আমি অনেক সময় দেখেছি, অনেক বিক্রয় প্রতিনিধি প্রথমদিকে পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দিতে গিয়ে অধৈর্য হয়ে পড়তেন। তাঁরা বলেছেন”একজন খুচরা মুদি দোকানদারের কাছে এসবের বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার সময় পাই না। কারণ সে বিক্রির কাজে নিতান্ত ব্যস্ত থাকে। আমি তার কছে দেহসার ও অঙ্গার অম্লজানের কথা বললে সে শোনে না এবং শুনলেও আমি কী বলি তা বুঝতে চায় না।” আমি উত্তর দেই ক্রেতার উপকারের জন্যে আপনার এসবের বিস্তারিত বিবরণের প্রয়োজন নেই, কিন্তু আপনার নিজ প্রয়োজনে এসব জানা দরকার। আপনি আপনার পণ্যের এ হতে জেড অর্থাৎ আগাগোড়া জানলে আপনার মনে যে ভাবের উদয় হবে তা বর্ণনা করা অসম্ভব। ফলে আপনি এরূপ দৃঢ় মনোভাবের অধিকারী হবেন, আপনার মনোবল এত শক্ত হবে যে, আপনি বিক্রি কাজে কখনো ব্যর্থ হবেন না, পেশায় বিফল হবেন না।
স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির খ্যাতনামী ইতিহাস লেখিকা মিস ইদা, এম, তারবেল এই গ্রন্থকারকে বলেছেন, বেশ কয়েক বছর আগে তার প্যারিস অবস্থান কালে ম্যাককুরস ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা মি. এস, ম্যকাকুর আটলান্টিক ক্যাবল সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখার জন্যে তার কাছে তারবার্তা পাঠান। তারবার্তা পেয়ে তিতি লন্ডন গমন পূর্বক কোম্পানির ইউরোপীয় ম্যানেজারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। এই সাক্ষাৎকার হতে তার নিবন্ধের প্রয়োজনীয় মালমশল্লা ও তথ্যাদি তিনি সগ্রহ করতে সক্ষম হন, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তথায় থেমে থাকেন নি। তিনি ক্যাবল সম্পর্কে আরো অধিক তথ্য জানতে আগ্রহী হন। তিনি বৃটিশ জাদুঘরে গিয়ে ক্যাবল পরিদর্শন করেন, ক্যাবলের ইতিহাস সম্পর্কিত গ্রন্থাদি অধ্যয়ন করেন এবং লন্ডনের প্রান্তে গিয়ে ক্যাবল উৎপাদিত কারখানায় উৎপাদন পদ্ধতি পরিদর্শন করেন।
তার ব্যবহারে প্রয়োজন থেকে দশগুণ বেশি তথ্য তিনি কেন সংগ্রহ করেন? তিনি মনে করেন, অতিরিক্ত তথ্য তাকে সংরক্ষিত শক্তি প্রদান করবে তাই তিনি তা সংগ্রহ করেন। কারণ তিনি বুঝতে পারেন যে, সংগৃহীত তথ্য প্রকাশ না করলেও তা একদিন তার কাজে লাগবে, ঐটা হবে সংরক্ষিত জ্ঞান।
এডউইন জেমস কার্টেল আনুমানিক তিন কোটি লোকের সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন। এতৎসত্ত্বেও তিনি আমাকে বলেছেন যে, বক্তৃতা শেষে বাড়ি ফেরার পথে তিনি তার বক্তৃতা নিয়ে যখন চিন্তা করেন তখন দেখতে পান যে অনেক কিছু অব্যক্ত রয়ে গেছে, তখন তার মনে হয় তার বক্তব্যই রয়ে গেছে অসম্পূর্ণ। কেন? যখন দীর্ঘ অভিজ্ঞতা হতে তিনি এটা বুঝতে পেরেছিলেন যে, সুবক্তব্য হচ্ছে ঐটি যে বক্তব্যে থাকে বহু মূল্যবান গোপন তথ্য যা আগে কখনো প্রকাশিত হয় নি, থাকে সংরক্ষিত তথ্য যা বক্তাই আগে কখনো প্রকাশ করতে পারে নি।
সংক্ষিপ্তসার :
(১) যখন কোনো বক্তা মনে প্রাণে কোনো বিষয় বলার জন্যে প্রস্তুত হন তখন তিনি তা প্রকাশের আকাক্ষা অনুভব করেন। এরূপ আকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য হয় ফলপ্রসু। কোনো সুপ্রস্তুত ভাষণ প্রস্তুতিতেই দশ ভাগের নয় ভাগ সুসম্পন্ন হয়ে যায়।
(২) প্রস্তুতি কী? কোনো কাগজে কতিপয় বাক্য লিখে নেয়া? কতিপয় প্রবচন মুখস্থ করা? মোটেই, প্রকৃত প্রস্তুতি হচ্ছে নিজের মন থেকে কিছু ভেবে নেয়া, চিন্তা ধারাকে সুমার্জিত করা, নিজস্ব চিন্তাকে সুশৃঙ্খলভাবে গুছিয়ে নিয়ে নিজের ভাবকে, চিন্তাকে, সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়াই হচ্ছে প্রকৃত প্রস্তুতি। অন্যের ভাব নিয়ে শুরু করলে সাফল্যের পরিবর্তে আসে ব্যর্থতা। উদাহরণ স্বরূপ নিউইয়র্কের মি. জেকসনের কথা ধরা যেতে পারে। তিনি ফররেস ম্যাগাজিনের নিবন্ধ দিয়ে শুরু করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে নিবন্ধকেই শুরু হিসাবে ধরে নিয়ে যখন নিজের মনের চিন্তা প্রকাশ করেন বক্তৃতায়, তখন তিনি অর্জন করেন সাফল্য।
(৩) বসে বসে শুধুমাত্র ত্রিশ মিনিট সময়ে কোনো বক্তৃতা তৈরি করার চেষ্টা করবেন না। বক্তৃতা মাংস বা মাছের ফালির মতো রন্ধন করার সামগ্রী নয়, এটা তৈরি করতে হবে। সপ্তাহের প্রথম দিকে আপনার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করুন, অতঃপর সকল মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করুন, ভাবুন, ধ্যান করুন, ঘুমে স্বপ্ন দেখুন। বন্ধুদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন।এটাকে আলোচনার বিষয় বস্তুতে পরিণত করুন। এটা সম্পর্কে যত প্রশ্ন মনে জাগে মনে-মনে তার উত্তরও অনুসন্ধান করুন। আপনার মনে যত প্রশ্ন জাগবে এবং আপনি যত প্রশ্নের উত্তর পাবেন তা কাগজে নোট করে নিন। স্নানাহার কালে, পথ চলতে, খাবার টেবিলে অপেক্ষাকালে অর্থাৎ সকল মুহূর্তে আপনার মনে নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে যত ভাব আসবে, সুপারিশ বা উদাহরণ পড়বে তা লিখে রাখুন। এটা ছিল লিংকনের পদ্ধতি; এবং এটা অধিকাংশ সফল বক্তার বক্তৃতার প্রস্তুতির অনুসৃত পন্থা।
(৪) কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে অধ্যায়ন করার পর আপনি লাইব্রেরিতে গিয়ে সেই বিষয়টি সম্পর্কে অধ্যয়ন করুন। গ্রন্থাগারিককে আপনার প্রয়োজনের কথা বলুন। আপনার নির্দিষ্ট বিষয়ে সে আপনাকে যথেষ্ট সাহায্য করতে পারেন। মুক্তমনে স্বাধীন চিন্তার পর অধ্যয়ন হতে প্রাপ্ত তথ্য ভিত্তিক প্রণীত ভাষণ হৃদয়গ্রাহী হয়।