”১৮৮১ সালের শেষের দিকে আমি আইন পরিষদে নির্বাচিত হই” টেড কেনেডী লিখেছেন তার আত্মজীবনীতে, “এবং আমি নিজেকে তখন পরিষদের সর্ব কনিষ্ট সদস্য রূপে দেখতে পাই। অন্যান্য সকল তরুণ ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তির মতো আমি তখন বক্তৃতাতে বিরাট অসুবিধার সম্মুখীন হই। কিন্তু একজন গ্রাম্য বৃদ্ধ ব্যক্তি, যিনি অত্যন্ত সহজ ভাষায় কথা বলতেন, ওয়েলিংটনের মতো এক কথা বারবার বলে মনের ভাব প্রকাশ করতেন, তিনি আমাকে বলেন, তোমার কথা বলা প্রয়োজন এ কথা নিশ্চিত হবার আগে মুখ খুলো না। যখন কথা বলার প্রয়োজন হবে তখন চিন্তা করে নিও, তুমি যে সম্পর্কে বলবে তা তোমার জানা কিনা, যদি নিশ্চিত হও তখন তুমি তোমার বক্তব্য সহজ ও সংক্ষিপ্ত ভাবে পেশ করে বসে পড়বে।”
এই বৃদ্ধ গ্রাম্য লোকটি রুজভেল্টকেও তাঁর স্নায়ুবিক দুর্বলতা হতে মুক্ত হবার পথ দেখিয়েছিলেন। তিনি আমাকে আরো বলেছিলেন, “শ্রোতাদের সামনে বক্তৃতা করার সময় যদি তুমি কিছু দেখাতে পার, ব্লাক বোর্ড বা অন্যত্র কোনো কিছু লিখতে পার, অথবা মানচিত্রে কোনো স্থান নির্দেশ করতে পার, বই পুস্তক, কাগজ পত্র নাড়া চাড়া করতে পার, হাত পা নেড়ে বক্তব্য বিষয় উপস্থাপন করতে পার, তবে তুমি ফাঁকে-ফাঁকে চিন্তা করার সময় পাবে। বক্তব্য সহজতর হবে এবং মনেও তুমি গৃহের পরিবেশ অনুভব করবে।”
এটা সত্য যে, বক্তৃতা কালে সব সময় এরূপ প্রদর্শনী বা অঙ্গ ভঙ্গির সুযোগ হয় না। কিন্তু কখনো কখনো এরূপ সুযোগ আসে। যদি সুযোগ পান এরূপ করবেন। তবে তা করবেন বক্তৃতার প্রাথমিক সময়ে। কেননা শিশু একবার হাঁটতে শিখলে আর সে কোনো কিছুকে অবলম্বন করে হাঁটে না। হাঁটতে চায় না।
তৃতীয়ত : দৃঢ় বিশ্বাস
আমেরিকার খ্যাতনামা মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক উইলিয়ম জেমস লিখেছেন :
যে কোনো কাজের পর জাগে অনুভুতি। কিন্তু বাস্তবে কাজ ও অনুভুতি এক সাথেই চলে। ইচ্ছাশক্তি কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে, এবং তদ্বারা আমরা অনুভূতি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
সুতরাং মনে আনন্দ সৃষ্টির সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে এমন কাজ এবং এমনভাবে করা যাতে মনে আনন্দের আবেগ সৃষ্টি হয়, আনন্দ হয়। একবার চেষ্টায় মনে এ আনন্দ আনা না গেলে বারবার চেষ্টা করতে হবে।
অনুরূপ ভাবে, নিজেকে সাহসী বলে ভাবতে হলে যে কোনো কাজ সাহসিকতার সাথে করতে হবে। এই কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করুন, দেখবেন আস্তে-আস্তে ভয় দূরীভূত হয়ে গেছে, সাহস এসেছে মনে।
সাধারণ্যে বক্তৃতা করতে দাঁড়িয়ে আপনি অধ্যাপক জেমস এর উপদেশ অনুসরণে কাজ করুন, ভাবুন এটি শ্রোতাদের সামনে আপনার প্রথম দিন নয়। অবশ্যই আপনি যদি প্রস্তুত না থাকেন তবে আপনি পুরোপুরি সফল হবেন না। আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, শ্রোতাদের সামনে আপনি কী বলতে যাচ্ছেন। বক্তৃতা শুরু করার আগে আপনি দীর্ঘ শ্বাস গ্রহণ করুন। ফুসফুঁসে অধিক অম্লজান আপনাকে অধিক শক্তি জোগাবেও সাহস জোগাবে। জীন ডি রেস্কী সব সময় বলতেন, আপনি দীর্ঘশ্বাস নিন, তা হলে আপনার শক্তি ও সাহস বাড়বে।
সর্বযুগে, সকল দেশে, মানুষ সব সময় সাহসের প্রশংসা করেছে। সুতরাং মঞ্চে দাঁড়িয়ে আপনাকে এমনভাবে বক্তব্য পেশ করতে হবে যাতে শ্রোতারা মনে করে, আপনি যা করছেন তা করছেন দৃঢ় বিশ্বাস ও সাহসিকতার সাথে। প্রমাণ করতে হবে আপনি সাহসী।
শ্রোতাদের চোখে-চোখে সরাসরি তাকিয়ে আপনি এমনভাবে বক্তব্য পেশ করতে শুরু করুন, যেন সকল শ্রোতাই আপনার খাতক। তারা সবাই ঋণী, ধরে নিন যে ঋণের মেয়াদ বাড়াবার আবেদন জানাবার জন্যেই তারা আপনার সামনে সমবেত হয়েছে। এই মনস্তাত্বিক চিন্তার ফল আপনার জন্যে হবে কল্যাণকর।
কোনো অবস্থাতেই ঘাবড়াবেন না। যদি মনে ভীতির সঞ্চার হয়, মন চঞ্চল হয়ে উঠে, শরীরে জাগে কম্পন, তা হলে এটা শ্রোতাও দর্শকদের কাছে গোপন করার জন্যে, আপনার দুটি হাতকে পিছনে নিয়ে যান। একহাতে অন্য হাত ঘর্ষণ করুন, পায়ের বুড়া আঙুল দিয়ে মঞ্চে ঘর্ষণের চেষ্টা করুন, তা হলে শক্তি ফিরে পাবেন।
কোনো আসবারপত্রের পিছনে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে বক্তৃতা করা খারাপ। কিন্তু প্রথম দিকে এরূপভাবে বক্তৃতা করার চেষ্টা আপনাকে সাহস যোগাবে। আপনাকে বক্তৃতা করায় অভ্যস্ত করে তুলবে।
টেডী রুজভেল্ট কীভাবে সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন? তিনি কি প্রকৃতি হতে বিশেষ প্রতিভা নিয়ে জন্মেছিলেন? মোটেই না, “আমি ছিলাম রুগ্ণ ও দুর্বল,” তিনি তার আত্মজীবনীতে স্বীকার করেছেন। যৌবনে আমি স্নায়বিক দৌর্বল্য হতে মুক্ত ছিলাম না। আমার সুস্থ, মন উৎফুল্ল করার জন্য আমাকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম।
সৌভাগ্যের বিষয় যে, তিনি কী পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন তা আমাদের বলেছেন। ”যখন বালক ছিলাম” তিনি লিখেছেন, মেরিয়টের বইতে আমি একটি নিবদ্ধ পাঠ করি, যা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করতো। এই নিবন্ধে ব্রিটিশ নৌ বাহিনীর জনৈক সাহসী ক্যাপটেনের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি কীভাবে তার বাহিনীকে সাহসী ও ভীতি মুক্ত করে তুলে ছিলেন। তিনি বলেছেন, কাজের প্রারম্ভে সকল মানুষই ভয় করে, ইতস্তত করে। কিন্তু কাজে সফল হতে হলে কর্তাকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন ভয় কাকে বলে তা তিনি জানেন না। এরূপ মনোভাব নিয়ে কাজ শুরু করলে সকল মানুষই ভীতিমুক্ত হতে পারে। কেননা ভয় অনুভব না করলে ভীতি দূর হয়ে যেতে বাধ্য হয়।