আপনার অভিজ্ঞতাও তার মতো হতে পারে।
আপনি যদি একজন জনপ্রিয় বক্তা হতে চান, যদি চান দ্রুত একজন সুবক্তা হতে, তাহলে আপনাকে চারটি অতি প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে :
প্রথমত : অটল বাসনা নিয়ে দৃঢ়তার সাথে যাত্রা শুরু করুন।
আপনি যা অনুভব করেন এটা তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো শিক্ষক আপনার মন ও হৃদয় পরীক্ষা করেন, তিনি আপনার আকাক্ষা সঠিক ভাবে নির্ধারণ করতে সক্ষম হন এবং এটা তাঁর পক্ষে পূর্বাহ্নেই বলে দেয়া সম্ভব। তা হলে সতোর সাথে আপনি সাফল্য অর্জন করতে পারতেন। যদি আপনার আকাক্ষা হয় নিস্ক্রীয় ও নির্জীব, তবে আপনার সাফল্যও হবে সে রূপ মন্থর। কিন্তু আপনি যদি অধ্যবসায়ের সাথে আপনার বিষয় অনুসরণ করেন, বুলডগ যেভাবে বিড়ালকে তাড়ায় ঠিক সেভাবে চল তা হলে কোনো বাধাই আপনাকে পরাভূত করতে পারবে না।
সুতরাং এই শিক্ষার জন্যে আত্মসচেতন হয়ে উঠুন। এর শুভফল গ্রহণ করুন। মানুষকে স্বমতে আনতে হলে বক্তব্য পেশে কিরূপ আত্মবিশ্বাস ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। ডলার ও সেন্টে এর কত মূল্য হতে পারে তা চিন্তা করুন। সামাজিক ভাবে এর মর্যাদা কী, বন্ধুদের কাছে এর দাম কী, ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তারের এর মূল্য কী, নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এর থেকে আপনি কী পাবেন সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। এটা আপনাকে আপনার চিন্তা কল্পনা হতে অধিকতর দ্রুত গতিতে নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করবে।
চাউন্সে এস্ ডেপু বলেছেন, বক্তৃতার মাধ্যমে মানুষকে স্বমতে আনার চাইতে বড় কোনো শক্তি, ব্যক্তির জীবন গঠনে তার ক্ষমতা সম্পর্কে স্বীকৃতি আদায়ে, সহায়ক হতে পারে না। কেননা এই শক্তিই যে কোনো ব্যক্তিকে দ্রুত প্রতিষ্ঠিত করে।
লাখ লাখ লোকের হৃদয় জয় করার পর ফিলিপ ডি. আমায় বলেছেন, আমি বড় পুঁজিপতির চাইতেও বড় বক্তা।
প্রতিটি শিক্ষিত ব্যক্তিই মনে-মনে বক্তৃতা করার ক্ষমতা অর্জনের আশা পোষণ করেন। ডেল কার্নেগীর মৃত্যুর পর প্রাপ্ত কাগজ পত্রের মধ্যে তার নিজস্ব জীবনের একটি পরিকল্পনা পাওয়া গিয়েছিল। এই পরিকল্পনাটি তিনি প্রণয়ন করেছিলেন তার ২৩ বছর বয়সে। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন আর দু’বছরের মধ্যে তার ব্যবসাকে এমন ভাবে সম্প্রসারিত করা হবে যাতে তার বার্ষিক আয় হয় ৫০ হাজার এবং ৩০ বছর বয়সে তিনি অবসর নিয়ে অক্সফোর্ডএ গিয়ে অধ্যয়ন করবেন, বিশেষ করে তিনি সাধারণ ভাষণ বা জনসমক্ষে বক্তৃতা করার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেবেন।
এই শক্তি অর্থাৎ বক্তৃতা দিয়ে মোহিত করার শক্তি কতটুকু সন্তুষ্ট করে এবং আনন্দ দান করে তা চিন্তা করার বিষয়। লেখক এই বিশ্বের প্রায় সব এলাকা সফর করেছেন এবং বহুমুখী অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ নিয়েছেন। কিন্তু যে অভিজ্ঞতা তাকে সব চাইতে বেশি সন্তোষ বিধান করেছে তা হচ্ছে বক্তৃতা করার শক্তি। আপনি বক্তৃতা করবেন আর শ্রোতারা আপনার বক্তব্য নিয়ে চিন্তা করবে, চিন্তা করবে আপনার কথা। এই শক্তি আপনার মনকে দৃঢ় প্রত্যয়ী করবে আর আপনি হবেন ক্ষমতার অধিকারী। এই শক্তি অর্জনে সক্ষম হলে আপনি হবেন সমাজে গৌরবান্বিত ব্যক্তি আর আপনার মর্যাদা হবে সমসমাজের সবার উপরে। বই শক্তির মধ্যে যেন জাদু আছে যা আপনাকে সব সময় প্রাণচঞ্চল করে রাখবে। বক্তৃতা শুরু করার দুমিনিট আগে আমি, একজন বক্তা স্বীকার করেছেন “চিন্তা করে নিই গভীর ভাবে এবং শুরু করি সাবলীল ভাষায়, কিন্তু শেষ করার দু’মিনিট আগে আমি আস্তে-আস্তে গতি কমিয়ে দিই ও শেষ করি।”
যে কোনো কাজে যে ব্যক্তি মতি স্থির করতে পারে না সে অর্ধপথে পথ হারিয়ে ফেলে। সুতরাং যে কোনো কাজে সফল হতে লক্ষ্য স্থির করে যাত্রা শুরু করতে হবে এবং লক্ষ্যস্থল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে স্থির মস্তিষ্কে এগুতে হবে। গভীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে কাজ শুরু করলে বাধাবিপত্তি সত্বেও আপনি আপনার লক্ষ্যস্থলে উপনীত হতে সক্ষম হবেন। চড়াই-উত্রাই পেরিয়ে আপনি পৌঁছবেন আপনার লক্ষ্যে। স্বল্প কথায় আপনার লক্ষ্য স্থলে পৌঁছতে হলে সে পথকে মনে করতে হবে সহজ। অর্থাৎ আপনি যা করেছেন তাই হচ্ছে সহজ কাজ, এ কথা মনে করলে সহজে এগুনো যাবে, পশ্চাদপসরণের প্রয়োজন হবে না।
জুলিয়াস কায়জার তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে গল প্রণালী অতিক্রম করে ইংল্যান্ডে পৌঁছে কী করেন? কীভাবে তার বাহিনীর বিজয় নিশ্চিত করেন? তিনি অত্যন্ত চালাকীর কাজ করেন, তিনি তার বাহিনীকে ডোবার তীরে অবতরণ করিয়ে সমস্ত জাহাজে আগুন ধরিয়ে দেন। সৈনিকেরা দেখতে পায় যে সব জাহাজে তারা এসেছিল সে সব জাহাজ আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং এখান হতে দেশে ফিরে যাবার তাদের আর কোনো পথ নেই। শত্রুর দেশে বেঁচে থাকতে হলে তাদের এগিয়ে যেতে হবে, জয়লাভ করতে হবে। তারা অতঃপর সে কাজেই করে সাফল্যের সাথে।
জয়ের এরূপ আকাঙ্ক্ষাই ছিল কায়জারের মনে। শ্রোতা ভীতি দূর করার জন্য কেন আপনি অনুরূপ মনোভার গ্রহণ করবেন না।
দ্বিতীয়ত : আপনি যে বিষয়ে বলবেন সে বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নিন। কোনো ব্যক্তি তার বক্তব্য সম্পর্কে চিন্তা ও পরিকল্পনা না করলে এবং তিনি কী বলবেন তা না জানলে শ্রোতাদের সামনে বক্তব্য পেশ কালে তিনি সহজ ও স্বাভাবিক হতে পারবেন না, তার কাজ হবে একজন অন্ধ কর্তৃক আর একজন অন্ধকে পরিচালনা করার মতো। এই অবস্থায় বক্তাকে হতে হবে আত্মসচেতন। নতুবা তাকে অনুতাপ করতে হবে, পড়তে হবে লজ্জায়।