(৫) আপনি যে তথ্য ব্যবহার করতে ইচ্ছুক তার চাইতে বেশি তথ্য সংগ্রহ করুন, লুবার বুরবাকের কথা স্মরণ করুন। তিনি লাইলাক চারা জন্মাতেন, যার মধ্যে দু একটি হত অত্যন্ত ভালো। এক শত চিন্তা একত্রিত করুন, নব্বইটি হেঁটে ফেলে দশটি রাখুন।
(৬) সংরক্ষিত শক্তি অর্জনের উপায় হচ্ছে প্রয়োজনাতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ এবং এসব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জেনে রাখা। বক্তৃতা প্রস্তুত কালে আর্থার জন যে পদ্ধতিতে তার বিক্রয় প্রতিনিধিদের খাদ্যবস্তু সম্পর্কে শিক্ষা দিতেন সে পদ্ধতি অনুরসণ করুন। আটলান্টিক ক্যাবল সম্পর্কে নিবন্ধ রচনায় ইহা তারবেল যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন না অনুরসণ করুন।
০৩. খ্যাতনামা বক্তাগণ কীভাবে তাঁদের ভাষণ প্রস্তুত করতেন
আমি একদা নিউইয়র্ক রোটারি ক্লাবের একটি মধ্যাহ্ন ভোজে উপস্থিত ছিলাম, যেখানে প্রধান বক্তা হিসাবে উপস্থিত ছিলেন একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তার সরকারি পদ তাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল এবং আমরা আনন্দের সথে তার বক্তব্য শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। তিনি আমাদের তার নিজস্ব বিভাগ সম্পর্কে বলার প্রতিশ্রুতি দেন এবং নিউইয়র্কের সকল ব্যবসায়ীই এই বিভাগ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ছিলেন।
তিনি তার বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানতেন। তিনি যে কাজ করতেন, জানতেন তার চাইতে বেশি। কিন্তু তিনি তার বক্তৃতা সম্পর্কে কোনো পরিকল্পনা করেন নি। তিনি তার বক্তব্য কীভাবে পেশ করবেন তাও ঠিক করেন নি। তার বক্তব্যের মূল পয়েন্টগুলোও তিনি সাজিয়ে নেন নি। অধিকন্তু অনভ্যাস ও অনভিজ্ঞতা হেতু তিনি সেদিন অন্ধভাবেই বক্তৃতা করতে শুরু করেন। তিনি জানতেন না কোথায় গিয়ে তার বক্তব্য শেষ হবে। তবু তিনি শুরু করেন।
স্বল্প কথায় বলতে গেলে, তখন তার মনে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিলো বিধায় তিনি যা বলেন তা আমাদের কাছে হয় খিচুড়ি-সদৃশ্য। তিনি প্রথমে পরিবেশন করেন আইসক্রিম। অতঃপর পরিবেশন করে সুপ! এর পর আসে মাছ ও ও বাদাম। পরিশেষে আসে সুপ ও আইসক্রিমের একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ মিক্সচার এবং লবণাক্ত মাছ। আমি কখনো কোথাও অথবা কোনো সময়ে কোনো বক্তাকে এরূপ পুরোপুরি বিভ্রান্ত হতে দেখি নি।
তিনি তখন যেমন তেমন ভাবে কিছু বলে আমাদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও ব্যর্থ হওয়ায় তিনি পকেট থেকে এক তাড়া চিঠি বের করেন এবং বলেন যে, তার সেক্রেটারি তার জন্যে এগুলি তৈরি করেছেন। তবে তার বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে কেহ কোনো প্রশ্ন করে নি। চিঠিগুলোও এমন এলোমেলো ছিল যে, এগুলো যেন একটি ফ্লাট গাড়িতে ছড়িয়ে রাখা লোহার টুকরো। তিনি এগুলো অসহায়ভাবে হাতড়িয়ে একের পর এক পৃষ্ঠা দেখে গভীর অরণ্যানী হতে কিছু উদ্ধার করে নিজেকে শক্ত করে নিজেকে কিছু বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার বক্তব্য হয়ে পড়ে সামঞ্জস্যহীন, অর্থহীন অরণ্যেরোদন সদৃশ্য। তার পক্ষে সুষ্ঠুভাবে কিছু বলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তিনি ক্ষমা চেয়ে পানি চান, কম্পিত হাতে গ্লাস নিয়ে সামান্য পানি পান করে আবার কয়েকিট অসংলগ্ন বাক্য বলে তার চিঠির জঙ্গলের মাঝে মনোনিবেশ করেন। মুহূর্তের পর মুহূর্তে তিনি আরো অধিকতর অসহায় পড়ে পড়তে থাকেন, হতাশ হতে থাকেন, হতবুদ্ধি হতে থাকেন এবং হন অধিকতর কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তার কপালে দেখা দেয় ফোঁটা ফোঁটা স্বেদ বিন্দু যা মুছে তার রুমাল হয়ে যায় পূর্ণসিক্ত, যেন চোখের জলে তা ভিজে গেছে। দর্শকের আসনে বসে আমরা তার জন্যে পরম করুণা,অনুভব করতে থাকি, তার প্রতি জাগে আমাদের অন্তরের সহানুভূতি। আমরা নিজেরাও তখন হতবুদ্ধি হয়ে পড়ি। কিন্তু এতৎসত্ত্বেও বক্তা বেশরম ও লোচ্চার মতো তার চিঠি দেখে এলোমেলো বক্তৃতা করতে থাকেন। ক্ষমা চেয়ে ও পানি পান করে পেশ করতে থাকেন অর্থহীন বক্তব্য। তিনি ছাড়া সকলেই দেখতে পান যে, চোখ হতে তার চশমা পড়ে যাচ্ছে। চশমা পড়ে ভেঙ্গে গেলে তিনি বসে পড়েন, আমরা অর্থহীন বক্তব্য শোনা থেকে লাভ করি অব্যাহতি। সেদিন আমি হয়ে ছিলাম সবচেয়ে দুর্ভাগ্য শ্রোতা এবং আমি জীবনে কখনো এরূপ লজ্জাহীন হতবুদ্ধি বক্তার সাক্ষাৎ পাই নি। রুশোর মতো দৃঢ় মনোভাব নিয়ে দাঁড়ালেও কী বলতে চান তা তিনি নিজে জানতেন না এবং কী বলে শেষ করেছেন অথবা তিনি কী বলেছেন তাও তিনি নিজেই জানেন না। এই গল্পের নৈতিক শিক্ষা হচ্ছে এই যখন কোনো মানুষের জ্ঞান যথোপযুক্ত ভাবে সঞ্চিত থাকে না, বলেছেন হারবার্ড স্পেন্সর, “অধিক জ্ঞানী হলেও তার চিন্তা ধারা দ্বিধাগ্রস্ত হতে বাধ্য।“
কোনো বিবেকবান লোকই পরিকল্পনা ছাড়া গৃহ নির্মাণ শুরু করেন না, কিন্তু এই লোকটি কেন কোনোরূপ রুপরেখা ছাড়া বা পরিকল্পনা ছাড়া বক্তৃতা শুরু করেছিলেন।
বক্তৃতা হচ্ছে একটি উদ্দেশ্যমূলক সমুদ্র যাত্রা যার নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। যে ব্যক্তির শুরুর ঠিক থাকে না তার সমাপ্তির ঠিকানাও পাওয়া যায় না।
আমরা ইচ্ছা যে, আমি নেপোলিয়নের একটি সুবিখ্যাত উক্তিকে বিশ্বের সর্বত্র বক্তৃতা শেখার সকল প্রতিষ্ঠানের দেয়াল-গাত্রে বড় বড় হরফে লাল অক্ষরে খোদিত করে রাখি। নেপোলিয়নের সেই প্রখ্যাত উক্তি হচ্ছে”যুদ্ধ কৌশল হচ্ছে একটি বিজ্ঞান, সুচিন্তিত পদ্ধতিতে যথাযথ হিসাব প্রণয়ন করা না গেলে এতে জয়লাভ অসম্ভব।”