক, নষ্ট হোক। তাঁর বক্তৃতা শেষ হোক।
সাটারডে ইভনিং পোস্টের সম্পাদক মি. লরিমার একদা আমাকে বলেছিলেন যে, তিনি তার পত্রিকায় একটি বিষয় সম্পর্কে ধারাবাহিক নিবন্ধ প্রকাশ ঠিক তখনি বন্ধ করেছেন যখন বিষয়টি ভাবারোহে পৌঁছে এবং পাঠকেরা আরো জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কেন তখন বন্ধ করেন? কারণ, বলেছেন লরিমার, এর পরেই প্রবন্ধ শেষ হয়ে যাবে সহসা? ফলে জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে যাবে।
বক্তৃতার বেলায়ও এরূপ জ্ঞান এরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। যখন শ্রোতারা আপনার কাছ থেকে আরো কিছু শুনতে চায়, তখনই সমাপ্ত করুন।
যিশু খ্রিস্টের সারমন অন-দি মাউন্ট নামক শ্রেষ্ঠতম বক্তৃতা মাত্র পাঁচ মিনিটে শেষ করা যায়। লিংকনের গেটিস বার্গের বক্তৃতায় আছে মাত্র দশটি বাক্য। দৈনিকের পৃষ্ঠায়–প্রকাশিত একটি হত্যাকাণ্ডের কাহিনীর চাইতে কম সময়ে জীবনের জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করে শেষ করা যায়। প্রয়োজন সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা।
আফ্রিকার প্রাচীন মানুষ সম্পর্কে ড. জনসন একটি বই লিখেছেন। তিনি ৪১ বছর তাদের সাথে ছিলেন, তাদের পর্যবেক্ষণ করেছেন। একজন বক্তার গ্রাম্য সমাবেশে বক্তৃতা প্রদানেরও কম সময়ে তার এই বইটি শেষ করা যায়।
এবং সাধারণ শ্রোতারা সাধারণত দীর্ঘ বক্তৃতা পছন্দ করেন না। বক্তব্য বিষয় যাই হোক না কেন। পায়ে চলার পথে আঙুলে আঙুলে লাগতে যে সময় প্রয়োজন অর্থাৎ এক ফুটের সমান তোক বক্তব্য এটিই যেন সবার কাম্য।
অতএব হুঁশিয়ার হোন ভাগ্য সম্পর্কে—
শ্রোতার মনের কথা জানেন না যখন–
তাদের ইচ্ছানুযায়ী শেষ করুন বক্তব্য।
সংক্ষিপ্ত সার :
১। বক্তৃতার সুসমাপ্তি অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ বিষয়। সব শেষে যা বলা হয় তা দীর্ঘকাল স্মরণ থাকে।
২। এই বিষয়ে আমি যা বলতে চাই তা বলা হল, সুতরাং আমার মনে হয় আমার শেষ করা উচিত তাই আমি শেষ করছি। এরূপ বলে শেষ করবে না, বক্তৃতা শেষ করুন কিন্তু শেষ করছেন বলবেন না।
৩। ওয়েবেস্টার, ব্রাইট ও গ্লাডস্টোন যেভাবে বক্তৃতার উপসংহারের পরিকল্পনা করতেন ঠিক সেভাবে আপনি পরিকল্পনা করুন। অভ্যাস করুন। এলোমেলো ভাবে শেষ করবেন না,
৪। সমাপ্তির ছয়টি পদ্ধতি :
ক। মূল বক্তব্য বিষয়টির সংক্ষিপ্ত সার প্রদান।
খ। কর্মের আবেদন জানানো।
গ। শ্রোতাদের প্রসংসা করা।
ঘ। শ্রোতাদের হাসানো।
ঙ। অর্থপূর্ণ কাব্যাংশ বলা।
চ। ভাবারোহ বা চরম পরিণতি প্রদান।
৫। সুসমাপ্তি ও ভালো সূচনার মধ্যে সমন্ধয় সাধন করুন। শ্রোতারা চাইবার আগেই বক্তব্য শেষ করে ফেলুন। শ্রোতাদের কাছে বক্তব্য শ্রুতিমধুর থাকতে শেষ করা হলে নিজেও সন্তোষ লাভ করবেন।
১০. আপনার বক্তব্য কীভাবে পরিষ্কার বোঝাবেন
একজন খ্যাতনামা ইংরেজ ধর্মযাজক প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কালে আপটন শিবিরে একদল অশিক্ষিত সৈন্য সমাবেশে বক্তৃতা করেছিলেন। তারা তখন যুদ্ধে যাচ্ছিল কিন্তু তাদের মধ্যে অতি সামান্য কয়জনই, জানতেন তাঁদের কোথায় পাঠান হচ্ছে, এইসব সৈন্যদের সমাবেশে ধর্মযাজক ”আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব” এবং সার্ভিয়ার অধিকারের কথা বলেন। সৈন্যদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জানত না সার্ভিয়া কোনো শহর অথবা রোগের নাম কিনা। এতৎসত্ত্বেও তিনি তাদের সামনে একটি অর্ধোন্মাদময় বক্তৃতা করেন। তিনি যখন বক্তৃতা করছিলেন তখন হলের সব দরজায় রিভলবার হাতে সামরিক পুলিশ প্রহরারত ছিল, যাতে কোনো শ্রোতা হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে না পারে।