ঐ সময়ের কিছু আগে ওয়াশিংটনে নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী এই সম্মেলনে অংশ নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হলে ফিলাডেলফিয়ার যাজক সম্প্রদায় ঐ শহরে একটি জনসভায় ভাষণ দিতে তার প্রতি আমন্ত্রণ জানান। এবং মি. গেস্ট আমাকে জানান, শহরের যাজকেরা ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে জনগণের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে তাঁকে নির্বাচন করেন। এবং তিনি ঐ ব্যক্তি যিনি তিন বছরের কিছু কম সময় আগে একই টেবিলে বসে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তিনি কখনো বক্তা হতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি কিনা।
তার বক্তৃতা করার দ্রুত এই ক্ষমতা লাভ কি অস্বাভাবিক? মোটেই না। এ ধরণের শত শত প্রমাণ আছে। উদাহরণ স্বরূপ-আরো একটি বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করছি। বহু বছর আগে ড. কার্টিস নামে ব্রুকলিনের একজন চিকিৎসক এক শীত মৌসুমে ফ্লোরিডায় গিয়েছিলেন। তার বাসস্থান ছিল ব্যাটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাছে। তিনি ব্যাটবল এর একজন বিশেষ অনুরাগী ছিলেন। ফলে তিনি প্রায়ই যেতেন প্রশিক্ষণ দেখতে? নিয়মিত যাতায়াতের দরুণ তিনি হয়ে পড়েছিলেন সদস্যদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফলে তারা একদিন তাকে তাদের সম্মানে আয়াজিত এক ভোজে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানায়।
কফি ও বাদাম পরিবেশনের পর বহু সংখ্যক গণ্যমান্য অতিথির প্রতি কিছু বলার জন্য অনুরোধ জানান হয়। হঠাৎ শোনা গেল, সভাপতি বলছেন, আজ রাতে আমরা একজন চিকিৎসককে আমাদের মাঝে পেয়েছি। এবং আমি এখানে ডা. কার্টিসকে একজন ব্যাটবল খেলোয়াড়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু বলতে অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি কি প্রস্তুত ছিলেন? অবশ্যই তিনি স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেছেন এবং প্রায় শতাব্দীর এক তৃতীয়াংশ সময় ধরে তার ডানে বায়ে বসা রোগীর কাছে তার বিষয়ে বক্তৃতা করতে পারেন, বলতে পারনে। কিন্তু দর্শকদের সামনে, সংখ্যা যত সীমিতই হোক, দাঁড়িয়ে একই বিষয়ে বলা অন্য জিনিস। এটা বোধ শক্তি রহিত করার মতো ঘটনা। এই ঘোষণার ফলে ডাক্তার অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়েন এবং হত্যন্ত্রের ক্রিয়া দ্রুততর হয়ে উঠে। তিনি জীবনে কখনো কোনো সভায় বক্তৃতা করেন নি! এ সময় তার মনে হতে লাগলো, তিনি যেন সব কিছু বিস্মৃত হয়ে যাচ্ছেন, তার দেহে গজাচ্ছে পাখা।
উপস্থিত শ্রোতারা যত তালি দিয়ে এই ঘোষণাকে অভ্যর্থনা জানায়। সবাই তখন তার দিকে তাকিয়ে ছিল। এখন তিনি কী করেন? তিনি মাথা নাড়েন। এটাকে সম্মতি মনে করে শ্রোতারা আনন্দিত হয়ে হাততালি দিতে থাকে। সবাই চিৎকার দিয়ে বলতে থাকেন। ”ডা. কার্টিস, বলুন, বলুন।”
তিনি অত্যন্ত বেকায়দায় পড়েন। তিনি বুঝতে পারেন, তিনি কিছু বলতে চেষ্টা করলে ব্যর্থ হবেন। অর্ধডজন বাক্যও তিনি পুরোপুরি ব্যক্ত করতে পারবেন না। সুতরাং তিনি উঠে দাঁড়ান এবং একটি শব্দও উচ্চারণ না করে বন্ধুদের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেন, অপমানিত ও লাঞ্ছিত হৃদয়ে ধীরে-ধীরে কক্ষ ত্যাগ করেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ব্রুকলিনে ফিরে তিনি সর্ব প্রথম সাধারণ ভাষণ কোর্সে ভর্তি হন। এটিই হয় তার প্রথম কাজ। দ্বিতীয় বার যাতে তাকে এরূপ ভাবে বোকা বনতে না হয় সে উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি এই কোর্সে ভর্তি হন।
তিনি অত্যন্ত আগ্রহী ছাত্র হিসাবে শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি কথা বলতে শেখার জন্যই এই কোর্সে অংশ নেন এবং তার আগ্রহে কোনোরূপ কমতি ছিল না। তিনি নিয়মিতভাবে তার পাঠ শিখতেন, অভ্যাস করতেন এবং কখনো ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতেন না।
লেখা পড়ায় তিনি এতো অধিক অগ্রগতি সাধন করলেন যে তিনি নিজেও বিস্মিত হল, কেননা, তিনি তাঁর লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করে গেলেন। কয়েক সেসনের পর তার স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূর হয়ে যায়, আত্মবিশ্বাস দ্রুত বাড়তে থাকে! দু’মাসেই মধ্যেই তিনি তার গ্রুপের শ্রেষ্ঠ বক্তা হয়ে উঠেন। অতঃপর তিনি যত্রযত্র বক্তৃতা করার আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে শুরু করেন। বক্তৃতা করা তার কাছে প্রিয় কাজ হয়ে ওঠে, ফলে তিনি নতুন-নতুন বন্ধু পেতে থাকেন।
রিপাবলিকান পার্টির নিউইয়র্ক নগর কমিটির জনৈক সদস্য একবার তার বক্তৃতা শুনে দলীয় নির্বাচনী প্রচারণার কাজে অংশ নেয়ার জন্য ডা. কাটির্সের প্রতি আমন্ত্রণ জানান। মাত্র এক বছর আগে যে ব্যক্তি বক্তৃতা করতে ব্যর্থ হয়ে ভয়ে, দুঃখে ও লজ্জায় একটি ভোজ সভা ত্যাগ করেছিলেন তিনি এখন হয়ে পড়েন রাজনৈতিক বক্তা।
আত্মবিশ্বাস ও সাহস এবং জনসমক্ষে কথা বলার সময় শান্ত ও স্বচ্ছভাবে চিন্তা করার যোগ্যতা অর্জন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে ধারণা, এ ঘটনা প্রমাণ করে যে আসলে সে ধারণা স্বাভাবিক অবস্থা নয়। এটা শুধু মাত্র কতিপয় ব্যক্তির প্রতি স্বর্গীয় অবদান বা ভগবানের দান নয়। এটা গলফ খেলার মতো যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপার। যে কোনো ব্যক্তিই ইচ্ছা করলে চর্চার মাধ্যমে এই যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম।
আপনি যখন বসে থাকেন তখন যে ভাবে চিন্তা করতে পারেন, ঠিক সেভাবে শ্রোতাদের সামনে দাঁড়িয়ে একই রূপ চিন্তা করতে না পারার কোনো কারণ আছে কি? নিশ্চয়ই আপনার জানা উচিত যে এ রূপ কোনো কারণ নেই। প্রকৃতপক্ষে আপনি যখন জনসমক্ষে দাঁড়ান তখন আপনার চিন্তাধারা আরো স্পষ্ট হওয়া উচিত। শ্রোতাদের উপস্থিতি আপনাকে করবে অনুপ্রাণিত উৎসাহিত। অধিকাংশ বক্তার মত হচ্ছে এই যে, শ্রোতামণ্ডলীর উপস্থিতিতে তাঁদের অনুপ্রাণিত করে এবং তাঁদের মস্তিস্ক অধিকতর পরিষ্কার ও স্পষ্ট ভাবে কাজ করে। হেনরি ওয়ার্ড বেসার বলেছেন, “ধূম উদগীরণের মতো এমন সব তত্ত্ব-তথ্য ঘটনা মুখ দিয়ে নিঃসৃত হয় যা জানবার কথা বক্তা নিজেও কখনো কল্পনা করে নি।” এ সব কথা নিতান্ত স্বাভাবিক ভাবেই বক্তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। আপনি যদি চর্চা করেন এবং ইচ্ছুক হন তা হলে আপনার পক্ষেও এরূপ যোগ্যতা অর্জন সম্ভব।