বক্তব্য শিক্ষা সম্পর্কেও এই বক্তব্য সত্য। কিন্তু বক্তারা কি এটা উপলেিব্ধ করেন অথবা যা চিন্তা করেন, তারা কি সব সময় সে ভাবে কাজ করেন? তাঁরা তা করেন না। তারা তা প্রয়োজন মনে করেন না। কেহ কেহ এই সম্পর্কে বহু পরিকল্পনা করেন, কিন্তু তাতে সফলতার নিশ্চয়তা নেই।
কোনো আদর্শ প্রচারের ফলপ্রসু, গ্রহণযোগ্য ও সর্বোত্তম পন্থা কী এ সম্পর্কে পর্যবেক্ষণের আগে কেহই তা বলতে পারেন না। এটা সব সময়ে নতুন সমস্যা। বক্তার মনে জাগে নতুন-নতুন প্রশ্ন। খুঁজে পান নতুন-নতুন জবাব। বক্তার বিষয় সাজানো সম্পর্কে প্রচলিত কোনো নিয়ম বা আইন কানুন নেই। বক্তা নিজেই ইচ্ছানুযায়ী তা সাজিয়ে নিতে পারেন, প্রকাশ করতে পারেন।
একটি পুরস্কার বিজয়ী বক্তৃতা কীভাবে প্রস্তুত করা হয়েছিলো?
এখানে কয়েক বছর আগে ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব রিয়েল স্ট্রেট বোর্ড সমীপে প্রদত্ত একটি ভাষণের উদ্ধৃতি দিচ্ছি। ভাষণটি অপর ২০টি শহর সম্পর্কে প্রদত্ত ভাষণের মধ্যে প্রথম পুরস্কার লাভ করে। এবং আজো এটি সেরূপ মূল্যবান। এই ভাষণটি ছিল তথ্য বহুল, সুচিন্তিত। পরিষ্কার ভাবে, সংক্ষিপ্ত আকারে কিন্তু আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে পেশকৃত ভাষণ। এটি ছিল উদ্দীপনাময়, সাবলীল। এটা পাঠ ও অধ্যয়ণের জন্যে খুবই আকর্ষণীয়।
মি. চেয়ারম্যান ও বন্ধুগণ–
আজ হতে ১৪৪ বছর আগে আমার নগর ফিলাডেলফিয়ার এই মহান জাতি, আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম। সুতরাং এরূপ একটি মহান জাতির জন্মদানের ঐতিহাসিক রেকর্ডের অধিকারী শহরের প্রাণ শক্তি ও সেই মহান জাতির মতো উদ্দীপনাময় ও শক্তিশালী। আমার শহরে আজ শুধুমাত্র আমেরিকার একটি শিল্প সমৃদ্ধ শহর নয়। সারা বিশ্বের সুন্দরতম শহরগুলোর অন্যতম।
ফিলাডেলফিয়ার জনসংখ্যা হচ্ছে প্রায় বিশলাখ এবং আমাদের এই শহরের আয়তন হচ্ছে মিলোকী ও বোস্টান, প্যারিস ও বার্লিনের যোগফলের সমান। আমাদের এই শহরে ১৩০ বর্গমাইল এলাকার মধ্যে ৮.০০০ একর উর্বর ভূমি পার্ক স্কোয়ারও উদ্যান পথ নির্মাণের জন্য আমরা ছেড়ে দিয়েছি। সুতরাং আমাদের জনগণ অবসর বিনোদনের জন্যে উপযুক্ত উদ্যান ও বাগান পাচ্ছে, পাচ্ছে বিশুদ্ধ বাতাস, স্বচ্ছ ও সাবলীল আবহাওয়া। প্রত্যেকটি আমেরিকানই এই অধিকারে অধিকারী।
বন্ধুগণ। ফিলাডেলফিয়ার শুধুমাত্র একটি পরিষ্কার ও সুন্দর শহর নয়। একটি বিশ্বের বৃহত্তম কারখানা বলেও পরিচিত। এই শহরের ৯২০০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৪ লাখ লোক কর্মরত, তাই এটি আজ বিশ্বের করখানায় একশত হাজার ডলার মূল্যের ব্যবহার্য পণ্যাদি উৎপাদিত হয়। একজন খ্যাতনামা সংখ্যাতাত্বিকের হিসেব মতে ফিলাডেলফিয়া ছাড়া এই দেশের অন্য কোনো শহরে সমপরিমাণ উলের দ্রব্য, বস্ত্র, বয়ন শিল্প, ফেল্টহ্যাট, লৌহজাত দ্রব্য, টুলস, স্টোরেজ, ব্যাটারি, ইস্পাতের জাহাজ এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি উৎপাদিত হয় না। রাতদিনের প্রতি দু’ঘণ্টায় আমরা একটি করে রেলের লোকোমোটিব ইঞ্জিন তৈরি করি, এবং এই দেশের জনতার অর্ধাংশের বেশি যে সব গাড়িতে চড়েন তা এই ফিলাডেলফিয়া শহরে নির্মিত। প্রতিমিনিটে আমরা হাজার-হাজার শ্লিপার উৎপাদন করি, গতবছর আমরা আমাদের ১১৫টি, হোসিয়ারী কারখানায় দেশের প্রতিটি পুরুষ, শিশুর জন্যে দু’জোড়া করে মোজা তৈরি করছি। আমাদের তৈরি কার্পেট ও কম্বলের পরিমাণ হচ্ছে গ্রেটব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডে উৎপাদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি এবং আমাদের মোট বাণিজ্যিক ও শিল্প লেনদেন এত বেশি যে, গত বছর ব্যাঙ্ক সমূহে ৩৭ শত কোটি ডলার লেনদেন হয়েছে।
কিন্তু বন্ধুগণ, আমরা যেমন আমাদের শিল্প সমৃদ্ধির জন্যে গৌরবানুভব করি, তেমনি আমরা গৌরব বোধ করি আমাদের শহরটি চিকিৎসা, সাহিত্য ও শিক্ষা কেন্দ্র বলে। কিন্তু আমাদের সব চাইতে বেশি গৌরবের বিষয় হচ্ছে আমাদের শহরের গৃহসংস্থান ব্যবস্থা। আমাদের ফিলাডেলফিয়া শহরে তিন লাখ ১৭ হাজার আলাদা বাড়ি রয়েছে এবং এই বাড়িগুলোকে গড়ে ২৫ ফুট ধরে পাশাপাশি এক সারিতে দাঁড় করালে কানসাস শহরের এই সম্মেলন হল অতিক্রম করে ১৮১ মাইল দূরে অবস্থিত ডেনভার শহর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছবে।
কিন্তু যে বিষয়টির প্রতি আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই সেটি হচ্ছে এই শহরে হাজার হাজার ঘরের মালিক শ্রমিক শ্রেণী। সুতরাং তারা সমাজতন্ত্র বা বলশেভিজমের মতো আমাদানি করা রোগে আক্রান্ত নয় এবং কখনো আক্রান্ত হবে না।
ফিলাডেলফিয়া ইউরোপীয় নৈরাজ্যের উপযুক্ত স্থান নয়। কেননা, আমাদের গৃহ, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আমাদের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রকৃত আমেরিকান উদ্দীপনার কেন্দ্রস্থল; কারণ এই শহরেই এই জাতির জন্ম এবং অমরা সেই আমেরিকানদেরই উত্তরাধিকারি। ফিলাডেলফিয়া এই মহান দেশের আমেরিকান স্বাধীনতার ঝর্ণা এই শহর হতেই প্রবাহিত। এটি সে শহর যে শহরে প্রথম তৈরি হয় মার্কিন পতাকা, এটি সেই শহর যে শহরে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, এটি সেই শহর যেখান হতে উত্থিত হয়েছিল প্রথম স্বাধীনতার ধ্বনি, বেজেছিল স্বাধীনতার ঘণ্টা যা আজো লাখো লাখো জনতাকে, আমেরিকার পুরুষ নারী শিশু আবালবৃদ্ধবনিতাকে অনুপ্রাণিত করে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের মিশন হচ্ছে পবিত্র মিশন, যা শুধুমাত্র কল্প পূজা নয়, আমেরিকান মূলনীতি প্রচার এবং স্বাধীনতার বাতি প্রজ্বলিত রাখা যাতে ওয়াশিংটন, লিংকন ও থিওডর রুজভেল্টর সরকার সকল মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে টিকে থাকতে পারে, কিন্তু মানব সমাজকে করতে পারে অনুপ্রাণিত।