আপনার বক্তব্য বিষয় আগেই ঠিক করুন। তা হলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে নিতে পারবেন। বিষয়টি নিয়ে সাতদিন চিন্তা করুন, সাতবার স্বপ্ন দেখুন। ক্লান্ত শরীর বিশ্রাম নেয়ার সময়ে বিষয়টি ভেবে নিন। সকালে দাড়ি গোঁফ কাটবার সময়, স্নান করার সময়, শহরে চলার পথে কোথাও অপেক্ষা করার সময়, মধ্যাহ্ন ভোজ গ্রহণ কালে, কোনো নির্দিষ্ট স্থান গমন কালে, নৈশ ভোজ প্রস্তুত বা রান্না কালেও বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। বন্ধুদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। ঐটাকে আলোচনার বিষয়বস্তু করে নিন।
বিষয়টি নিয়ে যত প্রশ্ন আপনার মনে আসে তা আপনি নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। মনে করুন আপনার বিষয় হচ্ছে বিবাহ-বিচ্ছেদ। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ কী এর অর্থনৈতিক, সামাজিক ফলাফল কী। এই সৎ কাজ কীভাবে বন্ধ করা যায়? আবার কি একই রূপ বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন প্রয়োজন? কেন? অথবা আমরা কি কোনো রূপ বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন অনুসরণ করি? বিবাহ-বিচ্ছেদ কি অসম্ভব করে তোলা উচিত? অধিকতর বিধি নিষেধ প্রয়োজন? সহজ করা উচিত?
মনে করুন, আপনি কেন বক্তৃতা শিখছেন এই বিষয়টির ওপর বলবেন। তা হলে আপনি আপনাকে নিম্নরূপ প্রশ্ন করবেন : বক্তৃতা করতে আমার বাধা কী? বক্তৃতা আমি কেন শিখতে চাই? এর দ্বারা আমার কী উপকার হবে? এর ফল কী হয়েছে? একজন ব্যবসায়ীর জন্যে বক্তৃতা শেখা প্রয়োজন বলে কেন আমি মনে করি? যে সব নারী পুরুষ ব্যবসা বাণিজ্যে অথবা রাজনীতিতে উন্নতি করেছে তারা আত্মবিশ্বাসী এবং তাদের বক্তব্য আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য বলে কি আমি বিশ্বাস করি? আমি কি মনে করি যাদের এসব গুণ নেই তারা ব্যবসা বাণিজ্য অথবা রাজনীতি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারছে না? এটা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভবে বলতে হবে। কোনো ব্যক্তি বিশেষের নামোল্লেখ না করে তাদের সাফল্য ব্যর্থতার কাহিনী বলতে হবে; প্রকাশ করতে হবে।
এভাবে একটি বিষয়ে পরিষ্কার চিন্তা ও স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে বক্তৃতা শুরু করলে দুতিন মিনিট বলার পর সব পয়েন্ট একে একে আপনার মুখ দিয়ে এসে যাবে। একটি দুটি বক্তৃতার পর আপনার বক্তৃতা অরো পরিষ্কার হবে, স্বচ্ছ হবে। কেন আপনি বক্তৃতা শিখছেন এ সম্পর্কে বলা অত্যন্ত সহজ হবে। এই বিষয়টি নিয়ে আপনি যদি সামান্য চিন্তা করেন এবং পয়েন্ট গুলি মনে-মনে সাজিয়ে নেন, তা হলে পুরে বিষয়টি আপনার মনে থাকবে এবং বক্তৃতা কালে অপনি স্বচ্ছন্দে আপনার আকাঙ্ক্ষা, আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সহজ ও সরল ভাষায় আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারবেন।
অপরদিকে, মনে করুন, আপনি আপনার ব্যবসা অথবা পেশা সম্পর্কে বলবেন। তা হলে কীভাবে আপনি এ ধরনের বক্তৃতা তৈরি করবেন? আপনি জানেন। সুতরাং সেগুলি একের পর এক সাজান। সবগুলো তিন মিনিটের মধ্যে বলে শেষ করার চেষ্টা করবেন না। এটা সম্ভব নয়। এ ধরণের চেষ্টা পরিপক্ক বুদ্ধির পরিচায়ক নয়। একটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করুন, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করুন। উদাহরণ স্বরূপ কেন আপনি বিশেষ ব্যবসা বা পেশা গ্রহণ করবেন সে সম্পর্কে বলুন। এটা কি আকস্মিক অথবা আপনার মনের ইচ্ছা? প্রথম দিনে আপনার অসুবিধা, ব্যর্থতা সাফল্য ও আশার কথা প্রকাশ করুন। আপনার অভিজ্ঞতার বর্ণনা এমনভাবে দিন যাতে তা হৃদয়গ্রাহী হয়। কারো জীবন কাহিনী সঠিকভাবে, হৃদয়গ্রাহীরূপে বর্ণনা করা হলে তা হয় আকর্ষণীয়। এধরণের বক্তব্য হয় ফলপ্রসূ, সুফলদায়ক। অথবা আপনার ব্যবসাকে অন্য দিক থেকে তুলে ধরুন। এর সমস্যাগুলো প্রকাশ করুন, যে তরুণ এই ব্যবসায়ে আসতে চাইছে, নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে কিছু উপদেশ দিন।
অথবা ব্যবসা সূত্রে আপনি যে সব লোকের সংস্পর্শে এসেছেন তাদের কথা বলুন। তাদের সতোর কথা বলুন, বলুন অসৎদের কথা, বলুন আপনার সমস্যার কথা। এই কাজের ভেতর দিয়ে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে অপনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। যে শিক্ষা পেয়েছেন, তা কী মনের প্রকৃতি। আপনি আপনার পেশার খুঁটিনাটি দিক ব্যাখ্যা করতে চান, তাহলে শ্রোতারা বিরক্ত হবে; কেননা তারা তা বুঝবে না, রস পাবে না। কিন্তু চিন্তাশীল কোনো ব্যক্তিই বক্তৃতা কালে এরূপ ভুল বিষয় নিয়ে শুরু করেন না।
সর্বোপরি আপনার বক্তব্য বিষয়টিকে শুধুমাত্র শুষ্ক প্রচারে পরিণত করবেন না। তা করলে তা বিরক্তি উৎপাদন করবে। আপনার বক্তব্য উদাহরণ ও উদ্ধৃতি দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করুন, যে সব ঘটনা আপনি জানেন তা ব্যক্ত করুন, যা আপনি শিখেছেন তা ব্যাখ্যা করুন। নিজেও উপলব্ধি করুন যে এসব বিশেষ ঘটনা মনে রাখা অত্যন্ত সহজ। প্রকাশ করাও সহজতর তা হলে আপনার বক্তব্যও হবে সহজতর ও হৃদয়গ্রাহী।
এ ক্ষেত্রে একজন লেখকের অভিমত প্রণিধানযোগ্য। ব্যবসা মালিকের ক্ষমতা অধিস্তনদের কাছে হস্তান্তর সম্পর্কে বি. এ. ফরবেস একটি নিবন্ধ লিখেছেন, তাতে তিনি বলেছেন :
আমাদের সময়ের অধিকাংশ বড় বড় প্রতিষ্ঠান এক সময় এক ব্যক্তি পরিচালিত প্রতিষ্ঠান ছিল। এগুলো নিতান্ত ক্ষুদ্র হতেই বৃহতে পরিণত হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে এই যে, এক ব্যক্তি যত মেধাসম্পন্নই হোক না কেন অন্যদের সাহায্য সহযোগিতা নিলে সে মেধার শক্তি বাড়ে। এই উপলব্ধি বোধ থেকেই এক ব্যক্তি পরিচালিত ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান আজকের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। সহকারীদের সাহায্য সহযোগিতার এটি ফল।